Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নানা মহলের নিত্য নতুন দাবিতে সমাধান অধরাই

তবে এ দিন সকাল থেকে বেহালার ওই স্কুলে পঠনপাঠন হয়েছে। সামনে ছিল বিশাল পুলিশবাহিনী।

ক্ষোভ: শহরের দু’টি স্কুলে শিশুদের যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মিছিল। মঙ্গলবার, জেমস লং সরণিতে। —নিজস্ব চিত্র।

ক্ষোভ: শহরের দু’টি স্কুলে শিশুদের যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মিছিল। মঙ্গলবার, জেমস লং সরণিতে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৭
Share: Save:

সোমবার দিনভর অভিযুক্ত দু’জনকে গ্রেফতারের দাবি উঠেছিল। রাতে তাঁদের এক জনকে পুলিশ গ্রেফতারও করল। তিনি স্কুলের এক শিক্ষাকর্মী। কিন্তু মঙ্গলবার বেহালার এমপি বিড়লা ফাউন্ডেশন হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা নতুন দাবি তুলে বললেন, প্রিন্সিপাল ও জেনারেল ম্যানেজারের গ্রেফতারি চাই। তাঁদের পদত্যাগ করতে হবে। কেউ কেউ সিবিআই তদন্তের দাবিও করলেন।

তবে এ দিন সকাল থেকে বেহালার ওই স্কুলে পঠনপাঠন হয়েছে। সামনে ছিল বিশাল পুলিশবাহিনী।

সেপ্টেম্বরে ওই স্কুলে সাড়ে তিন বছরের এক শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। যাকে ঘিরে অভিভাবকেরা সোমবার সকাল থেকে বিক্ষোভ, পথ অবরোধে সামিল হন। সোমবার সন্ধ্যায় জেমস লং সরণি থেকে অবরোধ হটাতে পুলিশকে লাঠিও চালাতে হয়।

মঙ্গলবার বিকেলে ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের তরফে পাঁচ জন স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ওই অভিভাবকেরা বলেন, ‘‘স্কুলে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই বৈঠকের মূল বিষয় ছিল। পাশাপাশি, যৌন হেনস্থার ঘটনায় দ্বিতীয় অভিযুক্তকে খুঁজে বার করতে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। ওঁরা ২৪ ঘণ্টা সময় চেয়েছেন।’’ রাতে অভিভাবকেরা বিক্ষোভ থামান। দ্বিতীয় অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করলে আজ, বুধবার বিকেলে ফের স্কুলের সামনে জমায়েত হবে বলে জানান অভিভাবকেরা।

এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ শ’পাঁচেক অভিভাবক স্কুল থেকে মিছিল করে বেহালা থানায় গিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন। হাতে ছিল পোস্টার, ব্যানার। লাঠিপেটা করেছিলেন যে সব পুলিশ, তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

যে শিশুটির নির্যাতন হয়েছে বলে অভিযোগ, এ দিন তার বাবা বলেন, ‘‘তিন মাস আগে আমার বাচ্চা স্কুলেই যৌন হেনস্থার শিকার হয়। বারবার বলা হলেও কর্তৃপক্ষ স্কুলে এই ঘটনা ঘটেনি বলে এড়িয়ে যান।’’ তাঁর মতে, সোমবার অভিভাবকেরা একজোট হওয়ায় পুলিশ এক জনকে ধরেছে। কিন্তু ওই শিশুর বাবা বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ এত দিন তথ্য লুকিয়েছেন। ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না অধ্যক্ষ ও জিএম। আমরা অবিলম্বে তাঁদের পদত্যাগ চাই। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক।’’

তবে এ দিন মিছিলে সামিল অভিভাবকদের একাংশ বলেন, ‘‘এত দিন ধরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিল না কেন? সিবিআই তদন্ত চাই।’’ যদিও গোয়েন্দা-প্রধান বিশাল গর্গ দাবি করেন, ‘‘থানার গাফিলতি এখনও নজরে আসেনি।’’ তা হলে অভিযুক্তকে ধরতে তিন মাস লাগল কেন? গোয়েন্দা-প্রধান প্রশ্ন এড়িয়ে বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে।’’

ওই ঘটনায় ধৃত, স্কুলের পিওন মনোজ মান্নাকে এ দিন আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালতে হাজির করানো হয়। মুখ্য সরকারি কৌঁসুলি রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় জানান, পুলিশি হেফাজতে মনোজ অপরাধ স্বীকার করেছেন। গণেশ নামে স্কুলের আর এক কর্মীও জড়িত বলে কবুল করেছেন ধৃত। গণেশকে ধরতে পুলিশি হেফাজতে রেখে মনোজকে জেরা করা জরুরি। অভিযুক্তের আইনজীবী সেলিম রহমান বিচারকের কাছে হাতজো়ড় করে বলেন, ‘‘স্যার, পুলিশ হয়তো কোনও চাপে পড়ে মনোজকে ধরেছে। আপনি কোনও চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না।’’ বিচারক রমেশ সিংহ ধৃতকে সাত দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

স্কুলের জিএম এস কে সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে গণেশ নামে কেউ নেই।’’ প্রিন্সিপাল ও তাঁর বিরুদ্ধে অভিভাবকদের তোলা অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি। অভিভাবকদের দাবি, ‘‘স্কুলে গণেশ নামে এক কর্মী আছে।’’ প্রিন্সিপালকে তাঁর মোবাইলে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। এসএমএস-এরও জবাব মেলেনি।

আদালত সূত্রের খবর, ১৫ সেপ্টেম্বর ওই ঘটনার অভিযোগ দায়ের করা হয়। শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষাও হয়। তার গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে। স্কুলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও পরীক্ষা করা হয়। তবে আদালতে পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি ওই শিশুকে স্কুলের কয়েক জন শিক্ষক ও অ-শিক্ষক কর্মীর ছবি দেখানো হয়। শিশুটি স্কুলের পিয়ন মনোজকে শনাক্ত করার পরে সোমবার রাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE