Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘গোলমাল সামাল দেওয়াই আমাদের কাজ’

লোকসভা ভোটের শেষ দফা জগন্নাথবাবুর কতটা নির্বিঘ্নে কাটবে তা আপাতত জল্পনার স্তরে। তবে আজ ভোটের জন্য শনিবার সকালেই বাড়ি থেকে থানায় অস্তানা গেড়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই তাঁর পারিবারিক জীবনে অশান্তির ছায়া নেমেছে।

বর্তমানে কসবা থানার অতিরিক্ত ওসি জগন্নাথ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

বর্তমানে কসবা থানার অতিরিক্ত ওসি জগন্নাথ মণ্ডল। নিজস্ব চিত্র

শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০১:৪১
Share: Save:

তিন বছর আগে ডান দিকের কলার বোনে গুলি ঢুকেছিল তাঁর। এখন চাকরির মেয়াদ পাঁচ মাস। এমনই পরিস্থিতিতে কসবা থানার অতিরিক্ত ওসি জগন্নাথ মণ্ডল রবিবার ভোটের ময়দানে নেমে এলাকা ঘুরে থানার ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’-এর নেতৃত্ব দেবেন।

লোকসভা ভোটের শেষ দফা জগন্নাথবাবুর কতটা নির্বিঘ্নে কাটবে তা আপাতত জল্পনার স্তরে। তবে আজ ভোটের জন্য শনিবার সকালেই বাড়ি থেকে থানায় অস্তানা গেড়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই তাঁর পারিবারিক জীবনে অশান্তির ছায়া নেমেছে। ‘‘বৌ কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। কী মুশকিল মশাই।’’— বেজার মুখে বলছেন প্রৌঢ় পুলিশ অফিসার। শুধু তা-ই নয়, ছেলেমেয়েরাও বারবার ফোন করে বাবাকে মৃদু বকাবকি করছেন।

বর্তমানে ইনস্পেক্টর এবং কসবা থানার অতিরিক্ত ওসি জগন্নাথবাবু ২০১৫ সালে গিরিশ পার্ক থানায় কর্মরত ছিলেন। ওই বছর ১৫ এপ্রিল, পুরভোটের দিন বিকেলে তিনি খবর পান একদল দুষ্কৃতী সিংহী বাগানে কংগ্রেস ক্যাম্প অফিস ভাঙচুর করছে। খবর পেয়ে বাহিনীর অন্যদের নিয়ে সেখানে পৌঁছলে দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হন জগন্নাথবাবু। তাঁর ডান দিকের কলার বোন ফুঁড়ে গুলি ঢুকে যায়। ওই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছিল শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দিকে। পরে অবশ্য পুলিশ মধ্য কলকাতার তোলাবাজ গোপাল তিওয়ারিকে গ্রেফতার করে। লালবাজার জানিয়েছে, ওই বিচার চলছে। দুষ্কৃতীরা জেলেই রয়েছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালত মামলার শুনানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে।

গুলি লাগার পরে তিন মাস শয্যাশায়ী ছিলেন। ওই ঘটনার পরেও আলিপুর থানায় কর্মরত থাকাকালীন তিনি বিধানসভা ভোটে ডিউটি করেছেন। এ বার লোকসভা ভোট। আরও বড় দায়িত্ব। সেই ভোট, সেই দুষ্কৃতীদের সামলানো। ২৪ জন পুলিশকর্মীকে নিয়ে জগন্নাথবাবুর নেতৃত্বে স্ট্রাইকিং ফোর্স ইতিমধ্যেই কসবা থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় টহলদারি চালাচ্ছে। কোনও গোলমাল বা জমায়েত দেখতে পেলে সরিয়ে দেবে বাহিনী। পুলিশকর্তাদের মতে, ওই ডিউটিতে বিপদের আশঙ্কা থাকে। কারণ, গোলামালের খবর পেলেই তা মোকাবিলা করতে স্ট্রাইকিং ফোর্সকে ছুটতে হয়। লালবাজারের এক কর্তার দাবি, ‘‘জগন্নাথ চাইলে পিকেট ডিউটি করতে পারতেন। উনি তা চাননি। আগের দিন থেকেই রাস্তায় নেমে পড়েছেন।’’

শনিবার দুপুরে বাহিনী নিয়ে টহলদারি চালানোর সময়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জগন্নাথবাবুর উত্তর, ‘‘গোলমাল সামাল দেওয়াই আমাদের কাজ। পিছিয়ে এলে চলবে না। যা হয়, দেখা যাবে।’’ তিনি জানান, ওই ঘটনার কথা মনে রাখতে চান না তিনি। ভোটের ডিউটি করতে পরিজনেদের প্রবল আপত্তি। তাঁর স্ত্রী সকাল থেকেই কথা বলা বন্ধ করেছেন। ছেলেমেয়েরাও লাগাতার ফোনে খোঁজ নিচ্ছেন।

তবে তিনি চান, অবসরের আগের ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে পার করাতে। সে জন্য অতীতকে ভুলে শনিবারই চষে ফেলেছেন কসবার বিভিন্ন এলাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE