Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উদ্ধারকাজে নজির অ্যাম্বুল্যান্স চালকের

বিশেষ কোনও হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত নন সমীর। নিজের অ্যাম্বুল্যান্সে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে রোগীদের পৌঁছে দেওয়াই তাঁর কাজ। সেতু ভাঙার পরেই সঙ্গী শঙ্করকে নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে যান সমীর।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শুভাশিস ঘটক ও তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৬
Share: Save:

সেতুভঙ্গের খবরটা শোনার পরে আর স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেননি তিনি। যদি কোনও ভাবে সাহায্য করতে পারেন, সে-কথা ভেবে মঙ্গলবার বিকেলে মাঝেরহাট সেতুতে ছুটে গিয়েছিলেন মধ্যবয়সি অ্যাম্বুল্যান্সচালক সমীর সাউ। উদ্ধারকাজে হাত লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক আহতদের পৌঁছে দিয়েছেন একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে।

বিশেষ কোনও হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত নন সমীর। নিজের অ্যাম্বুল্যান্সে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে রোগীদের পৌঁছে দেওয়াই তাঁর কাজ। সেতু ভাঙার পরেই সঙ্গী শঙ্করকে নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে যান সমীর। বুধবার হাসপাতাল-চত্বরে দাঁড়িয়ে সমীর বলেন, ‘‘তখনও পুলিশ বা অন্য সংস্থার অ্যাম্বুল্যান্স আসেনি। এক ট্রাফিক পুলিশকর্মী আমাকে একটি গাড়ির সামনে নিয়ে যান। দেখি, পিছনের আসনে এক জন মাথা ঝুঁকিয়ে বসে আছেন। তাঁকে পাঁজাকোলা করে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে ছুটলাম হাসপাতালে।’’ তার পরে অ্যাম্বুল্যান্সে আহতদের নিয়ে সমানে যাওয়া-আসা করে গিয়েছেন সমীর।

ওই হাসপাতালের এক কর্তা জানান, গুরুতর আহত ন’জনের মধ্যে পাঁচ জনকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিলেন সমীর। তাঁদের মধ্যে তিন জন এখনও আইসিইউয়ে ভর্তি।

স্থানীয় যুবকদের সহায়তায় হাসপাতালে পৌঁছন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী প্রান্তিকা গোস্বামী। কী ভাবে পড়ে গেলেন? বলতে পারেননি তিনি। এক সময় বললেন, ‘‘ব্রিজ ভেঙে পড়ছে বলে বাস-কন্ডাক্টর চিৎকার করছিলেন। আর কিছু মনে নেই। বাড়ি যাব, আমি ঠিক আছি।’’ মনের ক্ষতটা গভীর। তাই প্রান্তিকার এমন প্রতিক্রিয়া বলে জানান চিকিৎসকেরা। বুধবার তাঁর সিটি স্ক্যান হয়েছে। প্রান্তিকার গোড়ালির উপরে চোট আছে। ‘ট্রমা’ কাটাতে প্রান্তিকার নিউরোথেরাপির ব্যবস্থা হয়েছে।

আরও পড়ুন: সেতু গড়েছিল পূর্ত দফতরই

শ্বশুর নজরুল মোল্লা (৬৬)-কে মোটরবাইকের বসিয়ে মহেশতলা থেকে এসএসকেএমে আসছিলেন হাফিজুল রহমান। ব্রেন স্ট্রোক নিয়ে ভর্তি থাকা নজরুলের দাদাকে দেখতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সেই নজরুল এখন নিজেই আইটিইউ-এ ভর্তি। তাঁর বাঁ হাঁটুর মালাইচাকি ঘুরে গিয়েছে। হাড় ভেঙেছে পাঁজরের। হাফিজুল বলেন, ‘‘আচমকা দেখলাম ব্রিজটা খাদে পড়ে যাচ্ছে। গড়িয়ে যাচ্ছে গাড়িগুলো। কেন হচ্ছে, বোঝার আগে বিরাট ঝাঁকুনি আর প্রবল চিৎকার। বেঁচে আছি, সেটাই তো অনেক।’’ এ দিন এসএসকেএমে আহতদের দেখতে যান স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE