Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বোনাস না পেয়ে থানায় পরিচারিকা

অভিযোগ, প্রথম দিকে পুলিশ বিষয়টিকে বিশেষ আমল দেয়নি। কিন্তু ‘পশ্চিমবঙ্গ গৃহপরিচারিকা সমিতি’ শান্তিদেবীর পাশে দাঁড়ানোর পরে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা এ বার একটু নড়েচড়ে বসেছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৫২
Share: Save:

গত এক বছর ধরে বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেছেন। তবুও পুজোর মুখে বেতন এবং বোনাস না দিয়েই কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছিলেন গৃহকর্তা। আর তাতেই রোখ চেপে যায় ঢাকুরিয়ার পঞ্চাননতলার বছর ছাপ্পান্নর শান্তি চৌধুরীর। গত তিরিশ বছর অন্যের বাড়ি বাসন মেজে, কাপড় কেচেই দিন কেটেছে তাঁর। তাই এ বার নিজের প্রাপ্য আদায় বুঝে নিতে গত ৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র সরোবর থানায় গিয়ে হাজির হন তিনি। ওই গৃহকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করে শান্তিদেবীর দাবি, তাঁর প্রাপ্য থেকে তাঁকে অন্যায় ভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

অভিযোগ, প্রথম দিকে পুলিশ বিষয়টিকে বিশেষ আমল দেয়নি। কিন্তু ‘পশ্চিমবঙ্গ গৃহপরিচারিকা সমিতি’ শান্তিদেবীর পাশে দাঁড়ানোর পরে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা এ বার একটু নড়েচড়ে বসেছেন। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে দিন কুড়ি কেটে গেলেও যখন অভিযুক্তকে ডেকে পাঠায়নি থানা, তখন গত ২৬ সেপ্টেম্বর সরাসরি ডিসি (দক্ষিণ-পশ্চিম) অজয় প্রসাদের কাছে অভিযোগ জমা দেন শান্তিদেবী ও সংগঠনের অন্য সদস্যেরা। তাঁদের অভিযোগ, পুজোর আগে বোনাস যাতে দিতে না হয়, সে জন্য নানা অজুহাতে পরিচারিকাদের ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। একই দিনে ফের অভিযোগপত্র জমা দেন রবীন্দ্র সরোবর থানায়।

কেন থানায় গেলেন? শান্তিদেবী বলছেন, ‘‘কেয়াতলার ওই গৃহকর্তা মাইনে আর বোনাস চাইলে দিতে চাননি। তখনই আমার ভিতরটা কেমন যেন ফুঁসে উঠল। জানি আমাদের জন্য আইন নেই। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হয়। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’

সমিতির সদস্য স্বপ্না ত্রিপাঠী, বিভা নস্করেরা জানাচ্ছেন, ২০১৮ সালের ২৩ মে তাঁদের সমিতি ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন পায়। এ রাজ্যে এটিই পরিচারিকাদের একমাত্র ট্রেড ইউনিয়ন, যার সদস্যসংখ্যা প্রায় সাড়ে ন’হাজার। কিন্তু একাধিক বার শ্রম দফতরে ধর্না দিলেও পরিচারিকাদের অধিকারে কোনও আইন তৈরি হয়নি। অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, ওড়িশায় পরিচারিকাদের ন্যূনতম মজুরি, কাজের সময় অনুযায়ী বেতন, ছুটি— সব নির্দিষ্ট থাকলেও এ রাজ্যে তেমন ব্যবস্থা নেই। ‘‘এর ফলে বঞ্চনা আর শোষণেরও শেষ নেই। যখন ইচ্ছা কাজ থেকে ছাড়ানো হচ্ছে, বেতন কাটা হচ্ছে, বোনাস আটকানো হচ্ছে, বাথরুম ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না, এমনকি চোর বদনামও দেওয়া হচ্ছে’’—বলছেন স্বপ্না।

এ ব্যাপারে ডিসি (দক্ষিণ-পশ্চিম) অজয় প্রসাদ বলেন, ‘‘পরিচারিকাদের এই বিষয়গুলি মূলত ‘সিভিল ডিসপিউট।’ এখানে পুলিশের ভূমিকা সীমিত। তা-ও শান্তিদেবীর বিষয়টি থানাকে দেখতে বলা হয়েছে।’’ এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্র সরোবর থানার এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, পরিচারিকাদের সঙ্গে মালিক পক্ষের মৌখিক চুক্তি হয়। তাই পুলিশ শুধু দু’পক্ষকে ডেকে মিটমাট করানোর চেষ্টা করতে পারে। তিনি বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের সঙ্গে যত বারই যোগাযোগ করা হয়েছে, তত বার জানানো হয়েছে যে তিনি বাড়ি নেই। আমরাও এলাকার পুজোর ব্যবস্থা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এ বার বিষয়টি মেটানোর চেষ্টা করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Maid Durga Puja 2019 Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE