Advertisement
E-Paper

ফের এক কোরপান, পুলিশ তাজ্জব

গ্রামেগঞ্জে চোর অপবাদে পিটিয়ে মারার ঘটনা হামেশাই ঘটে। কিন্তু শহর কলকাতাও যে এ ব্যাপারে আদৌ পিছিয়ে নেই, কোরপান শাহের পরে এক তরুণের অপমৃত্যুর রহস্য ভেদ করতে গিয়ে তার প্রমাণ পেয়ে পুলিশ হতবাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০৩:১১

গ্রামেগঞ্জে চোর অপবাদে পিটিয়ে মারার ঘটনা হামেশাই ঘটে। কিন্তু শহর কলকাতাও যে এ ব্যাপারে আদৌ পিছিয়ে নেই, কোরপান শাহের পরে এক তরুণের অপমৃত্যুর রহস্য ভেদ করতে গিয়ে তার প্রমাণ পেয়ে পুলিশ হতবাক।

নভেম্বরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে মনোরোগী কোরপানকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়। সেই ঘটনায় বেশ কিছু ডাক্তারি পড়ুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। বিস্তর হইচই হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। কয়েক জন হবু ডাক্তারকে গ্রেফতারও করা হয়। ফুলবাগান থানা এলাকায় এক তরুণের অপমৃত্যুর জট খুলতে গিয়ে পুলিশ মিল পাচ্ছে দু’টি ঘটনায়।

পুলিশ জানায়, ১ জুন বাইপাস সংলগ্ন ফুলবাগান থানা এলাকার ইসমাইল মার্কেটের কাছে যে-তরুণের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল, তাঁর নাম রাজা বিজলি। শনাক্তকরণে দেরির ফলে তাঁর মৃত্যুরহস্য ভেদের কাজটাও বিলম্বিত হয়। শেষ পর্যন্ত মৃতের মা ফুলবাগান থানায় এসে রাজাকে শনাক্ত করেন। জানা যায়, তাঁদের বাড়ি কাকদ্বীপ থানা এলাকার রঘুনাথপুরে। পরিজনেরা পুলিশকে জানান, রাজা ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি মে মাস থেকে নিখোঁজ ছিলেন। নিখোঁজ-ডায়েরিও করা হয়েছিল কাকদ্বীপ থানায়।

কোরপানের বাড়ি ছিল হাওড়ায়। তিনিও ছিলেন মনোরোগী। কী ভাবে তিনি নীলরতনের হস্টেলে পৌঁছে গিয়েছিলেন, সেটা রহস্য। রাজাও কী করে ফুলবাগানের ওই এলাকায় এসেছিলেন, তা স্পষ্ট নয়। পুলিশি সূত্রের খবর, ইসমাইল মার্কেটের কাছে নির্মীয়মাণ মেট্রোর এলাকায় যেখানে রাজার দেহ মেলে, তার পাশে থাকতেন ঠিকা শ্রমিকেরা। কিন্তু ঘটনার পরেই তাঁদের অনেকে উধাও হয়ে যান। চার শ্রমিককে গ্রেফতার করলেও প্রথমে মৃতের পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ।

এক পুলিশকর্তা জানান, নিহতের নাম-পরিচয় জানার জন্য বিভিন্ন থানা এলাকায় এবং সংবাদপত্রে ওই তরুণের ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। চলতি মাসে বিজ্ঞাপন দেখে কাকদ্বীপের এক মহিলা কলকাতায় এসে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মৃতকে দেখে মহিলা জানান, ওই তরুণ তাঁরই ছেলে রাজা।

কারা মারল রাজাকে?

পুলিশ জানাচ্ছে, প্রথমে তেমন সূত্র মিলছিল না। এলাকার ঠিকা শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, তাঁদের বেশ কয়েক জন পালিয়ে গিয়েছেন। কয়েক জন ঠিকা শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়। জেরার মুখে ধৃতেরা জানায়, ঘটনার রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে তারা দেখে, এক তরুণ তাদের ব্যাগ থেকে কিছু বার করে নিচ্ছেন। চোর সন্দেহে তারা ওই তরুণের হাত-পা বেঁধে মারতে শুরু করে। তিনি মারা গিয়েছেন বুঝতে পেরে তারা দেহটি ফেলে পালায়।

কোরপান ও রাজার দু’টি ঘটনা ঘটে মাস ছয়েকের ব্যবধানে। দু’জনেই মনোরোগী। দু’জনেই চোর অপবাদের শিকার। মারধরে বেঘোরে মৃত্যু দু’জনেরই। এবং দু’টি ঘটনাই নগর কলকাতায়। একটিতে অভিযুক্ত এক দল হবু ডাক্তার। অন্যটিতে আঙুল উঠছে কিছু শ্রমিকের দিকে। প্রশ্ন উঠছে, পিটিয়ে হত্যার মানসিকতায় গ্রামাঞ্চল আর মহানগরের অবস্থান কি তা হলে একই স্তরে? না-হলে দুই বিপরীত স্তরের নাগরিকেরা মানসিক ভারসাম্যহীন দু’টি মানুষকে নিছক চোর অপবাদে পিটিয়ে মারে কী করে!

phoolbagan murder mental patient murdered mental patient phoolbagan mental patient murder raja bijoli korpan shah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy