যত কিছু ‘নূতনের জন্মভূমি’ বলে এক কালে গর্ব ছিল কলকাতার। উপমহাদেশের মানুষের সঙ্গে বহু নতুন জিনিসের পরিচয় করিয়েছে এই শহর। বিদেশ থেকে আসা নতুন জিনিসকে গড়েপিটেও নিয়েছে সে। যেমন, উনিশ শতকের গোড়ায় আসা ছাপার নতুন প্রযুক্তি লিথোগ্রাফি। পাথরের উপর ইচ্ছেমতো লেখা ও ছাপার এই কৌশল সাহেবরা ব্যবহার করতেন বড় আকারের রঙিন ম্যাপ, প্যামফ্লেট, পোস্টার ছাপতে। কিন্তু এখানে এসে লিথোগ্রাফ হয়ে উঠল শিল্পসৃষ্টির নতুন মাধ্যম। কলকাতায় গড়ে উঠল লিথো ছাপার স্টুডিয়ো, সে কালের লব্জে ‘পাতুরিয়া ছাপাখানা’।
উনিশ শতকের কলকাতা-কেন্দ্রিক ছবির দুনিয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন শিল্প-গবেষক অসিত পাল। সেই অনুসন্ধানই আরও খানিকটা এগিয়ে নিয়ে গেলেন তিনি এ শহরের লিথো-ছবির কালানুক্রমিক ইতিহাস দুই মলাটে ধরে। কলকাতার লিথো (প্রকা: সিগনেট প্রেস) নামের সদ্যপ্রকাশিত বইটি এই শিল্পমাধ্যমের সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করাবে আজকের চিত্রপ্রেমী পাঠককে।
কলকাতায় এই প্রযুক্তিতে কী ছাপা হত? ১৮২৯-এর সমাচার চন্দ্রিকা পত্রিকায় শুড়া লিথোগ্রাফিক প্রেসের শুভারম্ভের খবর উদ্ধৃত করে লেখা হচ্ছে, সেখানে নানা গ্রন্থ ও নানা প্রকার প্রতিমূর্তি অর্থাৎ ছবি ছাপা হবে। পটুয়াদের আঁকার তুলনায় গুণমানে উত্তম এই সব ছবি সাধারণ মানুষের বাড়িতে ‘শ্রীশ্রী প্রতিমার চিত্র রাখার অভিলাষ’ পূর্ণ করবে। ১৮৭৮-এ বৌবাজারে শিল্প-শিক্ষক অন্নদাপ্রসাদ বাগচি তাঁর চার ছাত্রকে নিয়ে শুরু করেন ক্যালকাটা আর্ট স্টুডিয়ো। পৌরাণিক উপাখ্যান ঘিরে নিজস্ব শৈলীতে ছাপা ছবির সঙ্গে সেখান থেকে প্রকাশিত হতে থাকল রামমোহন রায় (উপরে মাঝের ছবি), দ্বারকানাথ ঠাকুর থেকে শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দের মতো নবজাগরণের বাংলার মনীষীদের প্রতিকৃতি। সে সব ছবি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে সাধারণের ঘরে ঘরে পৌঁছে তৈরি করল এক নতুন ধরনের স্বদেশিয়ানা, কলকাতা হয়ে উঠল ভারতে তার অন্যতম মূল কেন্দ্র।
লিথো ছাপার ক্রমবিকাশের পথটি চেনাতে এ বই জানায় অন্নদাপ্রসাদের পরবর্তী সময়ে কলকাতা ও দেশের নানা প্রান্তে গড়ে ওঠে লিথো-স্টুডিয়োগুলির কথাও। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রবি বর্মার ছবির লিথো-অনুকৃতি। কলকাতার ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগসূত্রে, সে বাড়িতে তাঁর শিল্পপ্রতিভার স্বীকৃতি ছিল। তাঁর উপরে সমাজের উঁচুতলার বিখ্যাত শিল্পীর কাজের প্রিন্ট সুলভ মূল্যে নিজের ঘরে রাখার সুযোগ লুফে নিলেন সাধারণ মানুষ। ছবিতে তাঁর পৌরাণিক বিষয় উপস্থাপনার ভঙ্গি প্রবল জনপ্রিয় হল, যার অন্যতম উদাহরণ ‘মোহিনী’ (উপরে বাঁ দিকে)। আবার প্রথাগত ভাবনা থেকে সরে এসে লিথোগ্রাফকে সমাজব্যবস্থার ভাষ্য হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। কৌতুকময় শ্লেষের সঙ্গে বাঙালি সমাজের নারী নির্যাতন, মেকি সাহেবিয়ানা ইত্যাদি বিষয়ের উপর তাঁর ছবি (উপরে ডানে) কলকাতার লিথো-চিত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। সাদা-কালো ও রঙিন ছবি ভরা বইটির জরুরি অংশ হল এই মাধ্যমের প্রসার ও সমাজের নানা স্তরে তাঁর প্রভাব নিয়ে লেখকের বিশ্লেষণ: যেন হারানো সময়-সফর। মাঝের ছবিটি, প্রচ্ছদ থেকে।
কলকাতা-রাজ
সীতা নাটকে তাঁর অভিনয় মুগ্ধ করেছিল রবীন্দ্রনাথকে। কবি সুপারিশও করেন নিউ থিয়েটার্স-এর বি এন সরকারকে, পরে পৃথ্বীরাজ কপূরকে রামের ভূমিকায় রেখে চলচ্চিত্ররূপ দেন দেবকী বসু। দেবকীরই ছবি ইনকিলাব-এ শিশুশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ রাজ কপূরের। সপরিবার কলকাতায় আসেন পৃথ্বীরাজ, হাজরা রোড মুদিয়ালি থেকে স্টুডিয়োপাড়া, সবই জড়িয়ে রাজ কপূরের বাল্যে, পড়তেন ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনে। মুম্বইয়ে থিতু হয়ে হিন্দি ছবির জগৎ জয়ের পরেও শৈশবের শহরকে ভোলেননি তিনি; সলিল চৌধুরী শম্ভু মিত্র সত্যজিৎ রায় উত্তমকুমারের সঙ্গে ছিল নিবিড় সখ্য। জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের তথ্যচিত্র পেইন্টেড মেমোরিজ়: ক্যালকাটা কানেক্টস রাজ কপূর খুঁজেছে এই বিনিসুতো। ৩১তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হচ্ছে, ৯ নভেম্বর বিকেল ৫টায় নন্দন ৩-এ, ১৩-য় শিশির মঞ্চে দুপুর দেড়টায়। ছবিতে বাঁ দিক থেকে বাল্যে রাজ কপূর, পাশে শাম্মী ও শশী কপূর।
বিজ্ঞান ঘিরে
বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়ের সঙ্গে সাহিত্যের চর্চা ও তার স্বীকৃতি ওতপ্রোত নিশ্চয়ই, তা বলে বিজ্ঞানও অচর্চিত নয় কখনও। আগামী ৯ নভেম্বর রবিবার পরিষৎ-সভাঘরে আয়োজিত দু’টি স্মারক বক্তৃতার মনোনীত বক্তারাই তার প্রমাণ— বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সম্মানিত উপাচার্য ও বিজ্ঞান-ব্যক্তিত্ব বলবেন এ দিন। দুপুর ৩টেয় ‘রামকমল সিংহ স্মারক বক্তৃতা’য় বক্তা শঙ্করকুমার নাথ— বলবেন ভারতের বর্তমান প্রেক্ষিতে ভূমিকম্প, বন্যা, ভূমিধসের মতো ‘চরম ঘটনা’গুলির মোকাবিলা প্রসঙ্গে তাঁর ভাবনা। বিকেল সাড়ে ৪টেয় ‘শোভাবতী দাস ঘোষ স্মারক বক্তৃতা’য় আশুতোষ ঘোষ বলবেন মানবজীবনে দুরারোগ্য রোগ নির্ণয়ে রসায়নের ভূমিকা নিয়ে।
নাট্য-নন্দিনী
“আনন্দই আমাদের থিয়েটারের মূল লক্ষ্য, দর্শককে আনন্দ দেওয়া, একই সঙ্গে নিজেরাও আনন্দ পাওয়া,” বলছিলেন সঞ্জিতা, ‘সবার পথ’ নাট্যদলের হয়ে। যে যন্ত্রণা ও লড়াইয়ের পথ পেরিয়ে এক জন অভিনেত্রী নিজেকে উজাড় করে দেন মঞ্চে, আনন্দে উপনীত হওয়াই থাকে তাঁর অভিপ্রায়। পৌলমী চট্টোপাধ্যায় অভিনীত নাট্যাদি নিয়ে এ বার তাদের উদ্যাপন ‘নাট্য নন্দিনী’, অ্যাকাডেমি মঞ্চে। আয়োজন-সহযোগী ‘মুখোমুখি’র দু’টি প্রযোজনা থাকছে: টিনের তলোয়ার ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়, চন্দনপুরের চোর ১৫ নভেম্বর দুপুর ৩টেয়। ‘কলকাতা রমরমা’র নাটক মাসাক্কালি ও পুণের ‘দিশারি’র মেদেয়া ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। পালিত হবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণদিবসও।
শতবর্ষে
যথার্থ কোনও শিল্পী যদি তাঁর কোনও গান সম্পূর্ণ নতুন সুরে গেয়ে আনন্দ পান, পাঁচ জনকে সে আনন্দ দেনও, কবির তাতে আনন্দই হওয়া উচিত, ১৯২৫-এ রবীন্দ্রনাথকে এ কথা বলেন দিলীপকুমার রায়। রেকর্ড কোম্পানির দৌলতে তত দিনে অনেকেই কবির গান ইচ্ছেমতো গেয়ে রেকর্ড করছিলেন। রবীন্দ্রনাথ কিন্তু বলেন, “আমার গানে তো আমি সেরকম ফাঁক রাখিনি যে, সেটা অপরে ভরিয়ে দেওয়াতে আমি কৃতজ্ঞ হয়ে উঠব।” ১৯২৬-এর ৫ অক্টোবর গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে প্রথম কপিরাইট চুক্তি করেন কবি, বন্ধ হয় রেকর্ডে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর ও বাণী নিয়ে যথেচ্ছাচার। ১০ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউটে ‘কপিরাইটের শতবর্ষে রবীন্দ্রসঙ্গীত সংরক্ষণের ইতিকথা’য় পীতম সেনগুপ্ত, গানে দূর্বা সিংহ রায়চৌধুরী।
‘দামু’ ৩০
নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প ‘পঞ্চাননের হাতি’ থেকে রাজা সেন ছবি করবেন, মোহিত চট্টোপাধ্যায় জবরদস্ত চিত্রনাট্য করে দিলেন। দামু নামের সেই ছবি গত তিন দশক ধরে ছোট-বড় সবাইকে আনন্দ দিয়ে আসছে। তবে অনায়াস ছিল না নির্মাণপর্ব, অর্থকষ্ট-সহ নানা বিপত্তি পেরিয়ে কী ভাবে তা হয়ে উঠল, রাজা সেন লিখেছেনও সেই লড়াইয়ের কথা: কী করে ক্যামেরায় চোখ রাখলাম। দামু সর্বভারতীয় স্তরে সেরা শিশুচিত্র হিসেবে জিতে নেয় স্বর্ণকমল। ত্রিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘চ্যাটার্জিহাট অনুকৃতি’ আয়োজন করেছে এ ছবির বিশেষ প্রদর্শনের, ১০ নভেম্বর পরিচালকের সত্তর পূর্ণ হওয়ার জন্মদিনে, উত্তম মঞ্চে সন্ধ্যা ৬টায়। ছবির শিল্পী-কলাকুশলীরা সংবর্ধিত হবেন; আর শিশু-কিশোর, স্কুলছাত্র, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছোটদের সে দিন নিমন্ত্রণ— এ আনন্দযজ্ঞে।
বহুরূপে
সবাই তো ছবি দেখতে নন্দন চত্বরে ভিড় করেন না। কেউ যান ভিড় দেখতে, আলো হাসি হুল্লোড়ে মেশা উৎসবের আমেজ পেতে। তবে নিখাদ ছবিপ্রেমীই হোন বা আগ্রহী আগন্তুক, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নন্দন প্রাঙ্গণে ঋত্বিককুমার ঘটককে নিয়ে চলা প্রদর্শনীটি না দেখলে ভুল করবেন। এ শহরের সংগ্রাহক-দল ‘কলকাতা কথকতা’র ঋত্বিক-সংগ্রহ দেখা যাবে এখানে। ঋত্বিক ঘটকের কাহিনিচিত্রগুলির সে-সময়ের বিজ্ঞাপন, বুকলেট, পোস্টার, ফোটো (ছবি) তো রয়েছেই, সঙ্গে ঘরোয়া ঋত্বিক, অভিনেতা ঋত্বিক, ‘বম্বে’র ছবির চিত্রনাট্যকার ঋত্বিক, পত্রিকা-সম্পাদক ঋত্বিকের নমুনা: তথাপি, ছিন্নমূল ছবির অরিজিনাল বুকলেট, হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের মুসাফির, বিমল রায়ের মধুমতী-সহ নানা ছবির স্মারক, অভিনয় দর্পণ পত্রিকা, জার্মানিতে তাঁর ছবি নিয়ে উৎসবের পোস্টার, তাঁকে নিয়ে বই, পত্রপত্রিকা: কত কী!
ভাস্কর্য-যাত্রা
আর্ট কলেজের শিক্ষা শেষে জীবনের অবলম্বন করেন ভাস্কর্যকে। সেই সূত্রে কত গুণীর সঙ্গলাভ: রামকিঙ্কর বেইজ গণেশ পাইন সুনীল পাল সত্যেন্দ্রনাথ বসু অক্ষয়কুমার বড়াল। শ্যামপুকুরের আদি বাসিন্দা বিমল কুণ্ডু, ছেলেবেলা থেকেই মাটি নিয়ে নাড়াচাড়ার প্রশ্রয় জুটেছিল কুমারটুলিতে। সেই থেকেই কলকাতা তথা বাংলার দুর্গাপুজো-শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হওয়া; গুরুস্থানীয় অশোক গুপ্ত রমেশ পাল গোরাচাঁদ পালদের কৃতি ও কীর্তির সাক্ষী তিনি। ভাস্কর্য নিয়ে তাঁর পথ চলারও হয়ে গেল চার দশক, দীর্ঘ শিল্পজীবনের যাত্রাপথ থেকে বাছাই ২৫টি ব্রোঞ্জ-ভাস্কর্য (ছবি) নিয়ে এ বার প্রদর্শনী মায়া আর্ট স্পেস-এ, ‘স্কাল্পচারাল ওডিসি’। শিল্পীর কিউবিস্ট ভাবনার ছায়া পড়েছে এই কাজগুলিতে; ইউরোপের এক শিল্পভাবনা কী ভাবে অন্বিত হচ্ছে ভারতশিল্পে, তারই অনুসন্ধান যেন। আজ থেকে ১৬ নভেম্বর, রোজ দুপুর ২টো থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
স্মরণ
উদয়শঙ্করের দুনিয়া কাঁপানো দলের ‘ব্যালে মাস্টার’ শান্তি বসু (১৯৪০-২০২৫) ছিলেন যে কোনও নৃত্যনিবেদনের মহড়ায় অননুকরণীয় মাস্টারমশাই। মঞ্চেও বিগ্রহপ্রতিম— শৈলী আর শৃঙ্খলার যুগল মিলনে। তিনি বিশ্রুত কার্তিকেয়-র নামভূমিকায়, সামান্য ক্ষতি-র সার্থক উত্তরসাধক। শ্যামা-র বজ্রসেন, চণ্ডালিকা-র চুড়িওয়ালা, শাপমোচন-এর অরুণেশ্বর শান্তি বসু বরাবর নৃত্যাঙ্গনের ছেলেমেয়েদের নিয়ে থেকেছেন। সকাল-দুপুর টানা রিহার্সাল, সন্ধ্যার আগেই ছাত্রছাত্রীরা যাতে ঘরে ঢুকে যেতে পারে। গুণী শিল্পী, দরদি শিক্ষক মানুষটি গত ২১ অক্টোবর প্রয়াত হলেও যে ‘অতীত’ হয়ে যাননি, প্রমাণ তাঁর লোরেটো হাউসের অশীতিপর সহকর্মীদের স্মৃতি-তর্পণ— গত ৩১ অক্টোবর সন্ধেয় মেফেয়ার রোডে পঞ্জাবি ব্রদরী সভাগৃহে এক অনুষ্ঠানে। ছিল গীতা ও উপনিষদ থেকে পাঠ, রবীন্দ্রনাথের প্রার্থনাসঙ্গীত ও কীর্তনাঙ্গের গান, ছাত্রছাত্রী-নৃত্যগুণীদের অতীতচারণ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)