পোস্তার জগদ্ধাত্রী পুজোয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ
গত বছর পোস্তায় জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে অসমাপ্ত বিবেকানন্দ উড়ালপুলের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে সেই নির্মীয়মাণ উড়ালপুল ভেঙে পড়ে। মৃত্যু হয় ২১ জনের। সেই একই পুজোর উদ্বোধনী মঞ্চে ওই দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করে এ বার মমতা উদ্বেগ প্রকাশ করলেন এলাকার বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে। জানালেন বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে নতুন আইন অনুযায়ী তৈরি করা হলে বহু সুবিধাও পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে পোস্তা এলাকার বাজার ও পার্কিং ব্যবস্থা উন্নত করে যানজট কমানোর নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার পোস্তা বাজার ব্যবসায়ী অ্যাসোসিয়েশনের জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে পোস্তা এলাকা নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনার কথা জানান মমতা। কী ভাবে পোস্তার পুরনো বাড়িগুলি সংস্কার করা যায় এবং এলাকার যান চলাচল ব্যবস্থা আরও গতিময় রাখা যাবে, তা ঠিক করতে তিন মাসের মধ্যে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে বলেছেন তিনি। ঘিঞ্জি এই বিশাল বাজার এলাকায় যানজটের সমস্যা যে রয়েছে, তার উল্লেখ করে নতুন ভাবে বাজার ও এলাকার পার্কিং ব্যবস্থা উন্নত করার নির্দেশও দিয়েছেন। এ জন্য কলকাতা পুরসভা, পুলিশ এবং পোস্তা বাজারের ব্যবসায়ীদের কয়েক জন প্রতিনিধিকে নিয়ে কমিটি গড়তে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন পোস্তার সংস্কার কাজের নির্দেশ দেওয়ার মুখবন্ধ হিসেবে উড়ালপুল দুর্ঘটনার কথা তোলেন মমতা। অল্প কথায় বলেন, ‘‘পোস্তা খুব ঘিঞ্জি এলাকা। কখনো গাড়ি ঢোকে, কখনও ঢোকে না। এখানে একটা উড়ালপুলের ত্রুটি ধরা পড়ল। যদিও কাজটা আমরা আসার দু’বছর আগে শুরু হয়েছিল। উড়ালপুলের একটা অংশ ভেঙে কয়েক জন মারাও গিয়েছেন।’’ এ বার উড়ালপুলের ভবিষ্যৎ কী হবে, ভেঙে ফেলা হবে, নাকি নতুন করে গড়া— সে সব কিছুই অবশ্য এ দিন স্পষ্ট করেননি মুখ্যমন্ত্রী।
এর পরেই পোস্তার পুরনো বাড়িগুলো মেরামত করতে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধ করেন মমতা। কলকাতা পুরসভার তালিকায় থাকা ওই এলাকার বিপজ্জনক বাড়িগুলি দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই জায়গাটা ঢেলে সাজতে হবে। পুরনো বাড়ি ভেঙে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য আপনারা নিজের নিজের বাড়ি সারান। এর জন্য কলকাতা পুরসভা প্রয়োজনীয় সাহায্য করবে।’’ এমনকী যে বাড়িগুলিতে মালিক ও ভাড়াটের সমস্যা রয়েছে, সেখানে দু’জনেই একসঙ্গে বাড়ি মেরামত করতে পারবেন বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে পাশে দাঁড় করিয়ে মমতা বলেন, ‘‘বাড়িমালিক ও ভাড়াটে একসঙ্গে যাতে বাড়ি ভেঙে নতুন করে গড়তে পারেন, তার জন্য বিধানসভায় আইন পাশ হয়েছে। ফলে আপনারা বাড়ি সারালে সরকার সব রকম সাহায্য করবে।’’ ব্যস্ত এলাকায় এর জেরে কোনও রকম বিপর্যয় এড়াতে নিয়মিত নজরদারি ও মেরামতির কাজ চালাতে হবে বলে মমতা জানান। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এই এলাকা কী ভাবে ভাল রাখা যায়, তা নিয়মিত দেখতে হবে। না হলে আজ এটা ভাঙবে, কাল ওটা ভাঙবে!’’
শুধু বিপজ্জনক বাড়ি মেরামতি নয়, পোস্তার ব্যবসায়ীদেরও মুখ্যমন্ত্রী আধুনিক মানের বাজার তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ এবং কলকাতা ও হাওড়া পুরসভার পাশাপাশি পোস্তা ব্যবসায়ীদের ১০ জন প্রতিনিধিকে নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক-সাংসদদের কথা বলে ঠিক করতে বলেছেন, কী ভাবে গোছানো বাজার তৈরি করা যায়। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘বড় ও ভাল একটা বাজার তৈরি করতে হবে। সরকারও সাহায্য করবে। তবে বেশি টাকা দিতে পারব না। যেটুকু আছে, তা দিয়ে দুই বা তিন তারা হোটেলের মতো বাজার তৈরি করতে পারব।’’ পার্কিং সমস্যা মেটাতেও দ্রুত ভাবনাচিন্তার পরামর্শ দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘প্রতিদিন অনেক ট্রাক ঢোকে এখানে। তার জন্য আলাদা রাস্তা করা যেতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy