ডেঙ্গি মাথাচাড়া দেওয়ার পাশাপাশি কলকাতায় হানা দিয়েছে ম্যালেরিয়া। ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়া তো ছড়াচ্ছেই। বন্দর এলাকা, চেতলা-সহ দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার রোগীও মিলেছে। বন্দর এলাকার এক নার্সিংহোমে সম্প্রতি সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া নিয়ে এক জন চিকিৎসাধীন ছিলেন বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
গত কয়েক বছর কলকাতায় ম্যালেরিয়া তেমন দাঁত বসায়নি। তাই এর সংক্রমণ নিয়ে ঢিলেঢালা মনোভাব নিয়েছিল পুরসভা। বলা হয়েছিল, ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস ইজিপ্টাইয়ের বাড়াবাড়িতে পালিয়েছে ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই। কিন্তু চেতলায় ওই রোগীর রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণু মেলায় এটা স্পষ্ট, বংশবিস্তার করে চলেছে স্টিফেনসাই মশারাও।
এডিস ইজিপ্টাই এবং স্টিফেনসাই— উভয়েরই ডিম পাড়ার অনুকূল জায়গা জমে থাকা পরিষ্কার জল। তবে স্টিফেনসাই কামড়ায় রাতে। এক পরজীবী বিশেষজ্ঞের মন্তব্য, কীটনাশকের ব্যবহারে স্টিফেনসাই মশারা কিছু সময় আত্মগোপন করেছিল। কিন্তু নতুন প্রজন্মের জীবাণুরা তাতে ঘায়েল হচ্ছে না বলেই মনে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আরও বৃষ্টির ভয় দেখাচ্ছে ঘূর্ণাবর্ত
বেঁচে থাকার তাগিদে ম্যালেরিয়ার জীবাণুও চরিত্র বদলাচ্ছে বলে মনে করছেন পরজীবী বিজ্ঞানীদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, যে ওষুধ দিয়ে এখন তাদের ঘায়েল করার চেষ্টা হচ্ছে, সেই ওযুধে দমিয়ে রাখার ক্ষমতা নিয়ে প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স এবং ফ্যালসিপেরামের নতুন প্রজন্মের জীবাণুরা ফিরতে পারে। পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি চিকিৎসার ওষুধ নেই। কিন্তু ম্যালেরিয়ার নির্দিষ্ট ওষুধ আছে। তাই ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে রক্ত পরীক্ষা হলে ভয়ের কিছু নেই।
পতঙ্গবিদেরা বলছেন, গত তিন দিন ধরে সূর্য উঠছে না, ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। এই আবহাওয়াই স্টিফেনসাই মশার বংশবিস্তারের আদর্শ। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে এখানে-ওখানে তৈরি হয়েছে পরিষ্কার জলের আধার। সেখানে ডিম পাড়ে মশা। আর অতিরিক্ত আর্দ্রতায় মশাদের ডিম পাড়ার হারও বেড়ে য়ায়। অন্য দিকে বাইরে বৃষ্টি থাকায় পূর্ণবয়স্ক মশারা ঘরের ভিতরে আশ্রয়ের জন্য চলে আসে। তাই এই সময়টায় মশার কামড়ানোর হারও বেড়ে যায় বলে অনেক পতঙ্গবিদের মত। এই সময়টায় তাই অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।