Advertisement
১৪ অক্টোবর ২০২৪

ভোট-গগনে প্রচারে ভরসা ‘মেঘনাদেরাও’ 

খাস দক্ষিণ কলকাতায় কংগ্রেস প্রার্থী মিতা চক্রবর্তী লড়াইয়ে থাকুন, না-ই থাকুন পেশাদার ‘হোয়াটসঅ্যাপ সেনা’ তাঁর পাশে রয়েছে। শশী তারুরের ঘনিষ্ঠ, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্ত্রী মিতার ‘বায়োডেটা’ হোয়াটসঅ্যাপে লাখ দশেক লোকের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। 

ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০১:০৬
Share: Save:

‘মেঘনাদ’ বলা যেতেই পারে। কিছু ক্ষেত্রে স্বয়ং ‘মধুসূদন দাদা’! অন্তত হেভিওয়েট শাসকের ‘সংগঠন’-এর সঙ্গে যেখানে প্রার্থীকে পাল্লা দিতে হচ্ছে।

ডায়মন্ড হারবারে সিপিএমের ডাক্তার-প্রার্থী ফুয়াদ হালিমের ক্ষেত্রে যেমনটা ঘটেছে। ফুয়াদ-শিবির মানছে, ডায়মন্ড হারবার, বজবজ, ফলতার মতো কয়েকটি এলাকায় সশরীরে গিয়ে প্রচারে নানা ভাবে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই ওই সব এলাকায় অন্য কৌশলই ভরসা। সংসদের ‘যোগ্য’ শিক্ষিত প্রার্থী ফুয়াদসাহেবের ভাবমূর্তি মেলে ধরায় পেশাদার জনসংযোগ সংস্থারও হাত রয়েছে। নাসিরুদ্দিন শাহ থেকে স্থানীয় কলেজ ছাত্রী বা এলাকার টোটোচালকের মুখে ফুয়াদের সমর্থনে ভিডিয়ো দেদার ছড়িয়েছে ভোটারদের মোবাইলে। ফুয়াদের কণ্ঠও অনেকের মোবাইলে শেষ মুহূর্তে বেজে উঠছে।

খাস দক্ষিণ কলকাতায় কংগ্রেস প্রার্থী মিতা চক্রবর্তী লড়াইয়ে থাকুন, না-ই থাকুন পেশাদার ‘হোয়াটসঅ্যাপ সেনা’ তাঁর পাশে রয়েছে। শশী তারুরের ঘনিষ্ঠ, তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্ত্রী মিতার ‘বায়োডেটা’ হোয়াটসঅ্যাপে লাখ দশেক লোকের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।

আগের কোনও ভোটে হোয়াটসঅ্যাপ এতটা শক্তিশালী ছিল না। এ বার ভোটের দফায় দফায় নির্দিষ্ট সফটঅয়্যারের সাহায্যে হোয়াটসঅ্যাপ-প্রচার কাজে লাগিয়েছেন বিভিন্ন প্রার্থী। ভোটের ডিজিটাল ক্যাম্পেনে অভিজ্ঞদের দাবি, বাংলায় হোয়াটসঅ্যাপ মারফত অন্তত ছ’কোটি লোকের কাছে পৌঁছনো সম্ভব। ১৮-৩০ বছরেরা তো মোবাইল অন্ত প্রাণ!

একদা নরেন্দ্র মোদীর ভোটযুদ্ধের স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর বা মায়াবতীর উপদেষ্টা সতীশচন্দ্র মিশ্রেরা ইতিমধ্যেই ‘চাণক্য’ আখ্যা পেয়ে গিয়েছেন। কলকাতার পেশাদার প্রচার-উপদেষ্টাদের গুরুত্ব ঠিক ততটা নয়। তবু ফুয়াদ-মিতা ছাড়া এ ভোটেও যাদবপুরের বাম প্রার্থী, জয়নগরের সুভাষ নস্কর বা মথুরাপুরের শরৎচন্দ্র হালদারদের প্রচারেও পেশাদার হাত রয়েছে। আবার বাঁকুড়ায় বিজেপি-র সুভাষ সরকার বা কৃষ্ণনগরের বিজেপি-র কল্যাণ চৌবেও একই কৌশল নিয়েছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের খবরাখবরও অন্তরালবর্তী ‘সহযোগীরা’ নিয়মিত ই-মেলে তাঁদের ‘ক্লায়েন্ট’-কে পৌঁছে দিচ্ছেন।

ভোট-যুদ্ধের ‘মেঘনাদেরা’ ব্যাখ্যা করছেন, আড়াল থেকে যুদ্ধটা কী ভাবে পাল্টেছে দশ বছরে! ২০০৯-এ বিজেপি-র ব্রতীন সেনগুপ্তের জন্য যাত্রার মোড়কে প্রচার চলত। আর এক বিজেপি প্রার্থীর হয়ে কিছুটা বিতর্কিত ‘গোহত্যা বন্ধ যজ্ঞ’ও সর্বভারতীয় প্রচারমাধ্যমের নজর কেড়েছিল। দশ বছর বাদে প্রচারটা প্রধানত সোশ্যাল মিডিয়ায়। কখনও প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বীকেও নিশানা করা হচ্ছে। এ বার দিল্লিতে গৌতম গম্ভীরের প্রতিদ্বন্দ্বী আপ-এর অতিশী মারলেনার ভাবমূর্তি ধ্বংস করতেও পেশাদার সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। এ রাজ্যে বাঁকুড়ায় সুভাষবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ‘বহিরাগত’ তকমা বা কৃষ্ণনগরে কল্যাণ চৌবের হয়ে প্রাক্তন সাংসদ তাপস পালকে নিন্দার কৌশলেও ‘মেঘনাদদের’ হাত ছিল।

তবে মেঘের আড়ালের যুদ্ধেও কিছু ‘নীতি’ থাকে। সাধারণত একই কেন্দ্রে দু’জন প্রার্থীর প্রচার করাটা ঠিক নয় বলে মনে করেন ‘মেঘনাদেরা’। মিতার হয়ে কাজ করার জন্য এ বার এক জন যেমন, বিজেপি-র চন্দ্র বসুর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন।

নেপথ্যে থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে এই ‘সহযোগী’দের গায়েও রোদ-জল কম লাগেনি। দেড় মাসে মিমি চক্রবর্তীর প্রচারে ছায়া-সঙ্গী একটি পেশাদার সংস্থার কর্তা রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। মিমির প্রচারের হাতে-গরম ছবি, ভিডিয়ো সংবাদমাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত পৌঁছে দিচ্ছেন। রোজ সকাল ছ’টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফিরতে মাঝরাত। মাঝতিরিশের দোহারা যুবক রুদ্রের চোখমুখে ধকলের ছাপ স্পষ্ট। এ বার ভোটে মিমিকে ঘিরে জনমানসে কিছু ভুল বোঝাবুঝি দূর করতেও তৎপর হয়েছেন এই যুবক। তবে তিনি বলছেন, ‘‘প্রার্থীকে সাহায্য করলেও রাজনীতির মধ্যে আমরা ঢুকি না। তবে চেষ্টা করি, তিনি যাতে ঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারেন!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE