Advertisement
E-Paper

নিজস্বী তুলে, রাত জেগে বিদায় টালা সেতুকে

টালা সেতু যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল, মন থেকে তা মেনে নিতে পারছিলেন না আশপাশের বাসিন্দারা।

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৪২
শেষ দেখা: টালা সেতুর উপরে মানববন্ধন। শুক্রবার রাতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

শেষ দেখা: টালা সেতুর উপরে মানববন্ধন। শুক্রবার রাতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

রাত পৌনে ১২টা। একের পর এক গার্ডরেল টালা সেতুর সামনের রাস্তায় এনে জড়ো করছিলেন পুলিশ অফিসারেরা। গার্ডরেল বসানোর সঙ্গে সঙ্গেই টালা সেতু দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করার বোর্ডও ঝুলিয়ে দেওয়া হল। পুলিশ অফিসারেরা জানিয়ে দিলেন, শুক্রবার রাত থেকেই সেতু ভাঙার কাজ শুরু হবে।

টালা সেতু যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল, মন থেকে তা মেনে নিতে পারছিলেন না আশপাশের বাসিন্দারা। পুলিশের নজর এড়িয়েই কয়েক জন গার্ডরেল ঠেলে ঢুকে পড়লেন সেতুর রাস্তায়। সেতু ভাঙার কাজ শুরু হওয়ার আগে শেষ বারের মতো এক বার সেতুর উপর দিয়ে হেঁটে নিতে চান তাঁরা। ছবি তুলতে চান সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে।

রাত প্রায় সাড়ে ১২টা। কনকনে শীতে গোটা পাড়াই যেন জেগে রয়েছে টালা সেতুর উপরে। স্থানীয় একটি বিয়েবাড়ি থেকে নিমন্ত্রণ রক্ষা করে ফিরছিলেন এলাকার বাসিন্দা সহেলি দাস ও আনন্দ দাস। ওই দম্পতি জানালেন, বাড়ি ফেরার সময়েই তাঁরা জানতে পারেন, টালা সেতু বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই আর বাড়ি ঢোকেননি তাঁরা। সোজা চলে এসেছেন টালা সেতুতে। সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে কয়েকটি ছবি তোলার পরে সহেলি বললেন, “এই ছবিগুলো চিরদিনের জন্য মনের অ্যালবামে থেকে যাবে। কত স্মৃতি এই টালা সেতু ঘিরে!”

শুধু সহেলি বা আনন্দই নন, টালা সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে তখন নিজস্বী তুলে রাখছেন বহু মানুষ। কেউ আবার তুলছেন গ্রুপ-ছবি। পাড়ার বাসিন্দারা সেতুর উপরে একে অপরের হাত ধরে মানববন্ধন তৈরি করে দাঁড়িয়ে পড়লেন। জানালেন, দোলের দিন হোক বা বন্‌ধ, টালা সেতুতে যান চলাচল কম থাকলেই ক্রিকেট বা ফুটবল খেলতে নেমে পড়তেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা এক মহিলা বললেন, “শুধু আমি একা আসিনি। টালা সেতু ভাঙা হচ্ছে শুনে আমার মেয়েও চলে এসেছে সেতুটাকে শেষ বারের মতো দেখতে।” পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রী বলে, “স্কুলের বন্ধুদের বলতাম, টালা সেতুর পাশে থাকি। নতুন সেতু তৈরি হবে ঠিকই। কিন্তু এত দিনের চেনা সেতুটা তো আর থাকবে না।”

সেতু ভেঙে গেলে দুই পাড়ার মধ্যেও তো দূরত্ব বেড়ে যাবে! বেলগাছিয়ার দিকে যাঁরা থাকেন, তাঁদের কয়েক জন জানালেন, সেতু ভাঙা হলে শুধু যানবাহনেরই নয়, যাঁরা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন, তাঁদেরও অনেকটা হেঁটে এ-পার ও-পার করতে হবে। কয়েক কিলোমিটার ঘুরে লকগেট উড়ালপুল অথবা বেলগাছিয়া সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে হবে বলে জানান তাঁরা।

শ্যামবাজারে দোকান রয়েছে বেলগাছিয়ার বাসিন্দা কৃষ্ণগোপাল মাঝির। শেষ বারের মতো টালা সেতু দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। জানালেন, দোকান বন্ধ করে গাড়িতে নয়, টালা সেতু ধরে হেঁটেই বাড়ি ফিরতেন। তিনি বললেন, “সাধারণ মানুষের

ভালর জন্যই ভাঙা হচ্ছে এই সেতু। নতুন আধুনিক সেতু তৈরি হলে

সকলের উপকার হবে ঠিকই, কিন্তু আপাতত আমার দৈনন্দিন রুটিনটাই পাল্টে গেল। এ বার তো আর হেঁটে ফিরতে পারব না। অনেক ঘুরপথে যেতে হবে। যাঁরা সেতু দিয়ে সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করেন, তাঁদেরও অনেক অসুবিধা হয়ে গেল।”

রাত ১টা বেজে গিয়েছে। জেসিবি মেশিন, বড় ক্রেন, সেতু ভাঙার আধুনিক যন্ত্রপাতির গাড়ি ঢুকতে শুরু করল এলাকায়। সেতু ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গেল রাত থেকেই। তখনও কয়েক জন স্থানীয় বাসিন্দা সেতুর পাশে

আলো-আঁধারি রাস্তায় দাঁড়িয়ে। শেষ বারের মতো সেতুর রাস্তাতেই রাত কাটাতে চান তাঁরা।

Tala Bridge Selfie
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy