Advertisement
E-Paper

কাজ শেষ হবে কী করে, দুশ্চিন্তার মেঘ পটুয়াপাড়ায়

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরে মুখ ভার কলকাতার আকাশের। প্রায় অবিরত বৃষ্টিতে মন ভাল নেই কুমোরটুলিরও। পলিথিন চাদর দিয়ে ঢেকে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে ঠিকই, কিন্তু যেন প্রাণ নেই। রবিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, পার্থ পাল, পঞ্চানন রুদ্রপালেরা কার্যত হতোদ্যম হয়ে বসে আছেন। সকলের মুখে একটাই কথা, ‘‘এই আবহাওয়ায় কী কাজ হবে বলুন তো?’’

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৭

বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের জেরে মুখ ভার কলকাতার আকাশের। প্রায় অবিরত বৃষ্টিতে মন ভাল নেই কুমোরটুলিরও। পলিথিন চাদর দিয়ে ঢেকে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে ঠিকই, কিন্তু যেন প্রাণ নেই।

রবিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, পার্থ পাল, পঞ্চানন রুদ্রপালেরা কার্যত হতোদ্যম হয়ে বসে আছেন। সকলের মুখে একটাই কথা, ‘‘এই আবহাওয়ায় কী কাজ হবে বলুন তো?’’

অথচ, দুর্গাপুজোর এখনও আড়াই মাসেরও বেশি বাকি। ভরা শ্রাবণে বৃষ্টিও অস্বাভাবিক নয়। তা হলে কুমোরটুলির এখনই মন খারাপের কারণ কী?

উত্তরের এই পটুয়াপাড়ার শিল্পীরা জানালেন, টানা বৃষ্টি— বিশেষত নাগাড়ে বৃষ্টিজনিত স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়াই ‘ভিলেন’। শিল্পীদের ব্যাখ্যা, কয়েক সপ্তাহ যাবৎ সূর্যের দেখা পাওয়াই দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই জন্য প্রতিমার কাঠামো তৈরিতে যা অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য উপাদান, সেই খড় কিছুতেই শুকোচ্ছে না। খড় যত শুকনো হবে, তার উপরে মাটির প্রলেপ ততই ধরবে। কিন্তু শুকনো খড় এখন তেমন পাওয়াই যাচ্ছে না।

কুমোরটুলি প্রগতিশীল মৃৎশিল্প ও সাজশিল্প সমিতির সম্পাদক অপূর্ব পাল বলেন, ‘‘খড় ভিজে থাকলে তার উপরে মাটি দিলেও তা জোড়া লাগতে চায় না। মাটি খসে পড়ার সম্ভাবনাও প্রবল। শুকনো খড় না পাওয়ায় প্রতিমা তৈরির কাজ শুরুই করা যাচ্ছে না।’’ আর এক মৃৎশিল্পী অনিল পালের কথায়, ‘‘শুকনো খড় পাচ্ছি না। হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান থেকে কুমোরটুলিতে খড় আসে। কিন্তু ওই সব জেলায় বন্যার কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে খড়ের জোগান বন্ধ।’’

শুকনো খড়ের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে আকাল দেখা দিয়েছে মাটির। কারণ আর কিছুই নয়, টানা বর্ষণে দক্ষিণবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, প্রতিমা তৈরির জন্য মাটি উলুবেড়িয়া-সহ হাওড়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসে। কিন্তু ওই সব তল্লাট বানভাসি হওয়ায় মাটিও আসছে না।

কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির মুখপাত্র বাবু পালের কথায়, ‘‘টানা বৃষ্টিতে মৃৎশিল্পীরা চরম সমস্যায় রয়েছেন। রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতির জন্য প্রতিমা তৈরির উপাদান আসছে না। কাজ করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

এ দিন কুমোরটুলিতে গিয়ে দেখা গেল, খোলা আকাশের নীচে তো বটেই, এমনকী স্টুডিওর মধ্যেও পলিথিন দিয়ে ঢেকে কাজ করছেন কোনও কোনও প্রতিমাশিল্পী। শিল্পী রুদ্রজিৎ পালের স্টুডিওর মধ্যে ছাদ থেকে জল পড়ছে। নীচে বালতি পেতে কাজ করছেন তিনি। রুদ্রজিৎবাবু জানালেন, এই মুহূর্তে খড় না পাওয়ায় নতুন করে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এমন চলতে থাকলে কী ভাবে সময়ে কাজ শেষ হবে, সেটাই চিন্তা।

আবার, দুর্যোগের জন্য কুমোরটুলি পাড়ায় পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিকও। বর্তমানে কুমোরটুলিতে শিল্পীর সংখ্যা প্রায় আড়াইশো। দুর্গোপুজোর মাস চারেক আগে থেকেই প্রত্যেক শিল্পীর গড়ে ১০ জন করে শ্রমিক প্রয়োজন হয়। যাঁদের অধিকাংশ নদিয়ার বাসিন্দা।

শিল্পী বাবু পালের কথায়, ‘‘আমার কাছে ১০ জন শ্রমিক কাজ করেন। সবারই বাড়ি নদিয়ায়। কিন্তু বন্যার খবর পেয়ে ওঁরা তড়িঘড়ি বাড়ি চলে গিয়েছেন। কবে আসবেন জানি না। এতে করে কাজে ক্ষতি হচ্ছে।’’ আর এক শিল্পী মিন্টু পালের প্রতিমা তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাঁরও বক্তব্য, টানা ভিজে আবহাওয়া থাকার কারণে প্রতিমা শুকোনোর কাজে সমস্যা হচ্ছে।

kuamrtuli durga idol viswakarma idol kumartuli artists kolkata rain depression kolkata water logged kumartuli rain
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy