Advertisement
E-Paper

চোর-ডাকাত থাকবে কোথায়, লক-আপই তো নেই থানায়

থানা আছে, লক-আপ নেই! তা হলে দুষ্কৃতী ধরা পড়লে, আদালতে তোলার আগে তাকে কোথায় রাখা হয়? আদালত যখন অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়, তখন সেই অভিযুক্তের কোথায় ঠাঁই হয়? জানা গিয়েছে, প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে অন্য এক থানার লক-আপই সে ক্ষেত্রে ভরসা। এই পথটা উজিয়ে অভিযুক্তকে রেখে আসতে হয় পাশের থানায়। কখনও জেরা করার প্রয়োজন হলে আবার ছুটে যেতে হয় সেখানে।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৬ ০৩:৫৫

থানা আছে, লক-আপ নেই!

তা হলে দুষ্কৃতী ধরা পড়লে, আদালতে তোলার আগে তাকে কোথায় রাখা হয়? আদালত যখন অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়, তখন সেই অভিযুক্তের কোথায় ঠাঁই হয়?

জানা গিয়েছে, প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে অন্য এক থানার লক-আপই সে ক্ষেত্রে ভরসা। এই পথটা উজিয়ে অভিযুক্তকে রেখে আসতে হয় পাশের থানায়। কখনও জেরা করার প্রয়োজন হলে আবার ছুটে যেতে হয় সেখানে। তাকে সঙ্গে নিয়ে অভিযানে বেরোনোর প্রয়োজন হলে বা তাকে আদালতে তোলার প্রয়োজন হলেও ছুটতে হয় পাশের থানায়।

এমন এক নজিরবিহীন, লক-আপ ছাড়া থানার নাম পঞ্চসায়র। গ্রামাঞ্চল নয়, খোদ কলকাতা শহরের এই থানায় কয়েকটি ঘর থাকলেও সেখানে লক-আপ নেই। পাশের পূর্ব যাদবপুর থানার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় তাদের। আর তাতেই জেরবার পঞ্চসায়রের পুলিশকর্মীরা। কারণ, শুধু যাতায়াত নয়, পাশের থানার লক-আপে রাখা অভিযুক্তকে জেরা করতে গেলে প্রতিবারেই সেই থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের অনুমতির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রেও বিবিধ সমস্যা দেখা দেয়।

সম্প্রতি চুরির অভিযোগে এক যুবককে ধরার পরে রাতে তাকে পূর্ব যাদবপুর থানার লক-আপে রেখে আসা হয়েছিল। চুরি করা জিনিসপত্র সে কোথায় লুকিয়ে রেখেছে, তা পুলিশকে জানায় অভিযুক্ত। তার বলে দেওয়া জায়গায় রাতে হানা দিয়ে কিছুই পাওয়া যায় না। বোঝা যায়, অভিযুক্ত বিপথে চালিত করেছে পুলিশকে। ফলে, সেই রাতে আবার ছুটতে হয় পূর্ব যাদবপুর থানায়। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘এটা হেনস্থার সামিল।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৪ সালে কলকাতা পুলিশ নতুন করে চারটি থানা গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মতো ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পূর্ব যাদবপুর থানা এলাকা ভেঙে তৈরি করা হয় নতুন এই পঞ্চসায়র থানা। ই এম বাইপাসের পূর্ব দিক থেকে গড়িয়া স্টেশন, নয়াবাদ পর্যন্ত এলাকা ওই থানার অন্তর্গত। লালবাজার সূত্রের খবর, আগে থেকে থানা তৈরির জায়গা ঠিক না করেই থানা গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ফলে সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে অন্য কোনও জায়গা না পেয়ে ‘নিউ গড়িয়া হাউসিং ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’র অধীনে থাকা একটি বাজারের মেজানাইন ফ্লোরের ঘর কয়েকটি ভাড়া নেওয়া হয়।

ভুক্তভোগীদের মতে, ওই এলাকায় পৌঁছেও থানা আসলে কোথায় তা খুঁজে পেতে সমস্যা হয়। পঞ্চসায়রের ওই জায়গায় চারদিকে বাজার, দোকান। তার মাঝেই সোসাইটির ওই বাড়িটিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি শাখা। এক পাশ দিয়ে থানায় ঢোকার রাস্তা। কয়েকটি সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোকানঘরগুলির মাথার উপরেই সোসাইটির তরফে থানার ওসি, অতিরিক্ত ওসি, তদন্তকারীদের ঘর-সহ সেরেস্তা এবং পুলিশকর্মীদের ব্যারাক তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। দর্শনপ্রার্থীদের বসার ঘর আর ওসি-র বসার ঘর ছাড়া বাকি দু’তিনটি ঘরে রঙের পোঁচ পড়েনি। চারদিকে বাজারের হই-হট্টগোল। নীচে থানায় ঢোকার মুখে বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাইকেল সার দিয়ে দাঁড়ানো। লালবাজারের কর্তারাই জানাচ্ছেন, এমন একটি পরিবেশের মধ্যে আচমকা গজিয়ে ওঠা এই থানায় জায়গার অভাবে লক-আপ তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

সূত্রের খবর, ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থানা উদ্বোধনের পরে লক-আপ তৈরি করা নিয়ে কথা উঠেছিল। কিন্তু হাউসিং ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সঙ্গে বাড়ি ভাড়া নিয়ে সমস্যা হওয়ায় লক-আপ তৈরি করা যায়নি। এক পুলিশ কর্তা জানান, লক-আপ তৈরির জন্য নিউ গড়িয়া হাউসিং ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সঙ্গে নতুন করে কথা হয়েছে তাঁদের। কিছু দিনের মধ্যে থানাতেই লক-আপ তৈরির কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ওই পুলিশকর্তা। এ দিন ওই সোসাইটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা জানিয়েছে, পুলিশের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। পুলিশের তরফে চুক্তি করে নতুন পরিকল্পনা জমা দিলেই থানায় যেখানে ব্যারাক আছে, সেখানে লক-আপ তৈরি করে দেওয়া হবে। যদিও লালবাজারের তরফে জানানো হয়, থানা তৈরি করলেই যে সেখানে লক-আপ রাখতে হবে, এমন কোনও নিয়ম নেই। তবে সাধারণত সব থানায় লক-আপ রাখা হয়।

police station lock-up
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy