Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সাধারণ আদালতে বিচার নাবালকের

দিল্লিতে ২০১২-র নির্ভয়া কাণ্ডের জেরে ২০০০-এর জুভেনাইল জাস্টিস (কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অব চিলড্রেন) অ্যাক্ট পাল্টে ২০১৫-তে আনা হয় নতুন আইন।

নিউ আলিপুরের বাড়িতে নিহত মলয় মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

নিউ আলিপুরের বাড়িতে নিহত মলয় মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৪
Share: Save:

ঘটনা যখনকার, তখন তার বয়স ছিল ১৭ বছর ৬ মাস ৪ দিন। অর্থাৎ, সে ছিল নাবালক। কিন্তু নিউ আলিপুরের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার মলয় মুখোপাধ্যায়কে হত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত সেই সুরজ মোল্লাকে সাবালক হিসেবে গণ্য করেই সাধারণ আদালতে তার বিচার হবে। এমনটাই জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড (জেজেবি) সম্প্রতি জানিয়েছে বলে আলিপুর আদালত সূত্রের খবর। গত ৬ অগস্ট নিউ আলিপুরের ওই অশীতিপর বৃদ্ধ খুন হন। কলকাতায় এই প্রথম কোনও নাবালক অভিযুক্তকে সাবালক হিসেবে গণ্য করে তার বিচার জেজেবি-র বাইরে সাধারণ আদালতে হবে।

দিল্লিতে ২০১২-র নির্ভয়া কাণ্ডের জেরে ২০০০-এর জুভেনাইল জাস্টিস (কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অব চিলড্রেন) অ্যাক্ট পাল্টে ২০১৫-তে আনা হয় নতুন আইন। যেখানে বলা হয়েছে, অভিযুক্তের বয়স ১৬ বছর বা তার বেশি হলে এবং যে ঘটনায় সে অভিযুক্ত, সেই অপরাধ করার পক্ষে সে মানসিক ও শারীরিক ভাবে সক্ষম, এমনটা প্রাথমিক ভাবে বোঝা গেলে ও কৃতকর্মের পরিণাম সম্পর্কে সে ওয়াকিবহাল ছিল বলে জানা গেলে তাকে সাবালক হিসেবে গণ্য করে তার বিচার সাধারণ আদালতে হবে। কুলপির সুরজ মোল্লার ক্ষেত্রে এই শহরে নতুন আইন প্রথম বার প্রয়োগ করা হল বলে আদালত সূত্রের খবর।

সুরজকে যাতে সাবালক হিসেবে গণ্য করে বিচার হয়, জেজেবি-তে সেই আবেদন জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা তিন বছরের কারাদণ্ড।
আর খুনের অপরাধ ‘চিলড্রেনস কোর্ট’-এ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাবাস।

জেজেবি-র পর্যবেক্ষণ: প্রথমত, অপরাধের সময়ে সুরজের বয়স ছিল ১৬ বছরের বেশি। দ্বিতীয়ত, ওই রকম অপরাধ করার জন্য সে শারীরিক ভাবে সক্ষম। তৃতীয়ত, যে অপরাধ করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠেছে, তার পরিণাম সম্পর্কেও সুরজ সম্যক ওয়াকিবহাল ছিল। সুরজের মানসিক দিকটি খতিয়ে দেখতে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড এসএসকেএম হাসপাতালের সুপার নিযুক্ত মনোবিদদের মতামত নেয়। তাঁদের রিপোর্ট ও অন্যান্য তথ্যপ্রমাণ বিবেচনা করে জেজেবি সুরজের বিরুদ্ধে মামলাটি আলিপুরের প্রথম অতিরিক্ত জেলা বিচারকের আদালতে স্থানান্তরিত করেছে। ওই হত্যার মামলা এখন আলিপুর আদালতে বিচারাধীন। সেখানকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা জজের আদালতই নির্দিষ্ট আছে ‘চিলড্রেনস কোর্ট’ হিসেবে, যেখানে সাবালক হিসেবে গণ্য হওয়া নাবালক অভিযুক্তদের বিচার করা হয়।

সুরজ মোল্লার মানসিক অবস্থা বুঝতে জেজেবি মনোবিদ নিয়োগের জন্য বলেছিল এসএসকেএম হাসপাতালের সুপারকে। সুরজের মানসিক অবস্থা খতিয়ে দেখে ইনস্টিটিউট অব ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াট্রি-র ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিদিতা ভট্টাটার্য ও অমৃতা মিত্র তাঁদের রিপোর্টে জানান, অভিযুক্ত স্পষ্ট ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছে। রিপোর্টে বলা হয়, ‘সে সব প্রশ্ন বুঝে যথেষ্ট ঠিকঠাক উত্তর দিয়েছে। সে যা করেছে, পরিণামও তার জানা ছিল।’

আলিপুর আদালত জানায়, জেজেবি বলেছে, সুরজের বিরুদ্ধে যে অপরাধ করার অভিযোগ উঠেছে, সেটা চকিতে ঘটে যাওয়া কোনও ঘটনা নয়। তা আত্মরক্ষার জন্যও করা হয়নি। বরং তা একেবারেই সুপরিকল্পিত। সুরজ ও তার সাবালক সঙ্গী জাকির হোসেন মোল্লা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে চুরি করতে মলয় মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে ঢুকেছিল ও কেউ বাধা দিলে তাকে শেষ করারই মতলব ছিল তাদের।

দিল্লিতে ২০১২-র নির্ভয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের এক অপরাধী ছিল নাবালক। তাই তার বিচার হয় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড-এ, শাস্তি হয় মাত্র তিন বছরের কারাবাস। বাকি অপরাধীদের ফাঁসি দেওয়ার আদেশ দেয় প্রথমে দিল্লি হাইকোর্ট, পরে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু নাবালক অপরাধীর লঘু দণ্ড নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তখন আদালত জানায়, আইন বদল আবশ্যক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Justice
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE