ডেঙ্গি রোগ প্রতিরোধে বিধাননগর পুরসভার ভূমিকা নিয়ে সরাসরি তিরষ্কার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতা নিয়েই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। বিধাননগরের ক্ষেত্রে সেটা কত দূর সত্যি, ফের তার প্রমাণ মিলল।
বিধাননগরে নিজেদের মাতৃসদন হাসপাতাল সম্পর্কে কার্যত অন্ধকারে পুর প্রশাসন। শনিবার রাতে সেখানে গিয়ে তা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন মেয়র সব্যসাচী দত্ত। পরিষেবা সম্পর্কে মেয়র তো দূর অস্ত্, সম্পূর্ণ তথ্য নেই স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদের কাছেও।
যখন ডেঙ্গিতে বিধাননগর পুর এলাকায় কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে, দু’হাজারেরও বেশি জ্বরে আক্রান্ত, সেই সময়ে রাতে মাতৃসদন যে বন্ধ থাকে, জানতই না পুরসভা। শনিবার রাত বারোটার কিছু আগে মাতৃসদনে হাজির হন মেয়র। পুরসভা সূত্রে খবর, সে সময়ে দেখা যায় হাসপাতালের গেট বন্ধ। নিরাপত্তা রক্ষীদের বহু ডেকে, দরজা ধাক্কা দিয়েও সাড়া মেলেনি। শেষে মেয়রের সঙ্গে থাকা লোকজন হাসপাতালের পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢুকে ডাকাডাকি শুরু করেন। তখন ঘুম ভাঙে এক নিরাপত্তারক্ষীর। তিনি অবশ্য মেয়রকে চিনতেও পারেননি। শেষে নিরাপত্তারক্ষীদের এজেন্সির সঙ্গে কথা বলেন মেয়র নিজে।
ঘটনার কথা স্বীকার করে সব্যসাচীবাবু জানান, কিছু অভিযোগ পেয়ে হাসপাতালের অবস্থা বুঝতে গিয়েছিলেন। মেয়র বলেন, ‘‘আমাকে চেনা বড় কথা নয়। কেন রাতে হাসপাতাল বন্ধ থাকবে?’’ প্রসঙ্গত জেলা ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে বারবার সরকারি হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা বজায় রাখার কথা বলা হয়েছিল।
ওই হাসপাতালে পুরসভার দু’জন কর্মীও নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। তাঁদের রবিবার রাতে সেখানে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ মেয়রের। হাসপাতালে সে সময়ে ছিলেন একটি অ্যাম্বুল্যান্সের চালক। অভিযোগ, সেই অ্যাম্বুল্যান্সের হালও খারাপ। কবে শেষ সেটি চালানো হয়েছে, তা-ও বলতে পারেননি চালক।
কিন্তু এত দিন মেয়র কোথায় ছিলেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। পুরসভা সূত্রে খবর, ওই হাসপাতালে আউটডোর ছাড়া বিভিন্ন বিভাগের পরিষেবা অনিয়মিত শুধু নয়, কার্যত বন্ধ। অথচ সেখানে কোটি কোটি টাকা খরচ করে আধুনিক যন্ত্রপাতি আনা হয়েছিল। অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে কয়েকটি ইউনিটের সংস্কারও করা হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, সম্প্রতি এই হাসপাতালে মশাবাহিত রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্তপরীক্ষার ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। এ দিকে, পরিষেবার এই অবস্থার জেরে দুর্ভোগে পড়েছেন সল্টলেক ও সংযুক্ত এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু হাসপাতালে পরিষেবার এই হাল জানতে পুরকর্তাদের ১১ মাস লাগল? প্রশ্ন বহু বাসিন্দাদের।
বিধাননগর পুর নিগমের তরফে অবশ্য এর কোনও সদুত্তর মেলেনি। মেয়রের বক্তব্য, ‘‘স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য মেয়র পারিষদ থেকে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা রয়েছেন। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে গাফিলতি থাকলে আলোচনা করে সংশোধন করে নেওয়া হবে।’’
অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায়ের আবার বক্তব্য, ‘‘দায়িত্ব নেওয়ার পরে জানতে পারি মাতৃসদনে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হওয়ায় পরিষেবা পুরোপুরি চালু করা যায়নি। তবে আউটডোর-সহ কিছু পরিষেবা চলছে। দ্রুত এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দেওয়া হবে মেয়রের কাছে।’’ অর্থাৎ নিজেদের মাতৃসদন সম্পর্কে অন্ধকারে খোদ পুরসভাই। কেন? পুরসভার একাংশের দাবি, ওই হাসপাতালের সঙ্গে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক যুক্ত রয়েছেন। আগে পুরকর্তাদের ভূমিকা থাকলেও এখন তাঁদের দেখা যায় না। মাতৃসদনের পরিষেবা বন্ধ থাকার বিষয়ে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিধাননগরের বাসিন্দারাও। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্যের অবশ্য সাফ বক্তব্য, ‘‘মাতৃসদন পুরসভার। দেখভালের দায়িত্বও তাঁদের। এখানে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কোনও বিষয় নেই।’’ প্রণয়বাবু বলেন, ‘‘কোথায় কার কতটা দায়িত্ব, পরিচালনা সংক্রান্ত সেই সব বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না। যা বলার মেয়রকে বলব।’’