Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Durga Puja 2023

বই কিনতে পুজোয় স্বেচ্ছাসেবক, বিস্মিত নগরপাল

মহালয়ার রাতে লেক টাউন মোড়ে ওই স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের অনেকেই কলেজ বা স্কুলের পড়ুয়া। ক্যানিং, বারুইপুরের মতো শহরতলি থেকে তাঁরা এসেছিলেন।

দক্ষিণ কলকাতার একটি মণ্ডপে জমায়েত।

দক্ষিণ কলকাতার একটি মণ্ডপে জমায়েত। ছবি: পিটিআই।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৩৮
Share: Save:

লেক টাউন মোড় এলাকার একটি বড় কলেবরের পুজোর ভিড় সামলাতে রীতিমতো কোমর কষতে হয়েছিল বিধাননগর পুলিশকে। জনস্রোত সামলাতে পুলিশের তরফে নামানো হয়েছিল প্রচুর কমবয়সি স্বেচ্ছাসেবককে। যাঁদের প্রত্যেকেই পুজোর ভিড় সামলে রোজগার করতে গিয়ে নিজেরাই আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি। এমনকি, খোদ বিধাননগরের নগরপাল গৌরব শর্মাও অবাক হয়েছেন জেনে যে, শুধুমাত্র বই কেনার খরচ জোগানোর জন্য এক ছাত্র স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে এসেছেনl

মহালয়ার রাতে লেক টাউন মোড়ে ওই স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁদের অনেকেই কলেজ বা স্কুলের পড়ুয়া। ক্যানিং, বারুইপুরের মতো শহরতলি থেকে তাঁরা এসেছিলেন। হলুদ টি-শার্ট পরে মহালয়ার সন্ধ্যা থেকে পুজোর প্রতিদিন তাঁরা দড়ি ধরে ভিড় সামলেছেন।

এঁদের সমবয়সিরা যখন পরিবার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে উৎসবমুখী জনস্রোতে শামিল, তখন এঁরা কিসের টানে সব ছেড়ে ভিড় সামলেছেন? বিধাননগর পুলিশ সূত্রের খবর, এই কাজের জন্য এঁদের সামান্য পারিশ্রমিক মেলে।

সমাজমাধ্যমে নিজের দেওয়ালে পোস্ট করে নগরপাল জানাচ্ছেন, এমনই এক স্বেচ্ছাসেবককে পুরস্কৃত করতে গিয়েছিলেন তিনি। বিশেষ কথা বলছিলেন না ওই যুবক। নগরপাল জানতে পারেন, দর্শন নিয়ে স্নাতক পাশ করেছেন যুবক। তখন তাঁকে তিনি প্রশ্ন করেন, বন্ধু কিংবা পরিবারের সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে না ঘুরে কেন তিনি স্বেচ্ছাসেবক হয়েছেন? উত্তরে যুবক জানান, তাঁর বাবা আনাজ বিক্রেতা। পরবর্তী পড়াশোনার জন্য বই কিনতে টাকার প্রয়োজন। নিজের দেওয়ালে নগরপাল লেখেন, উত্তর শুনে তিনি বাক্‌রুদ্ধ হয়ে যান। ওই পোস্টের নীচে অনেকে ছাত্রটিকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মন্তব্যও করেছেন।

বিধাননগর পুলিশ সূত্রের খবর, পুলিশের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করতে দুর্গাপুজোয় এসেছিলেন কমবয়সিরা। ওই স্বেচ্ছাসেবকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা এনসিসি করেন। এজেন্সির মাধ্যমে ওই কাজে এসেছেন। কারও বাবা চাষি, আবার কারও বাবা দিনমজুর। প্রশ্নটা হল, তবে কি পুলিশকে স্বেচ্ছায় সাহায্য করতে, না কি রোজগারের টানে নিজেদের উৎসবের উল্টো স্রোতে বেঁধেছেন ওঁরা?

সমাজতত্ত্ব নিয়ে কাজ করেন, এমন অনেকের মতে, উৎসবের আবহে নিজেদের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে রোজগার করার বয়স তাঁদের হয়নি। যদিও উৎসবকে ঘিরে রোজগারের যে আয়োজন হচ্ছে, তাকেও ইতিবাচক ইঙ্গিত বলে ধরে নিচ্ছেন অনেকে। সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র মনে করেন, এ ভাবে কৈশোরেই রোজগার করাটা ঠিক নয়। তবে তাঁর এ-ও মত, ‘‘এখন রোজগারই বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। এই ঘটনাকে ইতিবাচক ধরা উচিত।’’ কেন কমবয়সিদের দিয়ে কাজ করানো হল? পুলিশ আধিকারিকদের দাবি, অধিকাংশই স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসেন। অনেকে নিজেকে সামাজিক দায়বদ্ধতার সঙ্গে পরিচিত করাতে চান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2023 Kolkata Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE