অভিভাবকদের বিক্ষোভ। সোমবার, রানিকুঠিতে। নিজস্ব চিত্র
স্কুলের অনুষ্ঠানের মহড়ায় যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে চার বছরের এক শিশু এই অভিযোগে অভিভাবকদের বিক্ষোভে তুমুল উত্তেজনা ছড়াল স্কুল চত্বরে। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ শহরতলির রানিকুঠিতে, আইসিএসই বোর্ডের অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি স্কুলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থলে যান পুলিশের বড়কর্তারা।
পুলিশ জানায়, স্কুল কর্তৃপক্ষ নিগ্রহের অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে রিপোর্ট তলব করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। নিগৃহীত ছাত্রী এখন সুস্থ বলেও জানিয়েছে পুলিশ। তার অভিভাবকদের থানায় ডেকে পাঠানো হয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর বেঙ্গালুরুর একটি স্কুলেও প্রথম শ্রেণির ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহর অভিযোগ ওঠে স্কুলেরই এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
চার বছর অন্তর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আরও দু’টি স্কুলের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রানিকুঠির স্কুলটি। ওই অনুষ্ঠানের মহড়ার জন্য স্কুলের সময়েই ছাত্রীদের বিভিন্ন অনুশীলন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রীদের যাওয়া-আসার জন্য একটি বেসরকারি বাস সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে স্কুল। অভিভাবকদের অভিযোগ, গত সোমবার মহড়ার ফাঁকে সেই বাসে বসে বিশ্রাম নেওয়ার সময়ে বাসের কর্মচারী ছাত্রীটিকে নিগ্রহ করে। অভিভাবকদের বক্তব্য, শিশুটির বাবা-মা বিষয়টি স্কুলে জানালেও স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ করেননি।
স্কুলের এক ছাত্রী যে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে, বিগত কয়েক দিন ধরেই সেই অভিযোগ জানাচ্ছেন একদল অভিভাবক। তাঁদের বক্তব্য, স্কুল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি আগেই জানতে পারলেও সম্মানের খাতিরে কাউকে জানাননি। তাই তাঁরা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ করছেন। সাত দিনের মধ্যে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
পুলিশ জানায়, সোমবারও সকাল ন’টা থেকে স্কুলের মাঠে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন অভিভাবকেরা। সাড়ে ন’টা নাগাদ রক্ষীদের ঠেলে তাঁরা ঢুকে পড়েন স্কুল ভবনের ভিতরে। তাঁদের ফের মাঠে বার করে দেওয়া হয়। উত্তেজিত অভিভাবকেরা দাবি তোলেন, অধ্যক্ষকে বাইরে বেরিয়ে জবাবদিহি করতে হবে। পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী, যান কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ শহরতলি) সন্তোষ পাণ্ডে। অভিভাবকদের শান্ত করতে হিমশিম অবস্থা হয় পুলিশের। বেশ খানিকক্ষণ বাদে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত করে পুলিশ। আট জন অভিভাবক স্কুলের ভিতরে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। নিগ্রহের ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি স্কুলের ছাত্রীদের সামগ্রিক নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানান তাঁরা।
অভিভাবকদের দাবি, চার বছর অন্তর ওই অনুষ্ঠানের ফলে ছাত্রীদের পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। তাই এই অনুষ্ঠানের ধরন পাল্টে অন্য ভাবে করতে হবে। পরে স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল বেরিয়ে এসে সমবেত অভিভাবকদের উদ্দেশে মাইক্রোফোনে বলেন, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা পুলিশকে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। স্কুলে অবিলম্বে নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যবস্থাও হবে। পরে পুলিশও যৌন নিগ্রহের এই অভিযোগে নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে অবশ্য কেটে গিয়েছে ছ’ঘণ্টা।
এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন বিধানসভার বাইরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “ওই স্কুলকে রিপোর্ট দিতে বলেছি। স্কুলটি আমার বাড়ির কাছেই। আমি নিজেও এ নিয়ে খোঁজ নেব।” কিন্তু আইসিএসই-বোর্ডের অনুমোদিত এই স্কুলের বিরুদ্ধে সরকারের কি ব্যবস্থা নেওয়ার এক্তিয়ার আছে? মন্ত্রী বলেন, “আমাদের রাজ্যে এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে সরকারের উদ্বেগ তো থাকবেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy