Advertisement
E-Paper

মার্চে শেষ হবে না কাজ, মেনে নিচ্ছেন মেট্রোর কর্তারাও

মেট্রোর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রশ্নে ইতিমধ্যেই পৃথিবীর প্রায় সমস্ত সেরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।

ফিরোজ ইসলাম 

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২২ ০৭:৩০
মেরামত: বৌবাজারের মদন দত্ত লেনে মেট্রোর কাজের জন্য ধস নামা এলাকায় চলছে গ্রাউটিংয়ের কাজ। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

মেরামত: বৌবাজারের মদন দত্ত লেনে মেট্রোর কাজের জন্য ধস নামা এলাকায় চলছে গ্রাউটিংয়ের কাজ। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, আগামী বছরের মার্চে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা যে কোনও মতেই সম্ভব নয়, ঠারেঠোরে সে কথা মেনে নিচ্ছেন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ খননের সঙ্গে যুক্ত প্রযুক্তিবিদদের একাংশ। তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, মাটি ফুঁড়ে জল বেরিয়ে বার বার বিপত্তি বাধলেও যাত্রী-সুরক্ষার স্বার্থে জোড়া সুড়ঙ্গের মধ্যে ক্রস প্যাসেজ তৈরির পরিকল্পনায় কাটছাঁট করা সম্ভব নয়। জল বেরোনোর ভয়ে বাকি পাঁচটি ক্রস প্যাসেজ তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করলে তা মেট্রোর যাত্রী-সুরক্ষার প্রশ্নে বড়সড় আপস করা হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতার বিষয়টি রেলওয়ে সেফটি কমিশনারও মেনে নেবেন না বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিদেরা। তাঁদের মতে, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে জলের মর্জি বুঝেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

গত ১৪ অক্টোবর বৌবাজার স্ট্রিট এবং মদন দত্ত লেনের সংযোগস্থলে, মাটির ১২ মিটার নীচে পূর্ব ও পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গের মধ্যে সাড়ে পাঁচ মিটার দৈর্ঘ্যের ক্রস প্যাসেজ বা ছোট সুড়ঙ্গ খননের সময়ে আচমকা জল বেরোতে শুরু করায় বিপর্যয় নেমে আসে। পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ থেকে খননকাজ চালানো হচ্ছিল। আপাতত ওই নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ করে নাগাড়ে রাসায়নিক পাঠিয়ে জল বেরোনো বন্ধ করা হয়েছে। ওই অংশে এখনই হাত দেওয়া সম্ভব নয়। তবে, পরিস্থিতি বুঝে শিয়ালদহের দিকে বৌবাজারের ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া মোড়ে প্রথম ক্রস প্যাসেজের কাজ শুরু করতে চান মেট্রো কর্তৃপক্ষ। একই ভাবে নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট এবং গৌর দে লেনে যে দু’টি ক্রস প্যাসেজ তৈরির কথা রয়েছে, সেগুলিও খুব সন্তর্পণে করতে হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

মেট্রোর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রশ্নে ইতিমধ্যেই পৃথিবীর প্রায় সমস্ত সেরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে। ইংল্যান্ড, হংকং, সুইডেন ছাড়াও আইআইটি মাদ্রাজ এবং আইআইটি রুরকির বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। মাটির চরিত্র যাচাই করে রিপোর্ট দেওয়ার কথা ছিল আইআইটি রুরকির বিশেষজ্ঞদের। সেটি এখনও আসেনি। পরামর্শ নিতে গিয়ে কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছে মেট্রোর। সাম্প্রতিক বিপত্তির পরে দিল্লি ও বেঙ্গালুরুর মেট্রোর প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁরা এখনও কাজ শুরু করেননি।

প্রকল্পের প্রযুক্তিবিদদের কথায়, ‘‘বৌবাজারের মাটি নরম। সেখানে জল আছে। এটা নতুন কথা নয়। কিন্তু জল ঠেকাতে আধুনিকতম প্রযুক্তি ও রাসায়নিক ব্যবহার করে ঢাল তৈরির চেষ্টাও কাজে দিচ্ছে না মাঝে মাঝে।’’ মাটির ভিতরে কংক্রিট, জল ও রাসায়নিক পাঠানো হলেও তা কতখানি জায়গা জুড়ে ঢাল তৈরি করল, তা আগাম জানার উপায় নেই। ক্রমাগত নজরদারি চালিয়েই তা বুঝতে হয়। মাটির উপরে চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি বিপুল সংখ্যক জীর্ণ বাড়ি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। ঘন বসতি এবং গায়ে গায়ে বাড়ি থাকায় ‘গ্রাউটিং’ বা মাটির নীচে জল, কংক্রিট ও রাসায়নিক পাঠানোর কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বছর তিনেক আগের বিপর্যয়ের পর থেকে শুধুমাত্র বৌবাজারের মাটির স্থায়িত্ব বাড়াতেই কয়েক কোটি টাকার কংক্রিট এবং রাসায়নিক খরচ হয়েছে। কয়েকশো টন কংক্রিট মাটির নীচে ঢোকানোর পরেও মাটির খামখেয়ালি আচরণ বুঝতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তবে, প্রকল্পের এক প্রযুক্তিবিদের কথায়, ‘‘শীত আসছে। আগামী দিনে আবহাওয়া আরও শুকনো হবে। তাতে মাটির অভ্যন্তরে জলের চাপ বা পিজ়োমেট্রিক লেভেল অনেকটা কমে আসার বিষয়ে আশাবাদী আমরা। পরিস্থিতি অনুকূল হওয়া মাত্র কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হবে।’’ তিনি জানান, মাটি ও জলের যা চরিত্র, তাতে সব কাজ শেষ করতে কত দিন লাগবে, বলা মুশকিল।

সোমবার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে বৈঠক করেন কেএমআরসিএল-এর আধিকারিকেরা। সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক বিপর্যয়ে যাঁরা ঘরছাড়া হয়েছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদনের ফর্ম দেওয়া হচ্ছে। এ দিন ক্ষতিপূরণ ছাড়াও নির্বিঘ্নে কাজ চালানোর প্রশ্নে সহযোগিতা নিয়ে দু’পক্ষের কথা হয়।

Bowbazar Kolkata Metro
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy