Advertisement
E-Paper

দশ বছর পরে স্ত্রীর মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ

দীপকবাবুর অভিযোগ, ওই বছরের এপ্রিলে তিনি স্ত্রীকে ফের শ্রাবণীদেবীর কাছে নিয়ে গেলে ওই চিকিৎসক স্টেরয়েডের মাত্রা বাড়াতে থাকেন। ৩১ মে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় দীপাদেবীর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৯ ০১:০৭
—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

এক দশক আগে মৃত্যু হয়েছিল এক মহিলার। তাঁর স্বামীর অভিযোগ ছিল, তিন চিকিৎসক এবং একটি বেসরকারি হাসপাতালের গাফিলতিতেই মারা গিয়েছেন স্ত্রী। টানা দশ বছর লড়াই চালিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত থেকে স্ত্রীর মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণের নির্দেশ আদায় করেছেন তিনি। ক্রেতা সুরক্ষা আদালত জানিয়েছে, মোট ২৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন মৃতার স্বামী। এর মধ্যে দু’জন চিকিৎসক ৯ লক্ষ টাকা করে, তৃতীয় চিকিৎসক ২ লক্ষ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে। এ ছাড়াও, মামলা চালানোর খরচ হিসেবে যৌথ ভাবে তাঁরা মামলাকারীকে দেবেন আরও ২ লক্ষ টাকা।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার এমিরেটাস অধ্যাপক দীপক ঘোষ জানান, তাঁর স্ত্রী দীপা ঘোষ ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চর্মরোগে আক্রান্ত হন। তিনি দেখান চর্মরোগ চিকিৎসক শ্রাবণী ঘোষ জোহাকে। শ্রাবণীদেবী চর্মরোগের ওষুধ দেন এবং এক জন রিউম্যাটোলজিস্টকে দেখাতে বলেন। দীপকবাবু তাঁর পরিচিত এক প্রবীণ রিউম্যাটোলজিস্টের কাছে নিয়ে যান স্ত্রীকে। কিন্তু তিনি জানান, দীপাদেবীর চর্মরোগই হয়েছে। তাই চর্মরোগ চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দেন।

দীপকবাবুর অভিযোগ, ওই বছরের এপ্রিলে তিনি স্ত্রীকে ফের শ্রাবণীদেবীর কাছে নিয়ে গেলে ওই চিকিৎসক স্টেরয়েডের মাত্রা বাড়াতে থাকেন। ৩১ মে শ্বাসকষ্ট শুরু হয় দীপাদেবীর। ১ জুন তিনি দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় নামে এক মেডিসিনের চিকিৎসককে দেখান। কিন্তু অভিযোগ, দেবাশিসবাবু বিষয়টিকে যথোচিত গুরুত্ব দেননি। ৩ জুন দীপাদেবীর অবস্থার আরও অবনতি হলে তাঁকে যোধপুর পার্কের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসক সমররঞ্জন পালের অধীনে ভর্তি হন তিনি। দীপকবাবু অভিযোগে জানিয়েছেন, সমরবাবু যথাযথ রোগ নির্ণয় না-করেই চিকিৎসা করায় দীপাদেবীর অবস্থার আরও অবনতি হয়। তখন ইএম বাইপাসের এক হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরিত করার কথা বলে যোধপুর পার্কের হাসপাতালটি। কিন্তু বাইপাসের ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, দীপাদেবীকে স্থানান্তরিত করা সম্ভব নয়। ওই বছরের ১৫ জুন মারা যান দীপাদেবী।

দীপকবাবু জানান, এর পরেই তিনি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন। পাশাপাশি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করেছেন তিনি। ফৌজদারি মামলাটি আলিপুর আদালতের বিচারাধীন। ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে শ্রাবণীদেবীর কৌঁসুলির বক্তব্য ছিল, দীপাদেবীর একটি বিশেষ ধরনের অসুখ ছিল। তাঁর মক্কেল দীপাদেবীর রোগ নির্ণয় করে যথাযথ ওষুধ দিয়েছিলেন। দেবাশিসবাবুর আইনজীবী আদালতে জানান, রোগিণীকে বেশ কিছু পরীক্ষা করতে বলেছিলেন তাঁর মক্কেল। ১ জুন ওই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন ছিল না। অন্য দিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে সমররঞ্জনবাবুর আইনজীবী জানিয়েছেন, রোগ নির্ণয়ে যথাযথ পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং চিকিৎসা-পদ্ধতি নিয়ে অন্য চিকিৎসকেরাও সহমত ছিলেন। কিন্তু সেপসিসের জেরে ‘মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওর’ হয় রোগিণীর। চিকিৎসায় গাফিলতির দাবি অস্বীকার করে বক্তব্য পেশ করেন অভিযুক্ত হাসপাতালের আইনজীবীও।

আদালতের নির্দেশ নিয়ে শ্রাবণীদেবী মন্তব্য করতে চাননি। তবে দেবাশিসবাবু জানান, এই নির্দেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাওয়া হবে। সমররঞ্জনবাবুর বাড়ির ফোন বেজে গিয়েছে। চেম্বারে যোগাযোগ করা হলে তাঁর সচিব তাপস সেনগুপ্ত জানান, সমরবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের কৌঁসুলি বিদেশে রয়েছেন। তিনি ফিরলে কিছু বলা সম্ভব। দীপকবাবু বলেন, ‘‘আমি ক্ষতিপূরণের অঙ্ক বৃদ্ধির আর্জি জানিয়ে উচ্চতর আদালতে আবেদন করেছি।’’

Consumer Court Compensation Doctor Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy