Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ভাগ্যের ভরসায় বসে ফুঁসছেন বাসিন্দারা

‘‘আগে ডেঙ্গিতে আমাদের কাউকে মারা যেতে দিন। তার পরে তো পুর প্রতিনিধিরা ব্লিচিং আর মশা মারার তেল নিয়ে আসবেন।’’

বিপদ: প্লাস্টিকের পাত্রে জমে পরিষ্কার জল।প্রমোদগড়ে। ছবি: শৌভিক দে।

বিপদ: প্লাস্টিকের পাত্রে জমে পরিষ্কার জল।প্রমোদগড়ে। ছবি: শৌভিক দে।

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৮ ০৩:০১
Share: Save:

এখানে মানুষ মারা না গেলে পুর প্রতিনিধিদের ঘুম ভাঙে না, অভিযোগ এমনটাই। ‘‘আগে ডেঙ্গিতে আমাদের কাউকে মারা যেতে দিন। তার পরে তো পুর প্রতিনিধিরা ব্লিচিং আর মশা মারার তেল নিয়ে আসবেন।’’ ডেঙ্গি রুখতে পুরসভার উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন করতে এ ভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন বিধাননগর পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত প্রমোদগড়ের বাসিন্দারা।

গত বছর বিধাননগর পুর এলাকার প্রমোদগড়ে বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বেশ কয়েক জনের মৃত্যুও হয়েছিল। তখন প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে পুর প্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সামনের বছর অনেক আগে থেকেই সচেতন থাকবেন তাঁরা। কিন্তু এলাকার মানুষের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতিই সার। মশা ঠেকাতে আগে থেকে কার্যত কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি। তাই এ বার যাতে গত বছরের মতো পরিস্থিতি না হয়, সেই প্রার্থনাই করছেন তাঁরা।

গত বছর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন বছর উনিশের গৃহবধূ রিয়া দাস। প্রমোদগড়ের এক নম্বর গলিতে তাঁর বাড়ি। রিয়ার দিদি ববিতা মিস্ত্রি বললেন, ‘‘গত বছরের মতো এ বারও সন্ধ্যা হলেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা ঘরে ঢুকে পড়ে। যতই গরম লাগুক, দুপুর থেকেই ঘরের জানলা বন্ধ করে রাখতে হয়। ঘরে দু’টি শিশু আছে। গত বছর বোন মারা যাওয়ার পরে এ বার আমরা অনেক বেশি সচেতন। কিন্তু পুর প্রতিনিধিদের তো সে রকম সচেতন হতে দেখলাম না।’’ ববিতার পরিবার জানিয়েছে, মাঝেমধ্যে শুধু ব্লিচিং ছড়ান পুর প্রতিনিধিরা।

আরও পড়ুন: তালা ভেঙে মশা দমনে ‘না’ কাউন্সিলরদের

তবে ব্লিচিং ছড়িয়ে যে মশা মারা যায় না, সে কথা এখন আর কারও অজানা নয়। ববিতার বাড়ির কাছে তবু মাঝেমধ্যে নর্দমায় ব্লিচিং পড়ে। তাঁদের বাড়ি থেকে একটু দূরেই থাকেন স্বপ্না মজুমদার ও মন্দিরা হালদার। তাঁদের অভিযোগ, গলির ভিতরে হওয়ায় তাঁদের পাড়ায় কেউ ব্লিচিং বা মশার তেল ছড়াতে আসেনই না। তাই সেই কাজটা নিজেরাই নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন স্বপ্না ও মন্দিরা। স্বপ্না বলেন, ‘‘গত বছর আমাদের পাড়ায় কত জন মারা গেলেন। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ছিল এক বা একাধিক ডেঙ্গি রোগী। এ বার অগস্ট মাস পড়তেই ভয়ে ভয়ে আছি। গত বছরের সেই আতঙ্কের দিন আবার ফিরে আসবে না তো?’’

গত বছরের পরে এই এলাকায় পুর প্রতিনিধিদের নজর যে সে ভাবে পড়েনি, তা এলাকায় একটু ঘুরলেই টের পাওয়া যায়। খোলা নর্দমা সাফ হয়নি। যত্রতত্র জমে আছে জঞ্জাল ও জমা জল। টব থেকে শুরু করে টায়ার ও গামলায় জল জমে আছে। এলাকার বাসিন্দা কালু সরকার বললেন, ‘‘গত বছর আমার ডেঙ্গি হয়েছিল। এ বার কী হবে, ঠাকুরই জানেন।’’

ভাগ্যের উপরেই কার্যত ভরসা করে বসে আছেন গত বছর এই এলাকায় ডেঙ্গিতে মারা যাওয়া মধ্যবয়সী গৃহবধূ মাধবী বৈদ্যের মা বকুল সর্দার। বৃদ্ধা বকুলদেবী বলেন, ‘‘নিজের মেয়েকে হারিয়েছি এক বছর হয়ে গেল। এক ছেলে, ছেলের বৌ ও নাতিরা রয়েছে এই পাড়াতেই। ওদের বাড়িতে এত মশা। মশা তো কমল না একটুও। ফের যেন কোনও অঘটন না ঘটে।’’ বৃদ্ধা জানান, নিজেই যতটা পারছেন, বাড়ির আশপাশের আগাছা, জমা জল ও জঞ্জাল সাফ করছেন। মাধবীদেবীর ছেলে দীপ বৈদ্য বলেন, ‘‘আবর্জনা তোলার গাড়ি মাঝেমধ্যে আসে। কিন্তু নিয়মিত সাফাই হয় না। তাই গত বছরের থেকে পরিস্থিতি কিছুই পাল্টায়নি। সন্ধ্যা হলেই মশার ঝাঁক তেড়ে আসে। সারা দিন মশা নিরোধক মলম লাগিয়ে বসে থাকতে হয়।’’

বিধাননগর পুরসভার যে বরোর মধ্যে প্রমোদগড় পড়ে, সেই চার নম্বর বরোর চেয়ারম্যান বাণীব্রত বিশ্বাসের দাবি, ‘‘এ বার নিয়মিত মশার তেল থেকে ব্লিচিং, সবই ছড়ানো হচ্ছে। মশা মারার কামানও দাগা হচ্ছে। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের অফিসারদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। এলাকায় কারও জ্বর হয়েছে খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে তাঁর রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Health Medical
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE