Advertisement
E-Paper

ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে গঙ্গায় তলিয়ে গেলেন জাদুকর

বারবার মাঝগঙ্গায় ম্যাজিক দেখানোর অনুমতিই বা কী ভাবে মিলছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৯ ০১:১৩
পারফর্ম করার উদ্দেশ্যে গঙ্গায় ফেলা হল চঞ্চলকে।

পারফর্ম করার উদ্দেশ্যে গঙ্গায় ফেলা হল চঞ্চলকে।

বিপজ্জনক ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে গঙ্গায় তলিয়ে গেলেন এক জাদুকর। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের বাসিন্দা চঞ্চল লাহিড়ী নামে ওই ব্যক্তিকে রবিবার রাত পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। মাঝগঙ্গায় এ ভাবে ম্যাজিক দেখানোর অনুমতিই বা কী ভাবে মিলল সে বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) জাভেদ শামিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘লঞ্চের উপরে ম্যাজিক দেখানোর পুলিশি অনুমতি নিয়েছিলেন চঞ্চলবাবু। কিন্তু কখনওই জলে নেমে ম্যাজিক দেখানোর অনুমতি নেননি। পুরো ঘটনাটির ডিসি (বন্দর)-কে দিয়ে তদন্ত করানো হচ্ছে।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, রবিবার সাড়ে ১২টা নাগাদ বাবুঘাট থেকে লঞ্চে ওঠেন চঞ্চল। ওই লঞ্চে চঞ্চল ছাড়াও তাঁর সংস্থার কর্মীরাও ছিলেন। হাওড়া সেতুর নীচে মাঝগঙ্গা পর্যন্ত যায় লঞ্চটি। গঙ্গায় স্টান্ট দেখার জন্য আর একটি লঞ্চে অনেক দর্শকও ছিলেন। অতিথি হিসাবে ছিলেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারও। যে ম্যাজিক চঞ্চল দেখাতে যাচ্ছিলেন তা বেশ ঝুঁকিবহুল, জটিলও। কথা ছিল, লঞ্চ মাঝগঙ্গায় আসা মাত্রই জাদুকরের হাত, পা বেঁধে দেওয়া হবে। এর পরে ক্রেনে করে তাঁকে লঞ্চ থেকে ফেলা দেওয়া হবে। তাঁর জাদুবিদ্যার বলে তিনি গঙ্গা থেকে হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে নিজেই জল থেকে উপরে উঠে আসবেন। সেই মতো ফেয়ারলি প্লেস ঘাট থেকে রবীন্দ্র সেতুর আঠাশ নম্বর স্তম্ভের নীচে মাঝগঙ্গায় লঞ্চ নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে ওই ক্রেন থেকে তাঁকে গঙ্গায় ছুড়ে ফেলা হয়।

কিছু ক্ষণ পরে তাঁর উঠে আসার কথা ছিল। কিন্তু বেশ খানিকটা সময় পার হওয়ার পরেও চঞ্চলকে দেখতে না পেয়ে লঞ্চে থাকা দর্শকেরা ঘাবড়ে যান। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। ডুবুরি নামিয়ে বিকেল পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও তাঁকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এর আগেও চঞ্চল মাঝগঙ্গায় একই কায়দায় ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, ১৯৯৮, ২০০৬ এবং ২০১২ সালে একই কায়দায় মাঝগঙ্গায় ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন চঞ্চলবাবু। নিজেকে ‘ম্যানড্রেক’ পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

বারবার মাঝগঙ্গায় ম্যাজিক দেখানোর অনুমতিই বা কী ভাবে মিলছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

লালবাজার সূত্রের খবর, জাদুকর কলকাতা পুলিশের কাছে কেবল মাত্র লঞ্চের উপরে ম্যাজিক দেখানোর অনুমতি নিয়েছিলেন। এমনকি তাঁর লঞ্চ ঘাটের কাছাকাছি থাকবে বলেও লালবাজার থেকে ‘নো অবজেকশেন সার্টিফিকেট’ নিয়েছিলেন। ম্যাজিক দেখানোর সময়ে সুরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে তাঁর নিজস্ব ডুবুরি, লোকজন থাকবে বলেও পুলিশকে ‘এনওসি’তে জানিয়েছিলেন চঞ্চল। কিন্তু পুলিশের কাছে নেওয়া অনুমতির নির্দেশাবলী চঞ্চল পুরোপুরি ভেঙেছেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) জাভেদ শামিম।

এ দিন চঞ্চলকে ক্রেনে করে গঙ্গায় ফেলার সময়ে পাশের লঞ্চে অতিথি হিসাবে উপস্থিত কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘ম্যাজিক শোয়ে আমি আমন্ত্রিত থাকায় সেখানে গিয়েছিলাম। তবে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে পুলিশের তরফে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

লঞ্চে বসেই কাকাকে গঙ্গায় নেমে যেতে দেখেছিলেন চঞ্চলের ভাইপো রুদ্রপ্রসাদ লাহিড়ী। তাঁর কথায়, ‘‘কাকা আগেও একাধিক বার এই ধরনের ম্যাজিক দেখিয়েছেন। এ দিন গঙ্গায় নামার পরে কাকার হাত-পা উঠতেও দেখা গিয়েছে। এটাকে পুরোপুরি ফ্লপ শো বলা যায় না।’’ পুলিশের কাছে নেওয়া অনুমতি মানা হয়নি কেন? এ প্রসঙ্গে রুদ্রের দাবি, ‘‘কাকাই যা করার করেছেন। আমরা কিছু জানি না।’’

প্রশ্ন উঠেছে, এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ ফেয়ারলি প্লেস ঘাট থেকে ক্রেন ও লঞ্চে করে মাঝগঙ্গা পর্যন্ত গেলেও ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা উত্তর বন্দর থানার পুলিশ এবং রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের চোখে তা পড়ল না কেন?

এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (১) জাভেদ শামিম বলেন, ‘‘ঘটনার সময়ে উপস্থিত থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’এই ঘটনায় গাফিলতির দায়ে ওই সংস্থার অন্যান্য প্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলেও তিনি জানান।

Magician River Police Ganges
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy