বাড়ি থেকে বেরোতেই ঝমঝমিয়ে শুরু হল বৃষ্টি। রাস্তায় ইতিমধ্যেই জল জমেছে। প্রায় ভিজে অবস্থায় একটা ট্যাক্সি ধরে অফিস পৌঁছলেন বছর চব্বিশের তিথি রায়। ঘণ্টা খানেক পরে গলা ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা শুরু। বিকেলের দিকে কাঁপুনি দিয়ে এল জ্বর।
সন্ধ্যায় সাঁতার কেটে টিউশন যাওয়ার পথে হঠাৎ চোখ ফুলে উঠল বালিগঞ্জের অর্পণ বিশ্বাসের। রাত বাড়লে বারবার চোখ করকর করতে থাকে। দেখতে সমস্যা হয়।
বর্ষা শুরু হতেই এমনই নানা সমস্যায় নাজেহাল শহরবাসী। রাস্তায় জমে থাকা জল কিংবা যানজটে আটকে থাকার পাশাপাশি ভুগতে হচ্ছে শরীর নিয়েও। দিন কয়েকের টানা বৃষ্টি আর স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার জেরে অনেকেই সর্দি, জ্বর, পেটের অসুখ, চোখের সংক্রমণে কাবু হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইনফ্লুয়েঞ্জা-সহ একাধিক ভাইরাসঘটিত সংক্রমণে বিভিন্ন বয়সের মানুষই কাবু হয়েছেন। শিশুদের মধ্যে পেটের অসুখ, ডায়েরিয়া প্রবল ভাবে দেখা দিচ্ছে। যাঁরা সাঁতার শেখেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বেড়েছে চোখের সংক্রমণের ঝুঁকি। গলায় ব্যথা, অরুচি নিয়েও ভুগতে শুরু করছেন তাঁরা। ভোগান্তি শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই জ্বর দেখা দিচ্ছে।
সকলেই বুঝছেন, এই সময়টা সাবধানে থাকতে হবে। কী ভাবে?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বর্ষার সময়ে জলবাহিত অসুখের প্রকোপ বাড়ে। তাই বিশুদ্ধ পানীয় জল খাচ্ছেন কি না, তার দিকে বা়ড়তি নজর দিতে হবে। বা়ড়ির কেউ সংক্রমণে আক্রান্ত হলে তাঁর থেকে দূরে থাকাই ভাল। পাশাপাশি রাস্তাঘাটে সাবধানতা অবলম্বনও দরকার। ট্রাম-বাসে রুমাল ব্যবহার করতে হবে। অসুবিধে বুঝলেই বসতে হবে মুখ ঢেকে। বাড়িতে কেউ সংক্রমণে আক্রান্ত হলে তাঁর বিছানা, চাদর, জামাকাপড় আলাদা রাখতে হবে। বাইরে থেকে এলে পরিষ্কার জলে চোখ ধুতে হবে। সর্দি-জ্বর কিংবা চোখ ফুলে উঠলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াও জরুরি।
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মে়ডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলছেন, ‘‘বর্ষাকালে এ ধরনের সংক্রমণ বাড়ে। জলবাহিত রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। আক্রান্তদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি, খাবার ও জলের উপরে বাড়তি নজর রাখতে হবে।’’
শিশুরোগ চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘বাচ্চারা পেটের অসুখে ভুগছে। অনেকের ডায়েরিয়াও হচ্ছে। তাই স্কুলে যাতায়াতের পথে কী খাবার খাচ্ছে, সে দিকে নজর দেওয়া জরুরি। সাঁতার কাটার পরে চোখে কোনও রকম সমস্যা দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। এই সময়ে অনেক ক্ষেত্রে পুকুরের জল থেকেও চোখে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।’’
চক্ষুরোগ চিকিৎসক জ্যোতির্ময় দত্ত বলেন, ‘‘বর্ষায় বেশ কিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হয়, যারা চোখে সংক্রমণ ঘটায়। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় চোখের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ভাইরাসগুলো খুব ক্ষতিকর। সংক্রমণের জেরে চোখের কর্নিয়ায় মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই চোখে কোনও সমস্যা বুঝলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy