সপ্তাহ তিনেক আগের ঘটনা। টেকনোপলিস থেকে নিউ টাউনের দিকে যেতে যে বক্সব্রিজ, গভীর রাতে তারই নীচে আগুন লেগে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছিল দমকলের একাধিক ইঞ্জিন। ক্ষয়ক্ষতি বলতে, এই ঘটনায় ব্রিজের নীচের দশ-পনেরোটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ব্রিজটি কংক্রিটের হওয়ায় বড় কোনও ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল। আগুন নিভলে দেখা যায়, একাধিক গ্যাস সিলিন্ডার দুমড়ানো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দমকল জানিয়েছিল, সিলিন্ডার ফেটেই এই আগুন লেগেছিল।
বক্সব্রিজের ঘটনা থেকেও কোনও শিক্ষা নেয়নি দক্ষিণ দমদম পুরসভা। তাই ওই পুর এলাকার অধীন নাগেরবাজার উড়ালপুলের নীচে এখনও রমরমিয়ে চলছে নৈরাজ্য। অথচ চোখ বন্ধ পুর কর্তৃপক্ষের। মেয়র পারিষদ জানেনই না, উড়ালপুলের নীচে আগুন জ্বেলে রান্না হয়। নাগেরবাজারের সাতগাছি থেকে সরোজিনী নায়ডু কলেজ পর্যন্ত এই উড়ালপুলটির উদ্বোধন হয়েছিল ২০১২ সালের মার্চে। শুরুর পর থেকেই উড়ালপুলের নীচে একাধিক অব্যবস্থা চলছে বলে অভিযোগ বাসিন্দা এবং গাড়িচালকদের। লোহার কাঠামোর উপরে দাঁড়িয়ে থাকা এই ব্রিজের নীচের একাংশে গাড়ি রাখার পাকাপোক্ত জায়গা হয়ে গিয়েছে। সকাল থেকে ফুল, আনাজপাতি, মাছ-মাংসের একাধিক দোকান বসে যায়। রাস্তার মাঝ বরাবর চলে যাওয়া উড়ালপুলের দু’ধারের রাস্তা এমনিতেই অপরিসর। তার উপর ব্রিজের নীচে এবং ফুটপাথে বসা ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের চাপে গাড়ি চালানোয় ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছে অনেকগুণ। গাড়ির গতি এখানে অনেকটা গরুর গাড়ির মতো, বলছেন চালক এবং যাত্রীরাই। ফলে এত টাকা খরচ করে উড়ালপুল তৈরি করেও যানজটের গিঁট খোলেনি।
সন্ধ্যা হতেই ব্রিজের নীচে রমরমিয়ে বসে যায় ফাস্টফুডের স্টল। চার-পাঁচটি চায়ের দোকান চলে সকাল-সন্ধ্যা। কোথাও ব্রিজের দেওয়াল ঘেঁষে ইঁট দিয়ে ঘিরে উনুন করা হয়েছে, কোথাও আবার পাম্প স্টোভ ব্যবহার করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুর প্রতিনিধিদের কয়েক জন মানছেন, পরিস্থিতি ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। যে কোনও দিন বড় অঘটন ঘটতেই পারে। মাস কয়েক আগে ব্রিজের পাশের একটি বাড়িতে আগুন লাগায় আতঙ্ক ছড়িয়েছিল স্থানীয়দের মধ্যে। সে যাত্রায় দমকল ব্রিজটিকে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল। নাগেরবাজার উড়ালপুলটি যেহেতু লোহার কাঠামোর, এখানে আগুন লাগলে অনেক বড় ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। জনগণের সম্পত্তি রক্ষায় কী ভাবছেন দক্ষিণ দমদম পুর কর্তৃপক্ষ? পুরসভার মেয়র পারিষদ (বর্জ্য) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আগুন জ্বেলে তো কিছু হয় না ওখানে। তা ছাড়া ব্যবসায়ীদের ওখান থেকে সরানো সম্ভব নয়। এ ভাবে উচ্ছেদের বিপক্ষে আমরা।’’
প্লাই ঘেরা প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে আগুন জ্বেলে চা তৈরি হচ্ছে।
উড়ালপুলের নীচে আগুন জ্বালিয়ে রমরমিয়ে চলা ব্যবসা সম্প্রতি বন্ধ করে নজির গড়েছে প্রতিবেশী বিধাননগর পুরসভা। হলদিরাম থেকে নিউ টাউনের দিকে যেতে উড়ালপুলের নীচে একটি নার্সিংহোমের সামনে জমিয়ে চলছিল ভাতের হোটেল। মাস খানেক আগে বিধাননগর পুরসভা অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করেছে। জায়গাটি ঘিরেও রাখা রয়েছে।
বিধাননগর পারলে দক্ষিণ দমদম পারছে না কেন? দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান অভিযোগের কথা মানছেন। তিনি বলেন, ‘‘ব্রিজের নীচ থেকে গাড়ি সরানো নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা হচ্ছে। এই পুর এলাকায় কোনও পার্কিং-লট করার জমি না থাকায়, যত্রতত্র পার্কিং-এর বাড়ছে। জাতীয় সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ প্রশাসনের কর্তব্য। উড়ালপুলের নীচে যাতে কোনও ভাবে আগুন জ্বেলে দোকান না চালানো হয়, সে জন্য পুলিশের সঙ্গেও কথা বলা হবে।’’
ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।