Advertisement
E-Paper

‘ভোটে গরিবকে কুমিরের শ্যাম্পু মাখানো হচ্ছে’

পাশাপাশি কিছু দূর হেঁটে জানতে চাওয়া হল তাঁর নাম-ঠিকানা। এ সব লেখা পিঠে নিয়ে ঘুরে বেড়ান কেন?

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৩২
চাঁদনি চক এলাকায় সেই ব্যক্তি।

চাঁদনি চক এলাকায় সেই ব্যক্তি।

দুপুর রোদে চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের পাশের ফুটপাত ধরে হাঁটছিলেন ভদ্রলোক। মাথায় গাঢ় সবুজ টুপি, পিঠে কালো ব্যাগ। ব্যাগের সঙ্গেই দড়ি দিয়ে বাঁধা ল্যামিনেট করা সাদা কাগজ। তাতে লাল স্কেচ পেন দিয়ে লেখা, ‘‘আপনি ঠিক আমি ভুল।’’

পিঠে কি কেউ মজা করে এই কাগজ এঁটে দিয়েছেন, না নিজেই লাগিয়েছেন? প্রশ্ন শুনে থামলেন না ভদ্রলোক। হাঁটতে হাঁটতেই প্রবল বিরক্ত ভাবে বললেন, ‘‘হ্যাঁ, আপনি ঠিক আমি ভুল।’’ বলা গেল, স্রেফ জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে।

কোনও মন্তব্য তো করা হয়নি। এ বার জবাব এল, ‘‘কই দেশের মাথারা তো কিছুই জানতে চাইছেন না! গরিবের উপরে নিজেদের মত চাপিয়ে দিয়ে তাঁরা বলছেন, আমরাই ঠিক। গরিবের সব ভাবনা ভুল।’’ এর পরে থেমে বলেন, ‘‘তাই পিঠে লিখে ঘুরছি, আপনি ঠিক আমি ভুল! নতমস্তকে ক্ষমতাশালীদের কথা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’’

আজ কোথায় কোথায় ভোট, দেখে নিন

পাশাপাশি কিছু দূর হেঁটে জানতে চাওয়া হল তাঁর নাম-ঠিকানা। এ সব লেখা পিঠে নিয়ে ঘুরে বেড়ান কেন? তিনি বলেন, ‘‘আপনি গান শুনতে ভালবাসেন? আমি বাসি না। আমি প্রতিবাদ করতে ভালবাসি। তাই পিঠে এ সব লিখে ঘুরে বেড়াই। এটাই আমার প্রতিবাদ। শখও বলতে পারেন।’’ আর কী করেন? হনহন করে হেঁটে চলে যাওয়ার আগে ফোন নম্বর দিয়ে বললেন, ‘‘বেশি কথা বলি না। সময় নেই। বিরক্ত করবেন না। দেখবেন যেন আমার নাম-পরিচয় প্রকাশ না হয়।’’

বেশ কিছু দিন পরে ফোনে ধরা গেল নম্বরটি। ঝাঁঝিয়ে বললেন, ‘‘এখনও বোঝা যাচ্ছে না আমি কেন এ সব করি? চারদিকে কুমিরের শ্যাম্পুর কারখানা খোলা হয়েছে। বুঝছেন না?’’ বোঝাতে শুরু করলেন তিনি। বললেন, ‘‘কুমির জলে থাকে। তার মাথায় চুল নেই। ফলে শ্যাম্পুরও দরকার পড়ে না। কিন্তু ভোটের মুখে গরিবকে একের পর এক মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কুমিরের শ্যাম্পুর কারখানা খুলছে রাজনৈতিক দলগুলি। কেউ বলছেন, ১৫ লক্ষ দেবেন, কেউ দু’লক্ষ। কেউ আবার নাকি গরিবের আয় ১২ হাজার করে দেওয়ার দায়িত্ব নেবেন। এ সব তো জলে ধুয়ে যাবে।’’ তিনি বলে চলেন, ‘‘কেউ বিশ্বমানের শিক্ষার ব্যবস্থা করার কথা বলছেন না। শিক্ষা পেলে গরিব নিজেই টাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারবে।’’ দাবি করলেন, এ সব কাউকে বলার জায়গা না থাকায়, ‘আপনি বাঘ, আমি পোকা’, ‘মানুষ দুই প্রকার, গোরিলা আর অ্যামিবা’ পিঠে লিখে ঘুরে বেড়ান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কিছু বলতে গেলেই গোরিলা হয়ে তেড়ে আসার জন্য বসে আছেন অনেকে। আমাদের তখন ভয়ে অ্যামিবা হয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই!’’

এ রকম কত লেখা আছে? ভদ্রলোক জানান, কুড়িটিরও বেশি। সাদা কাগজে লাল স্কেচ পেন দিয়ে লিখে ল্যামিনেট করিয়ে নেন। লেখাগুলি ঘরের দেওয়ালে ঝোলানো থাকে। সকালে বেরোনোর সময়ে ব্যাগে ঝুলিয়ে নেন। কোনওটিতে লেখা, ‘লোহার মতো তুলতুলে’। তাঁর ব্যাখ্যা, লোহা তুলতুলে থাকে উত্তপ্ত অবস্থায়। দেশের পরিস্থিতিও তেমন উত্তপ্ত। কোনওটিতে আবার লেখা ‘বাঘে খাবে দই চিঁড়ে’ কিংবা ‘চোখ ঝলসানো অন্ধকার’। তাঁর বক্তব্য, এ সবই হল ভোটের সময়ের মিথ্যা আশ্বাসের মতো।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কিন্তু তাঁর নাম-পরিচয়? ভদ্রলোক থামিয়ে দিয়ে জানান, তিনি লগ্নি সংস্থার এজেন্ট। বিয়ে করেননি। বাবা-মা মারা গিয়েছেন। দমদম এলকায় পৈতৃক বাড়িতে তাঁদের যৌথ পরিবার। প্রতিদিন সকালে কাজে বেরিয়ে রাত ১১টায় ফেরেন। আর নাম? চেঁচিয়ে উঠে বললেন, ‘‘বলছি তো একদম নয়। নাম প্রকাশ হলে দেখবেন, খালের ধারে বা কোনও মাঠে আমার দেহ পড়ে আছে। প্রতিবাদ করেছি শুনলে ওরা ছেড়ে দেবে ভেবেছেন?’’

কয়েক দিন আগেই ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ লেখা খোঁপার কাঁটা পরায় চর্চা হয় এক বাংলাদেশি তরুণীকে নিয়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল পড়তেই একই লেখা ছাপা টি-শার্ট পরেও দেখা যায় তাঁকে। রাজনৈতিক প্রতিবাদের জন্য খেলার মাঠকেও বেছে নেওয়া হয়েছে অনেক বার। একাত্তরে ঢাকায় আন্তর্জাতিক একাদশের সঙ্গে পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচে ব্যাটে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র আর ‘জয় বাংলা’ স্লোগান লেখা স্টিকার লাগিয়ে মাঠে নেমেছিলেন দলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র প্রতিনিধি রকিবুল হাসান। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির কাছে ছোট্ট একটি স্টেশনে আবার সন্ধ্যা হলেই ট্রলি ঠেলতে ঠেলতে ঘুরে বেড়ান ঘরহীন এক বৃদ্ধ। তাঁর ট্রলির গায়ে লেখা থাকে, ‘এ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নড়বড়ে। বাড়ি কিনে অপচয় করবেন না।’

কিন্তু সবই কি প্রতিবাদ, না কি এর পিছনে রয়েছে প্রচার পাওয়ার লক্ষ্যও?

মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধে দেব বলছেন, ‘‘কঠিন প্রশ্ন। এই ভদ্রলোক যা করছেন, তা অনেক বেশি চোখে পড়ার মতো। শুধুমাত্র তিনি পিঠে ঝুলিয়ে ঘুরছেন বলে নয়, যে কথাগুলি তিনি ব্যবহার, করছেন তা-ও সহজেই চোখে পড়ে। নিজের প্রতি একটি দৃষ্টি আকর্ষণের ব্যাপার তো আছেই।’’

সম্প্রতি নাগরিকপঞ্জির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর মুখোশ পরে সংসদে অভিনব প্রতিবাদ দেখান তৃণমূল সাংসদেরা। তা-ও নিছক প্রচার পাওয়ার লক্ষ্যেই করা বলে মত অনেকের।

Lok Sabha Election 2019 লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ general-election-2019-west-bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy