Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কর্মীরা বসে কর্ড ব্লাডে, ব্লাড ব্যাঙ্কে লোকাভাব

চালু না হওয়া প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মী জোগাড় করতে গিয়ে চালু প্রতিষ্ঠানগুলিকে মুমূর্ষু করে তুলছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রথমে ভোট, তার পরে অসহ্য গরম। এই দুইয়ের জেরে যখন চার দিকে রক্তের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে, তখনই কর্মীর অভাবে একের পর এক ক্যাম্প বাতিল হচ্ছে। অচিরেই কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে রক্তের আকাল শুরু হবে বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকেরই আশঙ্কা। শুধু ক্যাম্প বাতিলই নয়, সংগৃহীত রক্ত পরীক্ষা, উপাদান পৃথক করার মতো বিভিন্ন কাজও থমকে যাচ্ছে কর্মীর অভাবে।

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

চালু না হওয়া প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মী জোগাড় করতে গিয়ে চালু প্রতিষ্ঠানগুলিকে মুমূর্ষু করে তুলছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রথমে ভোট, তার পরে অসহ্য গরম। এই দুইয়ের জেরে যখন চার দিকে রক্তের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে, তখনই কর্মীর অভাবে একের পর এক ক্যাম্প বাতিল হচ্ছে। অচিরেই কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে রক্তের আকাল শুরু হবে বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের অনেকেরই আশঙ্কা। শুধু ক্যাম্প বাতিলই নয়, সংগৃহীত রক্ত পরীক্ষা, উপাদান পৃথক করার মতো বিভিন্ন কাজও থমকে যাচ্ছে কর্মীর অভাবে।

ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর, কলকাতার স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এ পূর্বাঞ্চলের প্রথম সরকারি কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরি হতে চলেছে। সেই প্রতিষ্ঠান এখন চালু হওয়া তো দূর অস্ত্, তার লাইসেন্সই মেলেনি। তার আগেই ওই প্রতিষ্ঠানকে সাজিয়ে তুলতে বিভিন্ন জায়গার কর্মীদের তুলে নেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্তাদের বড় অংশের বক্তব্য, সংখ্যার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে গিয়ে বর্তমান পরিকাঠামোর বড়সড় ক্ষতি হচ্ছে।

সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্তারা জানান, টেকনিশিয়ানের ৩৬টি শূন্য পদ নিয়ে তাঁরা এমনিতেই খুঁড়িয়ে চলছিলেন। এক কর্তার কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের দু’জন অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কে। শুধু তা-ই নয়, কোয়ালিটি ম্যানেজার কাম টেকনিক্যাল সুপারভাইজারকেও ওখানে সরানো হয়েছে। এ ভাবে কাজ চলবে কী করে? তাই প্রতি পদেই ধাক্কা খাচ্ছি। আমাদের ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়ার কথা। কিন্তু লোকের অভাবে মানুষকে দীর্ঘ অপেক্ষায় রাখতে বাধ্য হচ্ছি। প্রতি রবিবার ১২-১৪টি করে ক্যাম্পের ডাক পড়ে। অনেকগুলি বাতিল করতে হচ্ছে।’’ ফলে সাধারণ গ্রুপের রক্ত নিতে এসেও খালি হাতে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।

একই পরিস্থিতি নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে টেকনিক্যাল সুপারভাইজারকেও সরানো হয়েছে ট্রপিক্যালের কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কে। তিনি ওই ব্যাঙ্কে আরও বেশ কয়েকটি দায়িত্বে ছিলেন। কোনও বিকল্প ব্যবস্থা না করে তাঁকে সরানোয় কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে এনআরএসের ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিষেবা। ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, ‘‘কর্মী দরকার। তা না হলে কাজের গুণগত মান বজায় থাকবে না। আমরা বারবার স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছি। ফল হয়নি।’’

রাজ্য ব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিলের সদস্য সচিব এবং রাজ্য এড্‌স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সোসাইটির প্রকল্প অধিকর্তা ওঙ্কার সিংহ মীনা বলেন, ‘‘সব জায়গাতেই কর্মীর সমস্যা রয়েছে। আমরা কিছু জায়গায় কর্মীর ব্যবস্থা করেছি। বাকি জায়গাগুলিতে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা করা হবে।’’

যে কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক এখনও কাজই শুরু করল না, সেখানে কর্মীদের নিয়ে গিয়ে মাসের পর মাস স্রেফ বসিয়ে রাখার অর্থ কী? স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেছেন, ‘‘কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু হলে তা রাজ্যের পক্ষে খুবই সম্মানজনক। যে কোনও বড় প্রকল্প শুরু করতে গেলে প্রথম দিকে কিছু অসুবিধা থাকেই। তা মানিয়ে নিতে হয়। পরিদর্শনে এসে ঠিকমতো কর্মী সংখ্যা না পেলে অনুমোদন পেতে অসুবিধা হতে পারে। সেই কারণেই কর্মীর ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।’’ যদিও স্বাস্থ্যকর্তাদেরই আর এক অংশের মত কিছুটা অন্য রকম। তাঁরা বলছেন, পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে ওই কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজে নেমে দেখা গিয়েছে, লোকবল এতই কম যে এখনই তা চালু করা সমস্যা। সেই দুর্বলতা ঢাকতেই অন্য ব্যাঙ্কগুলিকে বেহাল করা হচ্ছে।

কবে চালু হতে পারে কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্ক? স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে সদুত্তর নেই। কর্ড ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা নিরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। রক্তদান আন্দোলনের কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁদের মতে, সরকারের এমন পদক্ষেপে রক্তদান আন্দোলনটাই ধাক্কা খাচ্ছে। রক্তদান আন্দোলনের কর্মী দীপঙ্কর মিত্র বলেন, ‘‘সংখ্যার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে ব্লাড ব্যাঙ্কের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মীর ব্যবস্থা না করলে পরিষেবা তো দেওয়া যাবেই না, উল্টে আসল উদ্দেশ্যটাই ব্যহত হবে।’’

তবে শুধু কর্মী সমস্যার জন্যই ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে কাজ ব্যহত হচ্ছে, এমন নয়। স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, কর্মীর অভাবের জন্য যতটা কাজ ব্যহত হওয়ার কথা, তার চেয়ে বেশি পরিমাণ কাজ আটকে থাকছে। তা হচ্ছে মূলত কর্মীদের একাংশের কাজ না করার মানসিকতার জন্য। তাঁরা কর্মী সমস্যাকে কাজ না করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE