সুপ্রিম কোর্ট
প্রায় চার সপ্তাহ ধরে আইনজীবীরা পশ্চিমবঙ্গের সব আদালতে কাজ বন্ধ রাখায় অসংখ্য বিচারপ্রার্থী নাকাল তো হচ্ছেনই। রাজ্যের বিচার ক্ষেত্রে সামগ্রিক ভাবেই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পুরো পরিস্থিতিটাই ‘অস্বাভাবিক’ বলে মঙ্গলবার মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তাদের পর্যবেক্ষণ, অবস্থা এমনই যে, জামিনের আবেদন জানানোর মতো মৌলিক অধিকারও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
শীর্ষ আদালতের বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ এ দিন নির্দেশ দিয়েছে, আইপিএলে জুয়া-চক্রে জড়িত সন্দেহে ধৃতদের জামিনের আবেদনের একটি মামলায় আজ, বুধবার তাঁদের কলকাতা হাইকোর্টে হাজির করাতে হবে। ক্রিকেট-জুয়ায় জড়িত অভিযোগে আট জনকে ২৩ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ২৪ এপ্রিল হাওড়া আদালতের আইনজীবীদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনার প্রতিবাদে কাজ বন্ধ করে দেন কৌঁসুলিরা। ফলে অন্যান্য মামলার মতো এই ক্রিকেট-জুয়া মামলায় ধৃতেরাও বিচার পাচ্ছেন না। তাঁদের আইনজীবী জানান, মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ২৬ এপ্রিল ওই আট জনের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলতে থাকায় তাঁর মক্কেলরা নিরুপায় হয়েই সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা জানিয়ে দিয়েছেন, ওই অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন হাইকোর্টই খতিয়ে দেখবে। বিচারপতিদের ব্যাখ্যা, পশ্চিমবঙ্গের বার কাউন্সিলের কাজ বন্ধের ডাকের পরিপ্রেক্ষিতে মৌলিক অধিকার থেকে মানুষের বঞ্চিত হওয়ার মতো অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায় এই নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এটাকে পরে কোনও অবস্থাতেই দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরা যাবে না।
শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ সত্ত্বেও আইনজীবীরা কবে থেকে ফের কাজ করবেন, বার কাউন্সিলের মঙ্গলবারের বৈঠকে তার ফয়সালা হয়নি। উল্টে এ দিনের বৈঠকে কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ২৪ মে পর্যন্ত আইনজীবীরা কাজ করবেন না।
কাউন্সিল সূত্রের খবর, হাওড়া আদালতের আইনজীবীদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানোর বিরুদ্ধে মামলার রায় আজ ঘোষণা করতে পারে হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। রায় দেখে ২৪ মে বৈঠকে বসে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে কাউন্সিল।
অন্য একটি সূত্র এ দিন জানায়, আইনজীবীদের কর্মবিরতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অশোক দেবের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্য পুলিশ এখনও নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আছে। কমিশন রাজ্য পুলিশের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার পরে তিনি নিজে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবেন। হাওড়া সিটি পুলিশের যে-সব অফিসার গত ২৪ এপ্রিলের লাঠি চালানোর ঘটনায় অভিযুক্ত, তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলন করছেন আইনজীবীরা। তাতে মামলাকারীরা নাজেহাল। হলফনামা, মিউটেশন, দানপত্র, সম্পত্তি রেজিস্ট্রি-সহ বিভিন্ন কাজও করাতে পারছেন না সাধারণ মানুষ।
গরমের ছুটির আগে হাইকোর্টে শেষ কাজের দিন ২৪ মে। হাইকোর্ট খুলবে ১০ জুন। আইনজীবীরা কাজে না-ফিরলে হাইকোর্টের গ্রীষ্মাবকাশের বেঞ্চেও শুনানির সম্ভাবনা কম। বিভিন্ন জেলার ফৌজদারি আদালত থেকেও জামিন-অযোগ্য ধারায় ধৃত অভিযুক্তেরা জামিন পেতে অসুবিধায় পড়বেন বলে জানাচ্ছেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy