Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Mamata Banerjee

রেলিং-এ, গাছের ডালে তৃণমূল কর্মীরা, রাজনীতির ঢেউ হাসপাতাল চত্বরে

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় উডবান ওয়ার্ডের সামনে পৌঁছতেই শুরু হয়ে গেল বিজেপি-বিরোধী স্লোগান। সঙ্গে ‘মমতা ব্যানার্জি জ়িন্দাবাদও’!

এসএসকেএম হাসপাতালে বিক্ষোভ তৃণমূল কর্মীদের।

এসএসকেএম হাসপাতালে বিক্ষোভ তৃণমূল কর্মীদের। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২১ ০৫:৩৭
Share: Save:

ভোটের রাজনীতির উত্তেজনার ঢেউ এসে পড়ল এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে! আহত মুখ্যমন্ত্রীকে তখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। উডবার্ন ওয়ার্ডের সামনে ‘কর্ডন’ তৈরি করেছে পুলিশ। তার বাইরে রেলিংয়ের উপরে, গাছের ডালে চড়ে বসেছেন তৃণমূল কর্মীরা। সেই ভিড়ে রয়েছেন তৃণমূল সমর্থিত জুনিয়র ডাক্তার সংগঠনের সদস্যরাও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় উডবান ওয়ার্ডের সামনে পৌঁছতেই শুরু হয়ে গেল বিজেপি-বিরোধী স্লোগান। সঙ্গে ‘মমতা ব্যানার্জি জ়িন্দাবাদও’!

পুলিশ তাঁদের কোনও মতে নিরস্ত করলে অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের সামনের গেটে ফের স্লোগান শুরু হয়। সে সময় পৌঁছন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তাঁর বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল সমর্থকেরা। ভিড় থেকে ভেসে আসে, ‘বিজেপির দালাল রাজ্যপাল গো ব্যাক’ স্লোগানও। পৌনে দশটা নাগাদ রাজ্যপাল বেরনোর সময়েও তাঁর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তৃণমূল সমর্থক চিকিৎসকেরা। পুলিশ কোনও মতে রাজ্যপালের গাড়িকে বের করে দেয়। উডবার্ন ওয়ার্ডে ভিআইপি ওয়ার্ডে তখন মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসায় ব্যস্ত বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসক দল।

সূত্রের দাবি, পূর্ব মেদিনীপুরে নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী আহত হওয়ার পরেই খবর এসেছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসা হবে একমাত্র সরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। সেই মতো শুরু হয় তৎপরতা। অর্থোপেডিক বিভাগের মুকুল ভট্টাচার্য, কার্ডিয়োলজির সরোজ মণ্ডল, সার্জারির দীপ্তেন্দ্র সরকার, মেডিসিনের সৌমিত্র ঘোষ এবং এন্ডোক্রিনোলজির সুজয় ঘোষ ছাড়াও নিউরোসার্জারি এবং অ্যানাস্থেশিয়ার চিকিৎসকদের নিয়ে দল গঠন করা হয়। এসএসকেএম হাসপাতালের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও উপস্থিত হন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম-সহ প্রশাসনিক কর্তারা। মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, সাংসদ শান্তনু সেনের মতো ডাক্তাররাও হাজির হন।

মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছনোর আগেই একটি হুইল চেয়ার স্যানিটাইজ় করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছনোর পরে দেখা যায়, তাঁকে চেয়ারে বসিয়ে নেওয়া যাবে না। পা যথেষ্ট ফুলে রয়েছে। স্ট্রেচারে শুইয়েই তাঁকে ভিভিআইপি ওয়ার্ডের সাড়ে বারো নম্বর কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই পোর্টেবল মেশিনে পায়ের এক্স-রে হয়েছে বলে খবর।
মুখ্যমন্ত্রী আহত হওয়ার পরে এসএসকেএম হাসপাতালে যে ভাবে রাজনীতির আঁচ ছড়িয়েছে তা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের মতে, হাসপাতালে প্রচুর রোগী থাকেন। সেখানে এমন চিৎকার-চেঁচামেচি অন্য রোগীদের সমস্যায় ফেলতে পারে। বিক্ষোভকারীদের থামাতে দুই মন্ত্রী সুজিত বসু এবং অরূপ বিশ্বাসকে হ্যান্ডমাইকে বারবার বলতে হয়েছে যে, এটা হাসপাতাল চত্বর। এখানে চেঁচামেচি করা উচিত নয়।

তবে হাসপাতালে উপস্থিত তৃণমূলকর্মীদের অনেকেই সেই যুক্তি মানতে নারাজ। বরং মুখ্যমন্ত্রীর উপরে ‘হামলা’ কেন হল সেই প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ভারতী সিংহ নামে এক মহিলা। তিনি জানান, দেড় দশক আগে এগরায় পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। আপাতত এসএসকেএম-এর কর্মী ভাইয়ের আবাসনে থাকেন। ঘটনার পর থেকেই এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বললেন, ‘‘দিদি আমাদের এলাকায় কত কাজ করেছেন। তার পরেও এমন হামলা কেন?’’

রাত যত বেড়েছে, তত ‘রাজনৈতিক আনাগোনা’ও বেড়েছে এসএসকেএমে। সাংসদ সৌগত রায়, মন্ত্রী তাপস রায় প্রমুখ যেমন এসেছেন, তেমনই দেখা গিয়েছে প্রার্থী হিসেবে সদ্য নাম ঘোষণা হওয়া বেশ কিছু জনকে। যার মধ্যে রয়েছেন রাজ চক্রবর্তী, জুন মালিয়াও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee TMC SSKM Hospital Nandigram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE