Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Cyber Crime

লক্ষ লক্ষ টাকা লোপাট নম্বর চেনার অ্যাপের গরমিলেই

লালবাজার সূত্রের খবর, গত এক মাসে এমনই একাধিক প্রতারণার অভিযোগ তাঁদের কাছে এসেছে।

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৩৭
Share: Save:

প্রথমে নতুন ফোন নম্বর নেওয়ার জন্য সিম কার্ড কেনা হচ্ছে। এর পরে সেই ফোন নম্বর সেভ করা হচ্ছে চক্রের অন্য সদস্যদের ফোনে। সেই সব ফোনে আগে থেকেই কোনও না কোনও কল ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ ডাউনলোড করা রয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে নতুন নম্বর কখনও সেভ করা হচ্ছে ব্যাঙ্কের নামে, কখনও আবার ব্যাঙ্ক কর্তার নাম এবং পদ উল্লেখ করে! কল ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ ভাবছে নম্বরটি আদতে ব্যাঙ্কের বা ব্যাঙ্ক কর্তার। কারণ, ওই অ্যাপের হিসাবে বেশির ভাগ লোকই নতুন এই নম্বরটির মালিকের নাম সেভ করছেন ব্যাঙ্কের সঙ্গে জড়িত কারও নামে। সিমটি যাঁর নামে নেওয়া, তাঁর সঙ্গে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার আদৌ কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তা বুঝবে না কৃত্রিম বুদ্ধি।

এ ভাবে অন্তত দশ-বারোটি ফোনে নম্বরটি সেভ করাতে পারলেই কেল্লা ফতে! এর পর থেকে যাঁর ফোনেই এমন কল ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ থাকবে, তাঁর ফোনে ওই নতুন নম্বর থেকে ফোন করলেই ভেসে উঠবে হয় ব্যাঙ্কের নাম, নয় ব্যাঙ্ক কর্তার নাম! এর পরে একটু কথার খেলা খেলতে পারলেই জেনে নেওয়া যাবে ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, এমনকি অত্যন্ত গোপনীয় ওটিপি বা পিন নম্বরও!

লালবাজার সূত্রের খবর, গত এক মাসে এমনই একাধিক প্রতারণার অভিযোগ তাঁদের কাছে এসেছে। প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএসে পাওয়া যায় এমন কোনও না কোনও কল ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করে রেখেছিলেন। সম্প্রতি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই অধ্যাপক-সহ একাধিক শিক্ষাবিদ এমন প্রতারণার ফাঁদে পড়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। গত এক সপ্তাহেই কম করে প্রায় কুড়ি লক্ষ টাকা এই ভাবে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতারিতেরা জানিয়েছেন, এমন প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতেই এই ধরনের অ্যাপের ব্যবহার শুরু করেছিলেন তাঁরা। কারণ এই ধরনের অ্যাপ থাকলে সহজেই বোঝা যায় নম্বরটি আদতে কার। সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়, ফোনটি ধরা হবে কি না! কিন্তু এখন এমন অ্যাপের সীমাবদ্ধতাকে হাতিয়ার করেই নতুন প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে।

সূত্রের খবর, পুলিশের কাছে এমনও অভিযোগ এসেছে যে শুধু ফোনের স্ক্রিনে নাম ভেসে ওঠাই নয়, ওই নম্বরের সঙ্গে যুক্ত হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখা গিয়েছে সেই ব্যাঙ্ক কর্তারই ছবি। তদন্ত চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি তাই পুলিশকর্মীরা এখন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলা শুরু করেছেন। তাঁদের বলা হচ্ছে, বিভিন্ন পদে থাকা কর্তারা সমাজমাধ্যমে ছবি দেওয়ার ব্যাপারে আরও সতর্ক হলে ভাল হয়। যদিও একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘সবার আগে সাধারণ মানুষকে এ নিয়ে আরও সচেতন হতে হবে। যে নম্বর থেকেই ফোন আসুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে যে ছবিই দেখা যাক, মনে রাখতে হবে সামনাসামনি ব্যাঙ্কে গিয়ে কথা না বলার আগে পর্যন্ত কোনও মতেই কাউকে বিশ্বাস করা চলবে না। মনে রাখতে হবে, প্রতারকদের রুখতে কোনও ব্যাঙ্কই এখন আর মোবাইলে কথোপকথন চালায় না।’’

গত কয়েক দিনে একাধিক গ্রাফিক বানিয়ে সমাজমাধ্যমে এ নিয়ে প্রচারে নামা লালবাজারের তদন্তকারীরা আরও জানাচ্ছেন, যে কোনও ধরনের প্রতারণার চেষ্টা নিয়ে দ্রুত পুলিশের দ্বারস্থ হওয়া প্রয়োজন। টাকা খোয়া গেলে পুলিশকে যত দ্রুত জানানো হবে তত দ্রুতই ‘মানি ট্রেল’ পদ্ধতিতে গেটওয়ে বন্ধ করে টাকা চলে যাওয়া আটকাতে পারবে পুলিশ। সময়ে তদন্ত শুরু করা গেলে টাকা ফেরত আনাও সম্ভব। সেই সঙ্গেই পুলিশের অনুরোধ, কোনও রকম অচেনা নম্বর থেকে পাঠানো লিঙ্ক বা কিউআর কোড ব্যবহার করা যাবে না। ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং‌’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বললেন, ‘‘এই মুহূর্তে সাইবার অপরাধ নিয়ে আলাদা করে সচেতনতা ক্যাম্প করার ভাবনাচিন্তা করা দরকার। প্রতারকেরা নিত্য নতুন ভাবনা নিয়ে সামনে আসবেই। মানুষের সচেতনতাই সেগুলিকে রোখার অন্যতম পথ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyber Crime Mobile App
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE