Advertisement
E-Paper

স্মৃতি কিছুতেই পিছু হাঁটে না, একলা ঘরে রোমন্থন চারুলতার

সরাসরি রাজনীতি তাঁদের জগৎ নয়। তবু এক সময়ে লড়েছিলেন ভোটের ময়দানে। সেখান থেকে আজ তাঁরা অনেকটাই দূরে। এ বারের ভোট নিয়ে কী বলছেন?

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩৯
আলাপচারিতা: নিজের বাড়িতে মাধবী মুখোপাধ্যায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

আলাপচারিতা: নিজের বাড়িতে মাধবী মুখোপাধ্যায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

‘তাঁদের সম্মানে মান নিও বিশ্বে যাঁরা চির স্মরণীয়’।— স্বাগত ১৪০০ বঙ্গাব্দ।

২৬ বছর আগের বাংলা নববর্ষের কোনও স্মারকপত্র। লেক গার্ডেন্সে সরকারি হাউজ়িং বোর্ডের পুরনো আবাসনের ফ্ল্যাটের গেটের উপরে ঝুলছে। তাতেই শেষের দিকে মোটা হরফে লেখা, ‘মাধবী চক্রবর্তী’!

কলিং বেলের তলব পাওয়া থেকে ফ্ল্যাটের গেট খোলা ইস্তক যতটা সময় মেলে, তত ক্ষণ চোখ বোলানো গেল সেই স্মারকপত্রে। ‘মাধবী চক্রবর্তী’ লেখাটা পড়তে পড়তেই দরজা খুলে দাঁড়ালেন তিনি।— সত্যজিতের চারুলতা! ঋত্বিকের সীতা! দর্শকের মাধবী। একেবারে ঘরোয়া পোশাক। তবু যেন তাঁকে পর্দায় দেখার পরে মোহাবিষ্ট দর্শকের মতোই আচ্ছন্ন ১৪২৫ বঙ্গাব্দের শেষ সন্ধ্যার আগন্তুকেরা।

‘‘দাঁড়িয়ে কেন? ভিতরে কিন্তু বসার ব্যবস্থা আছে।’’ বাঁ দিকের বসার ঘর দেখিয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘এখানে একাই থাকি।’’ অভিনেত্রীর দেখানো পথে ঘরে ঢুকে আর এক প্রস্ত আচ্ছন্ন ভাব। এক দিকের দেওয়ালের পুরোটা নিয়ে চারুলতার তৈলচিত্র। তিন দিকের দেওয়ালের শো-কেসে পুরস্কারের ভিড়। এ ছাড়া মুখোমুখি দু’টি সোফা। আর ঘরের মাঝখানে পাতা টেবিলের গোটাটা দখল করে পিতলের বিরাট থালা।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

কেমন আছেন? সোফার এক দিকে ধীরে সুস্থে বসে সত্তরোর্ধ্বা মাধবী বললেন, ‘‘রোগ-ভোগ, সুগার, মুখে হাসি — বেঁচে থাকার জন্য যা যা চাই সব আছে। সব নিয়েই আছি।’’ কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বলেন, ‘‘তবে এই সব থাকার মধ্যেও কিছু মানুষকে বড্ড মিস করি। আমি মনে করি ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। বর্তমান কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই সেটা অতীত হয়ে যায়। তাই যখনই একা বসে থাকি অতীতের কথাগুলোই মনে পড়ে।’’

মাধবী জানান, তাঁর অতীতের কথা মনে করার আরও বড় কারণ এখনকার সিনেমার কাজে পুরনো দিনের সেই নিষ্ঠা দেখতে না পাওয়া। শিশির ভাদুড়ি, তুলসী চক্রবর্তী, অহীন্দ্র চৌধুরী, প্রভাদেবীর মতো নাট্যব্যক্তিত্বের প্রিয় ছাত্রী বললেন, ‘‘দর্শক তৈরি হচ্ছে কই? সত্যজিৎ রায় নিজের ছবির দর্শক তৈরি করেছিলেন। এখন সে সব কোথায়? সাধারণ মানুষের কথা ভাবছেন কেউ?’’

সাধারণের কথা ভাবতেই কি ভোটে দাঁড়ানো? ২০১৯ লোকসভা ভোট মরসুমে এমন প্রশ্নের জন্য যেন তৈরিই ছিলেন ‘মহানগর’-এর আরতি। সপাটে বললেন, ‘‘আমি তো ভোটে লড়িনি। কথা রাখতে দাঁড়িয়েছিলাম। এত ভোট পাব ভাবিওনি। কিন্তু, ওঁরা তো আমার বিরুদ্ধে রিগিং করে জিতেছেন।’’ ফিরে গেলেন ২০০১ সালের বিধানসভা ভোটের কথায়।

সে বার যাদবপুর কেন্দ্র থেকে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে লড়ে ২৯ হাজার ২৮১ ভোটে হারেন মাধবী। বললেন, ‘‘তখন স্টার থিয়েটার পুড়ে গিয়েছে। থিয়েটার বাঁচানোর জন্য আমরা গিয়েছিলাম তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে। লাভ হয়নি। তার পরে তখনকার কলকাতার মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে ধরলাম। তিনি বললেন, কাজ হয়ে যাবে। বদলে আমি যা বলব করতে হবে। রাজি হয়ে যাই। বড়জোর স্টেজ ঝাঁট দেওয়াবেন ভেবেছিলাম। পাঁচ-ছ’বছর বয়স থেকে থিয়েটারে কাজ করছি। স্টেজ সাফাই করতে আমার ভালই লাগবে।’’ খানিক দম নিয়ে বললেন, ‘‘ওমা, সুব্রত বললেন, যাদবপুর কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়াতে হবে। আমি কখনও কথার খেলাপ করিনি। দাঁড়িয়ে গেলাম। যথারীতি হারলামও। তবে বুদ্ধবাবু কিন্তু কখনই আমার অপছন্দের মানুষ নন।’’

তবে তার পরেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছিলেন বলে দাবি করলেন মাধবী। দক্ষিণ কলকাতায় তাঁকে দলের মুখ হয়ে থাকারও পরামর্শ দিয়েছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। ‘‘মমতা শিল্পীদের জন্য যা করেছেন, ভুলব না। আগে কেউ এ ভাবে ভাবেননি।’’ তা হলে রাজনীতি থেকে দূরে কেন? স্মিত হেসে বললেন, বহু দিন আগে একটা রেকর্ড শুনেছিলাম। বাবা মেয়েকে বলছেন সব দামী জিনিস লুকিয়ে ফেল। খাটের তলায় ঢুকে আয়। ওরা সব লুট করতে এসেছে। মেয়ে জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে বলল, লুট করতে নয়। ওরা ভোট করতে এসেছে। ভয় নেই বাবা, বেরিয়ে এসো। তখন ভয় ছিল না। এখন কিন্তু ভয় আছে, যুক্ত হয়েছে। তা ছাড়া দেশের কাজ করতে ভোটে দাঁড়াতে হয় না।’’

তবে মিমি, নুসরতদের মতো যাঁরা এ বার ভোটে লড়ছেন তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে মাধবী বলছেন, ‘‘অন্য কোনও পেশা থেকে লোক এলে এত কথা হয় না। আমরা অভিনয় জগতের লোকেরা ভোটে লড়লেই এত কথা ওঠে কেন?’’

কথার শুরুতেই নায়িকার নতুন একটা ছবি তোলার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। অনুরোধ উড়িয়ে তিনি বলে দেন, ‘‘প্রতিদিন কাজে বেরোতে হয়। আজ আর মেকআপ করতে ভাল লাগছে না। আজ বরং থাক।’’ কথার শেষে ফের ছবি তোলার পীড়াপীড়িতে বললেন, ‘‘একটু বসতে হবে কিন্তু। এটা আমার পেশা। পেশা যখন, সেই কাজ আমি ভাল করেই করি।’’

পঁয়তাল্লিশ মিনিটের অপেক্ষার পরে ফিরলেন তিনি। বললেন, ‘‘ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। বর্তমান কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই সেটা অতীত।’’

Lok Sabha Election 2019 Madhabi Mukherjee লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy