Advertisement
E-Paper

রাজ্য ঠুঁটোই, উদ্ধারকাজ শেখাল সেনা

বেশ কিছু ক্ষণ কসরতের পরে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন বুঝতে পেরেছিল, এ তাদের কম্মো নয়। তত ক্ষণে উদ্ধারকাজে ঢিলেমির অভিযোগে তেতে উঠেছে পোস্তার ভাঙা উড়ালপুল ঘিরে থাকা জনতা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ঘটনাস্থলে হাজির প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সেনাবাহিনীকে ডাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। সে কথা জানিয়ে দেওয়া হল মুখ্যমন্ত্রীকেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৫
মাইক হাতে ভিড় সরানোর আবেদন সেনার।— নিজস্ব চিত্র

মাইক হাতে ভিড় সরানোর আবেদন সেনার।— নিজস্ব চিত্র

বেশ কিছু ক্ষণ কসরতের পরে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন বুঝতে পেরেছিল, এ তাদের কম্মো নয়। তত ক্ষণে উদ্ধারকাজে ঢিলেমির অভিযোগে তেতে উঠেছে পোস্তার ভাঙা উড়ালপুল ঘিরে থাকা জনতা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ঘটনাস্থলে হাজির প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সেনাবাহিনীকে ডাকার সিদ্ধান্ত নিলেন। সে কথা জানিয়ে দেওয়া হল মুখ্যমন্ত্রীকেও।

রাজ্য সরকারের জরুরি তলব পেয়ে সেনা পৌঁছল দুপুর তিনটে নাগাদ। নেতৃত্বে বেঙ্গল এরিয়ার কম্যান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব তিওয়ারি। দুর্ঘটনা ঘটেছে দুপুর ১২টা বেজে ২০ মিনিটে। এত পরে কেন এল সেনা?

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, উদ্ধারকাজের গতিপথ ঠিক করতে করতেই ওই কয়েক ঘণ্টা পার করে দেন রাজ্যের পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্তারা। শহরের নানা প্রান্ত থেকে একাধিক ক্রেন তড়িঘড়ি আনা হয়েছিল ঘটনাস্থলে। কিন্তু কোথা থেকে কাজটা শুরু হবে, কোন পথে তা এগোবে— এ সব নিয়ে ধন্দেই ছিল পুলিশ ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের উদ্ধারকারী দল। শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীকে তলব করে কার্যত হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন

প্রশাসনের কর্তারা।

এ দিন প্রথমে নাগা ও বিহার রেজিমেন্টের জওয়ান-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার মিলিয়ে শ’তিনেক সদস্যের একটি দল পাঠায় সেনা। যায় অ্যাম্বুল্যান্সও। সেনা আসার আগেই পৌঁছেছিল ১৬৭ ব্যাটেলিয়নের সিআরপি এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)-এর দু’টি দল। সেনার নেতৃত্বে একসঙ্গে কাজে নামে সবাই। গতি বাড়ে উদ্ধারকাজে। পরে

পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আরও উদ্ধারকর্মী এবং অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে আসেন সেনা-কর্তৃপক্ষ। ভেঙে পড়া অংশ সরিয়ে একের পর এক দেহ বের করতে থাকেন জওয়ানেরা। যা

দেখে অনেকেই বলেছেন, প্রথমেই যদি সেনা নামানো হতো, তা হলে হয়তো আরও কয়েকটি প্রাণ

বেঁচে যেত।

কী ভাবে এগোল কাজ?

সেনার পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে শাবল-গাঁইতি দিয়ে ভেঙে পড়া অংশ থেকে কংক্রিটের চাঙড় খসানোর কাজ শুরু হয়। পাহাড়ে ধস সরানোয় যে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয়, সেগুলোও কাজে লাগান সেনা জওয়ানরা। উড়ালপুলের বিরাট আকারের ভাঙা অংশটা এ ভাবেই এক সময়ে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। তার পর সেই অংশগুলো ক্রেন দিয়ে টেনে সরিয়ে ফেলে সেনা। ধ্বংসস্তূপের ভিতরে কেউ আটকে রয়েছেন কি না, তার বোঝার জন্য সেনা জওয়ানরা ব্যবহার করেছেন থার্মাল ক্যামেরার মতো উন্নত যন্ত্রপাতি। রাতের আগেই উদ্ধারকাজ প্রায় গুটিয়ে আনেন তাঁরা।

প্রশাসনের একাংশও পরে মেনে নিয়েছে, বিপদে কী ভাবে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়, সেটা সেনার থেকেই শেখা উচিত রাজ্যের কর্তাদের। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘সেনার মতো দক্ষতা ও পরিকাঠামো রাজ্যের নেই। ফলে সেনার সাহায্য নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।’’ থার্মাল ক্যামেরার মতো দামী ও অত্যাধুনিক যন্ত্র না থাকার যুক্তি না হয় মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বাকি পরিকাঠামোর এই ছন্নছাড়া দশা, সেই সঙ্গে এই সিদ্ধান্তহীনতার ব্যাখ্যা কী? উত্তর মেলেনি।

অথচ কলকাতা বা শহরতলিতে এর আগে খালে বাস পড়ে যাওয়া কিংবা স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটেছে। ওই সব ঘটনা বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে

রাজ্যের বেহাল দশা বারবার প্রকট করে দিয়েছে। কিন্তু প্রতি বারেই দেখা গিয়েছে ট্র্যাডিশনের বদল নেই। তা আরও এক বার বোঝাল এ দিনের ঘটনা। শহরে একের পর এক উড়ালপুল তৈরি হয়েছে। কাজ চলছে একাধিক মেট্রো প্রকল্পের। রয়েছে বহুতল, শপিং মল। তার উপরে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক জানিয়েছে, কলকাতায় রয়েছে ভূকম্পের বিপদও।

শিয়রে এত বিপদ। তবু বারবার দেখা যায়, এই শহরে সুরক্ষা ও উদ্ধারকাজের সব বন্দোবস্তই যেন ‘নাম কা ওয়াস্তে’! এ দিন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই আক্ষেপ করছিলেন রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আরও এক কর্তা। বলছিলেন, ‘‘এত দুর্ঘটনার পরেও আমরা শিক্ষা নিইনি। এ দিনের পরে টনক নড়ে কি না, সেটাই দেখার।’’

আরও পড়ুন:
কার খুঁটিতে কত খুঁত, লড়াই আমরা-ওরা’র

Flyover Collapse Kolkata tragedy military
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy