Advertisement
১৮ মে ২০২৪

কাবুলিওয়ালার বন্ধু কল্লোলিনী

কাবুল থেকে কলকাতা। ছেলের জান বাঁচাতে মরিয়া বাবা পাড়ি দিলেন সেই পথ। খালেদ হোসেইনির ‘দি কাইট রানার’-এর চরিত্র নন তাঁরা। সেখানে প্রাণে বাঁচতে আমির ও তাঁর বাবা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ছেড়ে করাচি হয়ে মার্কিন মুলুকে পাড়ি দিয়েছিলেন।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০১
Share: Save:

কাবুল থেকে কলকাতা। ছেলের জান বাঁচাতে মরিয়া বাবা পাড়ি দিলেন সেই পথ।

খালেদ হোসেইনির ‘দি কাইট রানার’-এর চরিত্র নন তাঁরা। সেখানে প্রাণে বাঁচতে আমির ও তাঁর বাবা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ছেড়ে করাচি হয়ে মার্কিন মুলুকে পাড়ি দিয়েছিলেন। এখানে বছর ছাব্বিশের ছেলের প্রাণ বাঁচাতে মহম্মদ ওয়াজির চলে এসেছেন এ শহরে। করাচি ঘুরেই। তাঁর ছেলে আজিমের দেহে বাসা বেঁধেছে মারণরোগ। তিলোত্তমার আত্মীয়তায় আনন্দাশ্রু চিক চিক করছে তাঁদের চোখের কোণে।

কাবুলে বাড়ি মহম্মদ আজিমের। গত বছর ক্যানসার ধরা পড়ে। অস্ত্রোপচারও হয়। কিন্তু উন্নত কেমোথেরাপির ব্যবস্থা নেই সেখানে। প্রথমে ছেলেকে নিয়ে তাই করাচি পাড়ি দেন ওয়াজির। সেখানেও উন্নত পরিকাঠামো নেই। তাই টেস্টিকিউলার ক্যানসারে আক্রান্ত ছেলের চিকিৎসার জন্য মাস খানেক আগে ওয়াজির ভারতে আসেন।

প্রথমে দিল্লি, পরে ভেলোর যান। কোথাও চিকিৎসার সুযোগ পাননি। সব জায়গাতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল ‘ডেট’ পেতে কম করে মাস ছয়েক সময় লাগবে। ও দিকে কাবুলের চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, কেমোথেরাপি দ্রুত শুরু করতে হবে। একে চিকিৎসায় দেরি হচ্ছে, তার উপরে দীর্ঘ দিন ভিন্‌ দেশে থাকা-খাওয়ার খরচ চালানো, সব মিলিয়ে আতান্তরে পড়েন বাবা-ছেলে। শেষে সহযোগিতার হাত বাড়ায় কলকাতা।

কাবুলের একটি রেস্তোরাঁর মালিক ওয়াজির সাহেবের সঙ্গে এ শহরের ‘কাবুলিওয়ালা’-দের পরিচয় অনেক দিনের। যখন দিল্লি আর ভেলোর আশার আলো দেখাতে পারছিল না, তখন কলকাতার বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওয়াজির। তাঁদের থেকেই বেঙ্গল অঙ্কোলজি সেন্টারের সম্পর্কে জানতে পারেন তাঁরা। কাবুলিওয়ালা বন্ধুরা বলেন, কলকাতায় চলে আসতে। থাকা-খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

কলকাতায় এসে ওয়াজিরের যোগাযোগ হয় ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। রুবি জেনারেলে শুরু হয় আজিমের কেমোথেরাপি। গৌতমবাবু জানান, ঠিক মতো চিকিৎসা হলে টেস্টিকিউলার ক্যানসার সেরে যাওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা আছে। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘যে কোনও রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে তোলাই আমাদের কাজ। এই ছেলেটি অত দূর থেকে এসেছে। বিদেশে বেশি দিন থাকার হাজার ঝামেলা রয়েছে। তাই দ্রুত ওকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠানোর চেষ্টা করছি।’’ পুরো চিকিৎসার জন্য সময় লাগবে মাস চারেক। প্রথম কেমো নেওয়ার পরে রবিবার হাসপাতাল থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র আজিমকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বৌবাজারে ওয়াজিরের পরিচিত কাবুলিওয়ালাদের সঙ্গেই বাবা-ছেলে থাকবেন। ওয়াজির বলেন, ‘‘অন্য হাসপাতালগুলো সাফ জানিয়ে দিয়েছিল জায়গা হবে না। খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। কলকাতায় এতটা সাহায্য পাব ভাবতেই পারিনি।’’ এখন ছেলেকে সুস্থ করে ফেরার দিন গুনছেন। কলকাতা থেকে কাবুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kabul Kolkata Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE