Advertisement
E-Paper

সব খুইয়েও পরের জন্য বিলিয়ে দিলেন শেষটুকু

এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অন্য বেসরকারি হাসপাতাল। টানা ৫৫ দিন ধরে পিংপং বলের মতো ঘুরে মরেছিলেন শহরের চার-চারটি হাসপাতালে। কিন্তু অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। এ দিকে নামী হাসপাতালের দামি চিকিৎসায় খরচ হয়ে গিয়েছিল প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা। শেষে কার্যত কপর্দকশূন্য অবস্থায় দু’টাকার আউটডোর টিকিট কেটে চিকিৎসা শুরু করেন সরকারি হাসপাতালে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৫ ০৩:২৭

এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অন্য বেসরকারি হাসপাতাল। টানা ৫৫ দিন ধরে পিংপং বলের মতো ঘুরে মরেছিলেন শহরের চার-চারটি হাসপাতালে। কিন্তু অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি।

এ দিকে নামী হাসপাতালের দামি চিকিৎসায় খরচ হয়ে গিয়েছিল প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা। শেষে কার্যত কপর্দকশূন্য অবস্থায় দু’টাকার আউটডোর টিকিট কেটে চিকিৎসা শুরু করেন সরকারি হাসপাতালে।

এর পর কেটে গিয়েছে দু’টো বছর। সেই সরকারি হাসপাতালেই প্রায় নিখরচায় চিকিৎসা চলেছে তাঁর। সেখানেই এক দিন খবর পান লিভারের অসুখে আক্রান্তদের জন্য তৈরি হচ্ছে একটি হাসপাতাল। গরিব মানুষ সস্তায় চিকিৎসা করতে পারবেন সেখানে।

দেরি করেননি। খবরটা পাওয়া মাত্র তিনি ছুটে যান ডাক্তারবাবুদের কাছে। দু’বছরে তিল তিল করে উপার্জন করা এক লক্ষ টাকা নিজের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য না রেখে ওই হাসপাতাল গড়ার কাজে দান করে দিলেন ৪৭ বছরের সমীরণ দেবনাথ। ‘সিরোসিস অব লিভার’-এর চূড়ান্ত পর্যায়ের রোগী তিনি।

বছর কয়েক আগের ঘটনা। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের কয়েক জন গ্যাসট্রোএন্টেরোলজিস্ট মিলে লিভারের অসুখ সংক্রান্ত গবেষণা ও চিকিৎসার জন্য একটি ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন। সেই সংস্থার তরফেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরে শুরু হয় ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব লিভার অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ সায়েন্সেস’ নামে একটি হাসপাতাল তৈরির কাজ। জমি দেয় রাজ্য সরকার।

পাঁচতলা হাসপাতালটি তৈরির কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু অন্যান্য পরিকাঠামো গড়ে উঠবে কী ভাবে? হাসপাতাল গড়তে তাই শুরু হয় ‘ডোনেশন’ চাওয়া। গরিব মানুষকে কম খরচে চিকিৎসা দেওয়ার ওই প্রয়াসে এগিয়ে আসেন বহু মানুষ। এসএসকেএমের কয়েক জন চিকিৎসকও ওই সংস্থার সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত। সেখানে নিয়মিত চিকিৎসা করাতে এসে খবরটা পান সমীরণবাবুও। তাঁর মতো গরিব মানুষেরা কী ভাবে চিকিৎসার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন, সেই চিন্তা মাঝেমধ্যেই কুরে কুরে খেত সমীরণবাবুকে। খবরটা পেয়েই তাই গত দু’বছরের জমানো টাকাটা তুলে দেন ওই হাসপাতাল গড়ার কাজে।

সমীরণবাবুর কথায়, ‘‘আমার জন্য দু’টাকার টিকিট কাটা সরকারি হাসপাতাল আছে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালই বা কত মানুষকে পরিষেবা দেবে? প্রতি বার গিয়ে দেখি রোগীর ভিড় ক্রমশ উপচে পড়ছে। হাসপাতালের সংখ্যা আরও বাড়া দরকার। তাই মনে হল, আমি অন্তত এটুকু করি।’’ এই বিষয়ে কোনও প্রচার হোক, সেটা চাননি সমীরণবাবু (এমনকী আননন্দবাজার-এর প্রতিনিধিকে তাঁর ছবি না তোলার জন্যও অনুরোধ করেন)। তাঁর কথায়, ‘‘এ হল সেতু গড়ার কাজে কাঠবিড়ালির ভূমিকা। আলাদা করে প্রশংসা পাওয়ার কথা নয়।’’

ওই ফাউন্ডেশনের সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী, অশোকানন্দ কোনারের মতো চিকিৎসকেরা জানান, বহু ধনী মানুষ তাঁদের কাজে সাহায্য করছেন। কিন্তু তারই পাশাপাশি এক জন দরিদ্র রোগীও তাঁর শেষ সম্বলটুকু তুলে দিচ্ছেন হাসপাতাল গড়ার কাজে, সেটা গোটা প্রয়াসে অন্য মাত্রা যোগ করছে। চলতি বছরের শেষেই ওই হাসপাতালে আউটডোর পরিষেবা শুরু হতে চলেছে। আগামী বছরের মধ্যেই ৯০ শয্যার হাসপাতালের ইনডোর বিভাগ চালু হবে বলে তাঁরা আশাবাদী।

ছোট্ট একটা ব্যবসা রয়েছে সমীরণবাবুর। অসুস্থ হওয়ার পরে সেই কাজও তেমন ভাবে করে উঠতে পারেন না। ফলে নিজের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকটি টাকাই এখন তাঁর কাছে মূল্যবান। এই পরিস্থিতিতে সামান্য সম্বলটুকু অপরের কাছে তুলে দেওয়ার ‘খামখেয়ালিপনা’য় তাঁর পরিবারের লোকেরা বাধা হননি? উত্তর দিতে গিয়ে অকৃতদার সমীরণবাবুর ভাই সুবীর দেবনাথের গলা কান্নায় বুজে আসে। তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে আর্থিক ভাবে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে পরিবার। ফের উঠে দাঁড়ানোর মতো মনের জোরটাই হারিয়ে গিয়েছে। সরকারি হাসপাতালে গিয়ে দাদা অন্তত চিকিৎসাটুকু পাচ্ছেন। আমরা চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এমন আরও হাসপাতাল তৈরি হোক। বৃদ্ধ মা-বাবাও তাই দাদার ইচ্ছায় সায় দিয়েছেন।’’

abpnewsletters samiran debnath Cirrhosis of the Liver Cirrhosis of the Liver samiranbabu indian institute of liver and digestive sciences samiran debnath donated last penny
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy