কলকাতা পুলিশের হকি দলের প্রশিক্ষণে মীররঞ্জন নেগি। সোমবার, ভবানীপুরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
তাঁর গল্প ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা আগুনপাখির মতো!
১৯৮২ সালে এশিয়ান গেমসে পাকিস্তানের কাছে সাত গোল হজম করেছিলেন বলে দেশবাসীর কাছে ‘শত্রু’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু দেশজোড়া তীব্র আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত হলেও শেষ হয়ে যাননি। ১৯৯৮ সালে এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী ভারতীয় দলের গোলকিপার কোচ হিসাবে ফিরে এসেছিলেন তিনি। ২০০২ এবং ২০০৪ সালে দেশের মহিলা হকি দলের অন্যতম প্রশিক্ষকও ছিলেন মীররঞ্জন নেগি।
তাঁর সংগ্রামের গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছিল সিনেমা ‘চক দে ইন্ডিয়া’। এ বার সেই ‘আগুনপাখি’-ই ঘুরে দাঁড়াতে শেখাচ্ছেন এ শহরের উর্দিধারীদের। ভবানীপুরের খালসা স্কুলের অ্যাস্ট্রোটার্ফে পুলিশের হকি দলের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। তার আগে গত সপ্তাহেই বডিগার্ড লাইন্সে উর্দিধারীদের কানে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বীজমন্ত্র দিলেন গুরু নেগি।
কলকাতা পুলিশের অনেকেই একান্তে মেনে নিচ্ছেন, তাঁদের চাকরিতে প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়তে ল়়ড়তে হতাশায় অনেক সময়েই হারিয়ে যায় উদ্যম। গত কয়েক বছরে পুলিশের উপরে একাধিক হামলাই তার প্রমাণ। পাঁচ বছরে দু’বার গুলিও খেয়েছেন দুই অফিসার। ‘‘আলিপুর থানায় হামলার সময় এক পুলিশকর্মীর টেবিলের তলায় ফাইলের আড়ালে মুখ লুকনোর দৃশ্য আসলে বাহিনীর একাংশের ভেঙে যাওয়া মনোবলেরই প্রতিচ্ছবি’’— মন্তব্য এক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তার।
তাই ময়দানে নেমে পুলিশকর্মীদের কাছে নেগির পরামর্শ, খারাপ সময় কাটিয়ে উঠতে মনের জোর জোগাতে হবে নিজেকেই। যন্ত্রণা কাটিয়ে ফের উঠে দাঁড়াতে হবে। এই প্রসঙ্গে নিজের গল্প শুনিয়েছেন এই হকি তারকা। তখন সদ্য পুত্রহারা হয়েছিলেন তিনি। এমনই এক ভোরে বিধ্বস্ত বাবা স্বপ্নে দেখেন ছেলেকে— স্বর্গের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলের হাতে নিভে যাওয়া মোমবাতি। স্বপ্নেই ছেলে বলে উঠেছিল, বাবা-মায়ের শোকই তার হাতের মোমবাতিকে নিভিয়েছে। শোক কাটলেই ফের জ্বলবে মোমবাতি। ঘুম ভাঙার পরে আর দেরি করেননি নেগি। ফিরে গিয়েছিলেন প্রশিক্ষকের জীবনে।
কেন্দ্রীয় শুল্ক বিভাগের সহকারী কমিশনার নেগি বর্তমানে কলকাতাবাসী। লালবাজারের খবর, সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের কাছ থেকে কলকাতা পুলিশের হকি দলের প্রশিক্ষক হওয়ার প্রস্তাব পান। সেপ্টেম্বরের শেষে অবসর নিয়ে মুম্বইয়ে ফিরবেন নেগি। তার আগে কয়েক দিনের জন্যেই প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়েছেন। তবে চেয়েছিলেন, মাঠে প্রশিক্ষণ শুরুর আগে কলকাতা পুলিশের কর্মী-অফিসারদের সঙ্গে কথা বলতে।
সেই কথা বলার ফাঁকেই উঠে এসেছে ‘পারফরম্যান্সের’ প্রশ্ন। নেগি বলেছেন, সাত গোল খেয়ে তিনিই শত্রু হয়ে গিয়েছিলেন। কেউ মনে রাখেনি, দলে আরও দশ জন খেলোয়াড় ছিল। কলকাতা পুলিশের এক ইনস্পেক্টরও বলছেন, ‘‘এক দিন কোনও খারাপ হলেই সেটা
লোকের মনে দাগ ফেলে। বছরের বাকি দিন আমাদের কাজ কেউ কি মনে রাখে? ঠিক যে ভাবে টেবিলের তলায় মুখ লুকনো ছবিটাই লোকে এখনও মনে রেখেছে!’’ এ প্রসঙ্গে পুলিশকর্মীদের কাছে নেগির টোটকা, ওই স্মৃতি ভুলে নতুন ভাবে মাঠে নামতে হবে তাঁদের।
‘চক দে ইন্ডিয়া’য় নেগির আদলে তৈরি কবীর খানের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শাহরুখ খান। মনোবল হারানো, সমালোচিত মহিলা হকি দলকে কাপ জিতিয়েছিলেন এই কোচ কবীর। নেগি-মন্ত্রের জোরে লালবাজারের অন্দরেও কি তবে এ বার ‘চক দে...’ হবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy