Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নিখোঁজ দুষ্কৃতীর দেহাংশ উদ্ধার দু’মাস পরে, ধৃত ৪

বন্ধুদের পাতা ফাঁদে পা দেওয়াই কাল হয়েছিল তার। বন্ধুরা বলেছিল, বাইক চুরি আর ছিনতাইয়ের থেকে হেরোইনের ব্যবসায় ঝামেলা কম, লাভও দেদার। লোভ সামলাতে না পেরে ১৭ ডিসেম্বর বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল সে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১১
Share: Save:

বন্ধুদের পাতা ফাঁদে পা দেওয়াই কাল হয়েছিল তার। বন্ধুরা বলেছিল, বাইক চুরি আর ছিনতাইয়ের থেকে হেরোইনের ব্যবসায় ঝামেলা কম, লাভও দেদার। লোভ সামলাতে না পেরে ১৭ ডিসেম্বর বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল সে। আর বাড়ি ফেরেনি। বুধবার পানিহাটির বেঙ্গল কেমিক্যালের পিছনে জঙ্গলের মধ্যে একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে উদ্ধার হয় পিন্টু সাহা (৪০) নামে ওই যুবকের ক্ষতবিক্ষত দেহাংশ।

পুলিশ জানায়, পিন্টুর নামে এলাকায় বাইক ছিনতাইয়ের একাধিক অভিযোগ ছিল। সে নিখোঁজ হওয়ার পরে পুলিশের কাছে সব চেয়ে বেশি তদ্বির করে তারই এক বন্ধু। পিন্টুর স্ত্রী শিপ্রার হয়ে অভিযোগ লেখা থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছুটোছুটি করতেও দেখা গিয়েছিল তাকে। পুলিশ জানায়, খড়দহ লাহাবাগানের বাসিন্দা সেই সজল সাউই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। বুধবারই তাকে ধরা হয়। এ দিন তার পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজত হয়।

পুলিশ জানায়, ১৭ ডিসেম্বর পিন্টুর ফোন ঘেঁটে প্রথমে কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। ২৮ ডিসেম্বর বেঙ্গল কেমিক্যালের পিছনের একটি মাঠ থেকে দু’টি কাটা আঙুল উদ্ধার হয়। কিন্তু ৮ জানুয়ারি সোদপুরে দু’টি দোকানে লুঠপাটের ঘটনায় তিন হেরোইনখোরকে ধরে ও তাদের ফোন ঘেঁটে পুলিশ দেখে, একটি নম্বর মিলে যাচ্ছে পিন্টুর কল রেকর্ডের সঙ্গে। এর পরেই জেলে রবীন দাস, শুভজিৎ দাস ও সঞ্জয় কুণ্ডু নামে ওই তিন দুষ্কৃতীর সঙ্গে কথা বলে পুলিশ। বুধবার তাদের জেরায় সজলের নাম জানা যায়।

পুলিশ জানায়, চোরাই জিনিস বিক্রির জন্য সজল মাধ্যম হিসেবে কাজ করত। তার নামে কোনও অভিযোগ না থাকলেও সজলের বাবা রাজকুমার গাঁজা পাচারের ঘটনায় এখনও জেলে। পুলিশ জানায়, পিন্টুর সঙ্গে আলাপের পরে তার স্ত্রী শিপ্রার সঙ্গে সজলের ঘনিষ্ঠতা হয়। তা জানতে পেরে সজলের থেকে টাকা দাবি করে পিন্টু। প্রথম দফায় টাকা দিলেও পরে সজল ঠিক করে, পিন্টুকে সরিয়ে দিতে হবে।

সেই মতো রবীনকে দিয়ে পিন্টুকে ফোন করিয়ে হেরোইনের ব্যবসায় লাভের গল্প ফেঁদে তাকে ১৭ ডিসেম্বর রাতেই বেঙ্গল কেমিক্যালে ডেকে পাঠায় সজল। পুলিশ জেনেছে, সেখানে একটি পরিত্যক্ত ঘরে আগে থেকেই অপেক্ষা করছিল রবীন, শুভজিৎ, সঞ্জয় ও সজল। পিন্টু পৌঁছনোর পরে সকলে নেশা করে। এর পরে চুল্লির পোড়া ইট দিয়ে থেঁতলে পিন্টুকে খুন করা হয়।

পরদিন দেহটি সরিয়ে ফেলারও পরিকল্পনা করেছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু এসে তারা দেখে, দেহটি অর্ধেক খাওয়া। তাই আর তা সরায়নি। পুলিশের অনুমান, ঝোপঝাড়ে থাকা শেয়ালই কাটা আঙুল মাঠে নিয়ে ফেলেছিল। পিন্টু যে বাইকটি নিয়ে বেরিয়েছিল, সেটিও লুকিয়ে রাখে দুষ্কৃতীরা। বুধবার পিন্টুর পরিজনেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহাংশের পাশে পড়ে থাকা জুতো ও ‘১৯৭২’ লেখা নীল জ্যাকেট দেখে দেহটি শনাক্ত করেন। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (২) ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘জেরায় আরও তথ্য মিলবে বলে আশা করা যায়। ওই দেহাংশ ও পিন্টুর মেয়ের ডিএনএ পরীক্ষাও করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest Detain Missing Miscreant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE