Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধ ঘরে দম্পতির দেহ, পাশে কাঁদছে দুধের শিশু

পুলিশের অনুমান, ওই দম্পতি আত্মঘাতী হয়েছেন। যদিও সঙ্গীতার মা পম্পা জানার অভিযোগ, তাঁর মেয়ে ও জামাইকে খুন করা হয়েছে। দু’জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (‌জোন ২) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যার ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। ওই ঘরে বিষের ঝাঁঝালো গন্ধ মিলেছে। তবে কেউ অভিযোগ করলে নিশ্চয়ই তদন্ত হবে।’’  

অসহায়: বিয়ের দিন সুদীপ ও সঙ্গীতা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায় ও পারিবারিক অ্যালবাম থেকে

অসহায়: বিয়ের দিন সুদীপ ও সঙ্গীতা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায় ও পারিবারিক অ্যালবাম থেকে

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩১
Share: Save:

রাস্তায় আখের রসের গাড়ি ঘন্টি বাজাচ্ছে। ঘুম ভাঙতেই বন্ধ ঘরে বায়না জুড়েছে সাড়ে তিন বছরের শৌভিক। কিন্তু বায়না শুনবে কে? বারবার মা-বাবাকে ডাকাডাকি করেও তাঁদের কোনও সাড়া মেলেনি। কিছু পরে পাশের বাড়ি থেকে ছুটে আসেন শৌভিকের ঠাকুরমা গৌরী দেব। অনেক ডাকাডাকিতেও দরজা খোলেননি কেউ। শেষে দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয় শৌভিকের বাবার ঝুলন্ত দেহ। খাটের নীচ থেকে মেলে তার মায়ের দেহটি। শুক্রবার সকালে এমনই ঘটেছে বরাহনগরের নিরঞ্জন সেন পল্লিতে। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম সুদীপ দেব (২৮) এবং সঙ্গীতা দেব (১৯)।

পুলিশের অনুমান, ওই দম্পতি আত্মঘাতী হয়েছেন। যদিও সঙ্গীতার মা পম্পা জানার অভিযোগ, তাঁর মেয়ে ও জামাইকে খুন করা হয়েছে। দু’জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (‌জোন ২) আনন্দ রায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যার ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। ওই ঘরে বিষের ঝাঁঝালো গন্ধ মিলেছে। তবে কেউ অভিযোগ করলে নিশ্চয়ই তদন্ত হবে।’’

কিন্তু কেন খুন করা হবে ওই দম্পতিকে? পম্পাদেবীর জবাব, ‘‘কেউ হয়তো চায়নি যে, ওদের হাঁড়ি আলাদা হোক।’’ পরিবার সূত্রে খবর, সুদীপ ও সঙ্গীতার মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকত। তা নিয়েই বৃহস্পতিবার রাতে একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় অফিসে সালিশি সভা হয়েছিল। সেখানেই ঠিক হয়েছিল, এর পর থেকে সুদীপের বাড়ির সঙ্গে আর খাওয়াদাওয়া করবেন না ওই দম্পতি।

ঘুমিয়ে পড়েছে শৌভিক।

স্থানীয়েরা জানান, সুদীপ স্থানীয় একটি হোসিয়ারি কারখানায় কাজ করতেন। পাশের নারায়ণপল্লিতে বাড়ি সঙ্গীতার। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর ছয়েক আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে সুদীপকে বিয়ে করেন সঙ্গীতা। পম্পাদেবীর অভিযোগ, ‘‘বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে মেয়ের উপরে অত্যাচার চলত। ওকে ভাল করে খেতে দেওয়া হত না। প্রতিবাদ করলে সুদীপ ওকে মারধর করত।’’ বছরখানেক আগে সঙ্গীতা বরাহনগর থানায় বধূ নির্যাতনের অভিযোগ করেন। তার পরে সুদীপকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অনুরোধে অভিযোগ তুলে নেন সঙ্গীতা। কিন্তু অভিযোগ, তার পরেও বারবার অশান্তি লেগেই থাকত। তাই বৃহস্পতিবার দুই পরিবারের লোকেদের ডেকে সালিশি সভা বসে। সুদীপ-সঙ্গীতা থাকতেন আলাদা বাড়িতে, খেতেন সুদীপের বাড়িতে। সভায় ঠিক হয়, ওঁরা নিজেদের বাড়িতে রান্না করবেন।

শুক্রবার সুদীপের প্রতিবেশী সুস্মিতা ঘোষ বলেন, ‘‘সাড়ে দশটা নাগাদ শুনি, আখের রস খাবে বলে শৌভিক কাঁদছে। কিন্তু কেউ দরজা খুলছেন না। তখনই সুদীপের মাকে ডাকি।’’ এ দিন খুনের অভিযোগ নিয়ে অবশ্য কোনও কথা বলতে চাননি সুদীপের বাবা শঙ্কর দেব।

এ দিন বরাহনগরে গিয়ে দেখা গেল, বাড়িতে এত লোক দেখে ঘাবড়ে গিয়েছে শৌভিক। কেউ কোলে নিলেই সে বলছিল, ‘‘বাবা কাজে, মা ঘুমোচ্ছে।’’ দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামল। খেলতে খেলতে ঘুমিয়ে পড়ল সে। ঘর জুড়ে তখনও কান্নার রোল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Couple Married Child Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE