সিগন্যাল মেনে গাড়ি চালালে কোনও পুরস্কার জোটে না। জোটার কথাও নয়। কিন্তু এ শহরে আইন মেনে কালীপুজো করলে পুরস্কার মিলতে পারে!
দুর্গাপুজোর মতো কালীপুজোর ক্ষেত্রেও মণ্ডপে কতটা ছাড় দিতে হবে, অগ্নি নির্বাপক কী কী ব্যবস্থা রাখতে হবে, সে সবই নির্দিষ্ট করে দিয়েছে হাইকোর্ট। রয়েছে শব্দদূষণ রোধে মাইক ব্যবহার নিয়েও কড়াকড়ি। কিন্তু লালবাজারের অনেকেই স্বীকার করে নিচ্ছেন, দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে এই নিয়মের যতটা কড়াকড়ি, কালীপুজোর ক্ষেত্রে ততটা থাকে না। তাই কালীপুজো নিয়ে অভিযোগও বেশি মেলে। সেই অভিযোগে কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যবস্থা নিলেও তা বেশি দূর গড়ায় না। পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, এই নিয়ম না মানা পুজোগুলিকে নিয়মে বাঁধতেই এ বার পুরস্কারের ‘টোপ’ দিচ্ছে লালবাজার।
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার কলামন্দিরে কালীপুজো কমিটিগুলির সঙ্গে সমন্বয় বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কারের বার্তা দেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিত্ করপুরকায়স্থ। নিয়ম মেনে হওয়া পুজোগুলিকে বাছাই করতে ইতিমধ্যেই থানায় থানায় বার্তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা পুলিশের এই নয়া উদ্যোগ দেখে তাই অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, লাঠির বদলে কি এ বার পুরস্কারের লাড্ডু দিয়েই বেনিয়মে লাগাম টানতে চাইছে কলকাতা পুলিশ?
পুরস্কার দেওয়া মানে শুধু বেনিয়মে লাগাম টানা, এমন তত্ত্ব মানতে নারাজ কলকাতা পুলিশের অনেক শীর্ষকর্তাই। কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (৩) দেবাশিস রায় বলেন, “নিয়ম মেনে কালীপুজো করলে পুরস্কার দেওয়া হবে। এটা ভাল কাজের জন্য পুরস্কার, এ ভাবেই দেখা উচিত।” কিন্তু নিয়ম মেনে পুজো করাটাই তো স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে পুরস্কারের অর্থ কী?
রাজ্যের এক পুলিশকর্তার কথায়, “রাস্তায় সিগন্যাল মেনে গাড়ি চালানো যেমন, পুজোয় শব্দদূষণ ও অন্যান্য নিয়ম মানাটাও তেমন। নিয়মমাফিক পুজো করলে যদি পুরস্কার মেলে, তা হলে তো সিগন্যাল মেনে গাড়ি চালালেও পুরস্কার দেওয়া উচিত।” অনেকে অবশ্য এর পিছনে দুর্গাপুজোয় রাজ্য সরকারের দেওয়া পুরস্কারের সঙ্গে তুলনা টেনেছেন। তাঁরা বলছেন, দুর্গাপুজোয় পুরস্কার চালু করেছে রাজ্য সরকার। দেখা গিয়েছে, তার বেশির ভাগটাই পেয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী-পুরকর্তাদের পুজোগুলি। কালীপুজোতেও সেই ধারা দেখা যাবে কি না, তা নিয়েও জল্পনা রয়েছে। এ বছর দুর্গাপুজোর সময়ে দিন কয়েক আগে থেকেই পুজোর উদ্বোধন শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই ভাবে আজ, সোমবার থেকে শহরে কালীপুজোর উদ্বোধন শুরু করবেন তিনি।
কী ভাবে বাছাই করা হবে শহরের সেরা কালীপুজোগুলিকে?
লালবাজারের শীর্ষকর্তারা জানিয়েছেন, থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নিজের এলাকার কালীপুজোর মণ্ডপ পরিদর্শন করতে। মণ্ডপ, নিরাপত্তার পাশাপাশি শব্দদূষণও হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারেও নজর রাখবেন তাঁরা। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলছেন, “কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির দাপটও আমাদের চিন্তায় রেখেছে। তাই কালীপুজো কমিটিগুলি শব্দদূষণে লাগাম টানছে কি না, সেটাও নজরে রাখতে বলা হয়েছে।” গত কয়েক বছরের ছবি বলছে, কালীপুজোয় লাগামছাড়া সাউন্ড বক্স (ডি জে) ব্যবহার করে পুজো কমিটিগুলি। এ বার সেই ডি জে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সে দিকেও পুলিশ নজর রাখবে বলে লালবাজার সূত্রের দাবি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দিকগুলি খতিয়ে দেখবে থানাগুলি। তার পরে প্রতিটি থানা ‘ভাল’ পুজোর তালিকা তৈরি করে পাঠিয়ে দেবে সংশ্লিষ্ট ডিসি-র অফিসে। সেখান থেকে ফের তালিকা তৈরি হয়ে চলে যাবে লালবাজারের সদর দফতরে। দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, পুলিশ-দমকল-পুরসভাকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। কোন কোন কালীপুজো এ বার শহরের সেরা পুজো, তা বাছাই করবে ওই কমিটিই।
কালীপুজোর উদ্যোক্তারা অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই এই পুরস্কারকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, শহরের কালীপুজোয় পুরস্কার চালু হলে ছোটখাটো পুজোগুলিও নিয়ম মানতে বাধ্য হবে। ফলে দুর্গাপুজোর মতো এটাও একটি সুনির্দিষ্ট ছকে চালাতে পারবে পুলিশ। মধ্য কলকাতার অন্যতম পুরনো কালীপুজোর সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন তৃণমূল নেতা তাপস রায়। তাঁর বক্তব্য, “পুরস্কার উদ্যোক্তাদের উত্সাহিত করে। তা ছাড়া শুধু আইন মানা-ই নয়, পুরস্কারের ক্ষেত্রে পরিবেশ, মণ্ডপসজ্জা এগুলিও তো দেখা হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy