Advertisement
E-Paper

নগদে টান, তবু বর্ষশেষের আনন্দে মত্ত শহর কলকাতা, দেখুন ভিডিও...

কথায় আছে, হাতি পোষার বিশাল খরচ! কিন্তু চমন আর কিন্নরের গায়ে হাত বুলিয়ে নুরউদ্দিন জানাল, ঘোড়া পোষার খরচও কম নয়! তাই ‘রেট’ কমানোর ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪০
নিউ মার্কেটে মানুষের ঢল। (ডান দিকে) চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচার সামনে ভিড় উৎসাহীদের।

নিউ মার্কেটে মানুষের ঢল। (ডান দিকে) চিড়িয়াখানায় বাঘের খাঁচার সামনে ভিড় উৎসাহীদের।

কথায় আছে, হাতি পোষার বিশাল খরচ! কিন্তু চমন আর কিন্নরের গায়ে হাত বুলিয়ে নুরউদ্দিন জানাল, ঘোড়া পোষার খরচও কম নয়! তাই ‘রেট’ কমানোর ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই।

নুরউদ্দিনরা ভিক্টোরিয়ার সামনে এক্কাগাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন সার দিয়ে। শীতের দুপুরে আমোদ-বিলাসী শহরবাসীর মনোরঞ্জন করেন। গাড়িতে মিনিট পনেরো চক্কর কাটার খরচ ৮০০ টাকা। চাপাচাপি করলে সাতশো, তার কম নয়। বছর শেষের দিনটায় কোনও বারই একটা গাড়িকেও বসে থাকতে হয়নি। অথচ এ বার শেষ বিকেল পর্যন্ত অনেকেরই বউনি হয়নি। বহু খদ্দের খরচ শুনে ফিরে যাচ্ছেন। নুরউদ্দিন জানালেন, ডিসেম্বর-জানুয়ারি এই দু’মাসই ব্যবসা জমে। তার মধ্যে বড়দিন, বর্ষশেষ এবং বর্ষবরণের দিনগুলো উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এ বছর নোট-সঙ্কটে এক্কাগাড়ি চড়ার বিলাস এড়িয়েই গিয়েছেন শহরবাসী।

ভিক্টোরিয়া কিন্তু জমজমাট। গোটা ভিক্টোরিয়াকে প্রায় গোল করে ঘিরে দীর্ঘ হয়েছে লাইন। ভেতরেও ঝাঁকে ঝাঁকে বা যুগলে যুগলে ভিড়। বাঁশি-খেলনা-ক্যান্ডিফ্লসের দেদার বিকিকিনিতে গমগমে চত্বর। এরই মধ্যে এক খুদের এক্কাগাড়ি চড়ার বায়নায় লাগাম পরাতে ভুভুজেলা বাঁশির ছোট সংস্করণ কিনে দিলেন মা। বাঁশিতে লাগাতার ফুঁ দিয়ে মায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জারি রাখল খুদে।

উল্টো দিকের ময়দানে শেষ বিকেলের নরম আলোয় ছোটাছুটি করছে ছেলেমেয়ের দল। ভিড়ের মধ্যে ঘুরে খুচরো বিকিকিনিতে মেতে রয়েছেন ঝালমুড়ি-ফুচকা-বাদাম-চিপসে্র ব্যবসায়ীরা। উড়ছে ঘুড়ি, ভাসছে ফ্লাইং ডিস্ক, ছুটছে বল। ছোট্ট বাঁদরছানাটিকে নিয়ে ডুগডুগি বাজিয়ে ঘুরছেন এক প্রৌঢ়। বায়না মিলছে না খেলা দেখানোর। ভবানীপুরের রমেশ সাউ জানালেন, বাড়ির সবাইকে নিয়ে বেরোতেই হয় এই দিনে। এ বছর টাকাকড়ির টানাটানি। তাই ময়দানেই কাটালাম।

শেষ রাতের সেলিব্রেশন:

মিলেনিয়াম পার্কে অবশ্য অন্য বারের তুলনায় ভিড় কম। টিকিট কাউন্টারের কর্মী বললেন, ২০% কম হচ্ছে টিকিটের বিক্রি। বছরের শেষ দিনের ভিড় দেখে খুশি নন ভিতরের খাবারের ব্যবসায়ীরাও। বললেন, ‘‘অন্য বার জোগান দিয়ে উঠতে পারি না। এ বার বানিয়ে বসে আছি। অনেকেই কিনে খাচ্ছেন না, বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছেন।" যেমন সিঁথির সুবিনয় হাজরা। স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, বউমা, নাতি, নাতনি— সকলকে নিয়ে এসেছেন মিলেনিয়াম পার্কে। সঙ্গে ক্যাসারোল আর টিফিন বাক্স ভর্তি খাবার। দিনভর রোদে পিঠ রেখে, শতরঞ্জি বিছিয়ে চলছে পিকনিক। সুবিনয়বাবুর স্ত্রী মুক্তা হাজরা বললেন, ‘‘বছরকার দিনটায় প্রতি বারই একসঙ্গে বেরোই আমরা। খাওয়াদাওয়াও বাইরেই হয়। কিন্তু এ বছরে অতটা খরচ করতে পারলাম না, খাবার বানিয়েই আনলাম।’’

উন্মাদনা আর উৎসাহের জোয়ারে নোট-সঙ্কট যে আর তেমন বাধা নয়, মালুম হয় পার্ক স্ট্রিট-ধর্মতলা চত্বরে গেলে। মানুষ আর গাড়ির ভিড়ে থিকথিক করছে রাস্তাঘাট। রেস্তোরাঁগুলির সামনে সুদীর্ঘ লাইন। মাথায় টিয়ারা বেঁধে, সান্টা-টুপি পরে, হাতে সেলফি স্টিক নিয়ে বিকেল বিকেল পার্ক স্ট্রিট চলে এসেছে কলেজপড়ুয়া পায়েল, অরুণিমা, সন্ময়, তমাল, জেসমিনারা। মধ্যাহ্ন ভোজন, সিনেমা, পাব, ডিস্কোর দীর্ঘ ফিরিস্তি শুনিয়ে তমাল বললেন, ‘‘এই দিনটা একসঙ্গে নিজেদের মতো আনন্দ করি বন্ধুরা মিলে। বাড়ি থেকেও ছাড় মেলে।’’ চেনা ভিড় দেখে খুশি ফুটপাথে পসরা সাজিয়ে বসা ছোট ব্যবসায়ীরা। তবে কথা বলতেই জানা গেল, খুশিতে কাঁটা বিঁধে রয়েছে। সন্ধেয় যে বক্তৃতা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ‘‘ফের কোনও নোট-ফতোয়া আসবে না তো?’’— আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। তবে খাঁ খাঁ করছে একটি বড় কার্ড-উপহারের দোকান। দোকান মালিকের আফশোস, ‘‘এখন আর কেউ কার্ড বিনিময় করে শুভেচ্ছা জানায় না পরস্পরকে। সবই হোয়াটসঅ্যাপে হয়।’’

প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি সুসজ্জিত মলেও একই রকম উন্মাদনা। খাওয়ার জায়গায় একটি টেবিলও খালি নেই। জোর কদমে চলছে সেলফি তোলা, কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া। নিরাপত্তার কথা ভেবে মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। বস্তুত সারা শহরেই আজ নিরাপত্তার ফাঁস একটু বেশি শক্ত। কোথাও কোথাও মোতায়েন রয়েছে সেনাও। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘এখন এ সব উৎসব পার্বনের দিনগুলো ভীষণ সংবেদনশীল হয়ে উঠছে। বিশ্ব জুড়ে ঘটে চলা সাম্প্রতিক নাশকতার অভিজ্ঞতা থেকে যতটা সম্ভব শিক্ষা নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্ত করেছি।’’

শনিবার ছবি দু’টি তুলেছেন দেবস্মিতা ভট্টাচার্য এবং রণজিৎ নন্দী।

Lack of cash New Year Celebration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy