Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
State news

টালিগঞ্জ থানায় ঢুকে জনতার তাণ্ডব, আবারও জুজু পুলিশকে দেখল কলকাতা

পুলিশ কর্মীদেরই একাংশের অভিযোগ, অভিযুক্ত হামলাকারীরা সবাই শাসকদলের এক শীর্ষ নেতার পাড়ার বাসিন্দা হওয়ায় ‘কড়া’ হতে পারেননি তাঁরা।

পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি চলছে উত্তেজিত জনতার।

পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি চলছে উত্তেজিত জনতার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ১০:৩০
Share: Save:

টালিগঞ্জ মনে পড়িয়ে দিল আলিপুরকে। কারণ, উত্তেজিত জনতার সামনে ফের পুলিশের ‘আত্মসমর্পণ’-এর ঘটনা ঘটল এই শহরে।

প্রকাশ্যে মদ্যপানের অভিযোগে কয়েক জন যুবককে আটক করেছিল টালিগঞ্জ থানার পুলিশ। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় টালিগঞ্জ থানায় তাণ্ডব চালাল উত্তেজিত জনতা। থানায় ঢুকে পুলিশ কর্মীদের মারধর করা থেকে শুরু করে থানা লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল, কিছুই বাদ গেল না। আহত হয়েছেন অন্তত সাত জন পুলিশ কর্মী, তাঁদের মধ্যে মহিলারাও রয়েছেন। গোটাটাই হয়েছে রবিবার রাত ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। তবে এত কিছুর পরেই সোমবার বিকেল পর্যন্ত হামলাকারীদের কাউকেই পাকড়াও করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ কর্মীদেরই একাংশের অভিযোগ, অভিযুক্ত হামলাকারীরা সবাই শাসকদলের এক শীর্ষ নেতার পাড়ার বাসিন্দা হওয়ায় ‘কড়া’ হতে পারেননি তাঁরা। এই ঘটনায় অনেকেই ২০১৪-র নভেম্বরে আলিপুর থানার ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাত ন’টা নাগাদ। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে মেনকা সিনেমা হলের সামনে থেকে কয়েক জন যুবককে প্রকাশ্যে মদ্যপান করার অভিযোগে আটক করে পুলিশ। আটক যুবকরা প্রত্যেকেই চেতলা এলাকার বাসিন্দা। অভিযোগ, তাঁদের আটক হওয়ার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে টালিগঞ্জ থানায় ৩০-৪০ জনের একটি দল যায়। থানার কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, ওই দলে বেশ কয়েক জন মহিলা ছিলেন। তাঁরা আটক যুবকদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য থানার মধ্যেই ব্যাপক চিৎকার-গালিগালাজ শুরু করেন। বাধা দিতে গেলে তাঁদের সঙ্গে ধস্তাধ্বস্তি হয় মহিলা পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে। পুলিশ কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, সেই সময় পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে ‘নরম’ হয়ে যান থানার ওসি। তাঁর নির্দেশে ‘ক্যালকাটা পুলিশ অ্যাক্ট’-এর ‘ডিসঅর্ডারলি কনডাক্ট’-এর অভিযোগে শুধুমাত্র জরিমানা করেই ছেড়ে দেওয়া হয় আটক যুবকদের।

আরও পড়ুন: অমিতের দাবি সন্ত্রাস মুছবে কাশ্মীরে, একেবারেই একমত নন বাজপেয়ী জমানার ‘র’ প্রধান

তখনকার মতো চলে যায় ওই জনতা। কিন্তু ফের তারা দলে ভারী হয়ে ফিরে আসে বলে অভিযোগ। এ বার দলে কয়েকশো জন! প্রত্যেকেই চেতলা বস্তির বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। এর পরেই রীতিমতো হামলা চলে। থানার ভিতরে ঢুকে পুলিশ কর্মীদের মারধর করে ওই হামলাকারীরা। রেহাই পাননি মহিলা পুলিশ কর্মীরাও। থানার বাইরে দাঁড়ানো পুলিশ কনস্টেবলকে মারতে মারতে থানার মধ্যে নিয়ে আসে হামলাকারীরা। ওসির ঘরে গিয়ে তাণ্ডব চালানোর পাশাপাশি ওই হামলাকারীরা পৌঁছে যায় থানার উপর তলায় থাকা মেসেও। থানা লক্ষ্য করে ইট-পাথরও ছোড়া হয়।

আরও পড়ুন: বিশ্বে এটাই একমাত্র জঙ্গল যেখানে সিংহেরা একা থাকে, কেন জানেন?

যদিও পুলিশের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ঘটনার সময় থানায় উপস্থিত থাকা বাসিন্দারা। তাঁদেরই একজন ভোলা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘রণজয় হালদার নামে পাড়ার এক যুবককে পুলিশ মদ খাওয়ার জন্য মেনকা সিনেমা হলের সামনে থেকে তুলে নিয়ে যায়।’’ তাঁর অভিযোগ, রণজয় বাড়িতে ফোন করে খবর দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁর ফোন আছড়ে ভেঙে দেয়। পরে খবর পেয়ে পাড়ার লোকজন থানায় যায়। ভোলার দাবি, ‘‘থানায় গিয়ে দেখি রণজয়কে ব্যপক মারধর করা হয়েছে। আর তাতেই রেগে যান এলাকার মানুষ। তাঁরা পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। সামান্য ধস্তাধস্তি হয়।” হামলাকারীদের পাল্টা অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের ব্যাপক মারধর করেছে। ভোলার দাবি, সুজিত দাস এবং দীপঙ্কর সিংহ নামের দুই ব্যক্তির সঙ্গে তাঁকেও পুলিশ আটকে রাখে। পরে গভীর রাতে তাঁদের ছাড়া হয়। ভোলা এবং তার সঙ্গীরা জানান, রাতেই পাড়ার বাসিন্দারা মেয়র ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে গিয়ে গোটা ঘটনার কথা জানিয়েছেন। এর পর তাঁরা পুলিশের মারে আহতদের নিয়ে এসএসকেএমে চিকিৎসা করাতে যান।

আরও পড়ুন: ‘তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যান’! ইদ এলেও স্বস্তি এল না উপত্যকায়

পুলিশ সূত্রে খবর, রাতেই হামলাকারীরা পাল্টা পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগ তখন নেওয়া হলেও, হামলার ঘটনায় কোনও মামলা রাতে করেনি পুলিশ। কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, রবিবার রাতে পুলিশ সঠিক ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারেনি। প্রশ্ন উঠছে, কেন পুলিশ প্রথম বারেই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিল না? কেনই বা অতিরিক্ত বাহিনী চাইলেন না থানার ওসি? পুলিশ কর্মীদের একাংশের ইঙ্গিত, রাজনৈতিক চাপ আসতে পারে, এই আশঙ্কায় শুরু থেকেই নরম ছিলেন থানার ওসি। এমনকি পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার পরও তিনি আপোসে মিটিয়ে নেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছেন। আর তাতেই পুলিশ কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, গোটা ঘটনা কলকাতা পুলিশের পক্ষে একটা খারাপ বিজ্ঞাপন হয়ে রইল। ডিসি সাউথ মীরাজ খালিদকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘হামলাকারীদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করা হয়েছে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আরও পড়ুন: থানায় তাণ্ডবের তোড়ে টেবিলের নীচে পুলিশ, কাঠগড়ায় ববি-সঙ্গী

এর আগে ২০১৪-র নভেম্বরে আলিপুর থানায় তাণ্ডব চালিয়েছিল এক দল লোক। শুধু তাণ্ডব নয়, থানায় আটক করে রাখা চার মহিলা-সহ ১৪ জন অভিযুক্তকেও ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল হামলাকারীরা। লালবাজার অবশ্য সরকারি ভাবে থানায় হামলা-মারধরের কথা স্বীকার করতে চায়নি চায়নি সেই সময়। টেবিলের তলায় ঢুকে ফাইলের আড়ালে প্রাণ বাঁচাতে ব্যস্ত পুলিশকর্মীর ক্যামেরাবন্দি ছবিও সেই সময়ে প্রকাশ্যে আসে। সেই সময়েই লালবাজারের এক পুলিশকর্তা এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, “হামলাকারীদের থেকে বাঁচার জন্য নয়, ক্যামেরায় ধরা না-পড়ার জন্যই উনি ও-ভাবে বসে ছিলেন।” সেই ঘটনাই প্রায় পুনরাবৃত্তি হল এ বার টালিগঞ্জে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Tollygunge Chetla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE