Advertisement
E-Paper

জুতো খোঁজার গুঁতোয় নাজেহাল মেট্রো কর্তৃপক্ষ

বিপত্তি বাধছে এই হুড়োহুড়ির সময়ে। মেট্রোর কামরায় পা রাখতে গিয়ে ভিড়ের চাপে যাত্রীদের অনেকেরই পায়ের জুতোর এক পাটি প্ল্যাটফর্মেই থেকে যাচ্ছে।

ফিরোজ ইসলাম

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
বিভ্রাট: মেট্রোয় ওঠার সময়ে এ ভাবে হুড়োহুড়ির জেরেই খুলে যায় অনেক যাত্রীর জুতো। নিজস্ব চিত্র

বিভ্রাট: মেট্রোয় ওঠার সময়ে এ ভাবে হুড়োহুড়ির জেরেই খুলে যায় অনেক যাত্রীর জুতো। নিজস্ব চিত্র

জুতো নিয়ে যত কাণ্ড এখন দমদম মেট্রো স্টেশনে। যার জেরে নাজেহাল অবস্থা মেট্রো কর্তৃপক্ষের।

বিষয়টি কী? মেট্রো সূত্রের খবর, সমস্যার শুরু প্রতিদিন ডাউন লাইনে সকালের ব্যস্ত সময়ে। কবি সুভাষগামী ট্রেন ধরার জন্য তখন যাত্রীদের মধ্যে প্রবল হুড়োহুড়ি চলে। যে যাঁর মতো করে আসন দখলের চেষ্টায় মেট্রোর দরজা খোলা মাত্রই যাত্রীরা লাফ দিয়ে উঠে পড়েন কামরায়। কারণ, এক বার বসতে পারলে গন্তব্যে পৌঁছনোর ফাঁকে কয়েক মিনিটের বিশ্রাম নিশ্চিত। বিপত্তি বাধছে এই হুড়োহুড়ির সময়ে। মেট্রোর কামরায় পা রাখতে গিয়ে ভিড়ের চাপে যাত্রীদের অনেকেরই পায়ের জুতোর এক পাটি প্ল্যাটফর্মেই থেকে যাচ্ছে। তা সামলে নেওয়ার আগেই পিছনে জনস্রোতের পায়ের টোকায় প্রায় ক্যারমের ঘুঁটির মতো তা ছিটকে পড়ছে ট্রেনের নীচে।

অফিসের ব্যস্ত সময়ে এ ভাবে জুতো খোয়ানোর বিড়ম্বনা ভোগ করতে হয়েছে অনেককেই। এর পরে ওই জুতো মেট্রোর লাইন থেকে দ্রুত তুলে দেওয়ার জন্য কর্মীদের পীড়াপীড়ি করতে থাকেন ওই যাত্রীদের অনেকেই। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, থার্ড রেলে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু থাকা অবস্থায় মেট্রোর লাইনে নামার কোনও নিয়ম নেই। কারণ, ওই বিদ্যুৎ মেট্রোর মোটর ঘুরে চাকার মাধ্যমে অন্য দু’টি লাইনে আর্থিং হয়। ফলে লাইনে কেউ নামলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ দিকে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে জুতো তুলতে গেলে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হবেই। নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে জুতো তুলতে অন্তত ১৫ মিনিট সময় খরচ হবে বলে দাবি মেট্রো কর্তৃপক্ষের। তাই সব দিক রক্ষা করতে রাতে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ হওয়ার পরে জুতো তুলে রাখার কাজ করতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। পরে এক পাটির সঙ্গে অন্য পাটি মিলিয়ে তা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এমনই যে জুতো নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বিবাদের জেরে কোনও কোনও ক্ষেত্রে লিখিত অভিযোগ থেকে সালিশি পর্যন্ত গড়াচ্ছে। তবে আপ লাইনে নোয়াপাড়াগামী ট্রেন বা অন্য স্টেশনে এই সমস্যা দমদমের ডাউন লাইনের মতো নিয়মিত নয়। মেট্রো সূত্রের খবর, সারাদিনে দমদম ডাউন লাইন দিয়ে প্রায় লাখ খানেক যাত্রী যাতায়াত করেন। সমস্যার অন্যতম কারণ এটাই।

সম্প্রতি কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত এক মহিলাকর্মী দমদম থেকে কবি সুভাযগামী মেট্রো ধরতে গিয়ে এক পাটি জুতো খোয়ান। অভিযোগ, বিষয়টি তিনি কর্তব্যরত মহিলা স্টেশন মাস্টারের কাছে জানাতে গেলে তাঁর বক্তব্যে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। উপরন্তু তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে মেট্রো কর্তাদের কাছে অভিযোগ জানান ওই মহিলা। সেই অভিযোগ এখনও বিবেচনাধীন। এ প্রসঙ্গে অন্য এক ভুক্তভোগী যাত্রী বলেন, ‘‘কাজে যাওয়ার সময়ে জুতো খোয়ানো খুবই অস্বস্তিকর। জুতো খুইয়ে ফের জুতো কিনে তবে অফিসে গিয়েছি।’’

মেট্রো সূত্রের খবর, বিপুল সংখ্যক যাত্রী সামলানোর ঝক্কি তো আছেই। তার উপরে এই জুতো-যন্ত্রণা গত কয়েক মাসে ধরে কর্মীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ উদ্ধার হওয়া এক পাটি জুতো মিলিয়ে তা ফেরত দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে। যে কারণে মেট্রো আধিকারিকেরা বলছেন, ‘‘যাত্রীদের ভিড়ের চেয়ে তাঁদের জুতোর গুঁতো সামলানো যেন বেশি মারাত্মক হয়ে উঠেছে।’’ সাফাইকর্মী থেকে স্টেশন মাস্টার কমবেশি সবাই জুতো-যন্ত্রণায় জেরবার। এ প্রসঙ্গে এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ব্যস্ত সময়ে ঠিক মতো ট্রেন চালাতে না পারা নিয়ে এমনিতেই মেট্রোর বিরুদ্ধে যাত্রীদের বিস্তর অভিযোগ। তার মধ্যে জুতো তুলে আনতে গেলে কী অবস্থা হতে পারে, তা ভাবলেই শিউরে উঠছি।’’

এক মেট্রো কর্তা বলেন, ‘‘প্রত্যেকেই যাতে ধীরে-সুস্থে মেট্রোয় উঠে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন তার ব্যবস্থা করা আমাদের কর্তব্য। তবে এ জন্য যাত্রীদের সহযোগিতাও প্রয়োজন।’’

Shoe Kolkata Metro
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy