Advertisement
E-Paper

নবান্নের দোরই মশার আঁতুড়! অন্যত্রের কী হাল?

মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ নবান্ন চত্বরের পুলিশ ব্যারাকের কর্মীরাও। তাঁরা জানিয়েছেন, দিন হোক বা রাত, ঝাঁকে ঝাঁকে মশা উড়ে বেড়াচ্ছে সেখানে। সর্বক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে ডিউটি করতে হচ্ছে তাঁদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:০৪
নাকের ডগায়: নবান্নের পাশেই জঞ্জালে তৈরি হয়েছিল মশার আঁতুড়। বুধবার হাওড়া পুরসভার তরফে চালানো হল সাফাই অভিযান। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নাকের ডগায়: নবান্নের পাশেই জঞ্জালে তৈরি হয়েছিল মশার আঁতুড়। বুধবার হাওড়া পুরসভার তরফে চালানো হল সাফাই অভিযান। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নবান্নের পাড়ায় ডেঙ্গি থাবা বসিয়েছিল আগেই। সোমবার সকালেই ওই রোগে মৃত্যু হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা, গৃহবধূ রুনু দে-র। তার পরেও অবশ্য অভিযোগ, মশা মারতে তেমন হেলদোল দেখা যায়নি হাওড়া পুরসভার। মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যসচিব হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেই অবশ্য ছবিটা বদলে যায়। বুধবার সকাল থেকেই মশা মারতে তড়িঘড়ি পথে নামেন পুরকর্মীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, খাস নবান্নের সামনেই মিলেছে ডেঙ্গিবাহী মশার অজস্র লার্ভা। ফেলে দেওয়া ডাবের খোলা, থার্মোকলের বাক্স, চায়ের ভাঁড়ে দিব্যি বেড়ে উঠছিল তারা।

মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ নবান্ন চত্বরের পুলিশ ব্যারাকের কর্মীরাও। তাঁরা জানিয়েছেন, দিন হোক বা রাত, ঝাঁকে ঝাঁকে মশা উড়ে বেড়াচ্ছে সেখানে। সর্বক্ষণ আতঙ্কের মধ্যে ডিউটি করতে হচ্ছে তাঁদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অফিসার বলেন, ‘‘এখানে তো মশার আঁতুড়ঘর তৈরি হয়ে গিয়েছে। কামড় খেতে খেতেই কাজ করছি। ভয় হচ্ছে, কবে আমাদেরই কারও না ডেঙ্গি হয়।’’

মুখ্যসচিব মলয় দে মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন, মশা মারার ক্ষেত্রে পুরসভাগুলির নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে তাঁর কাছেও অভিযোগ এসেছে। তার পরেই পুরসভাগুলিকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তার পরে এ দিন দেখা যায়, ৩৫-৪০ জনের বিশেষ প্রশিক্ষিত বাহিনী নিয়ে নবান্ন চত্বরে ডেঙ্গি-যুদ্ধে নেমে পড়েছেন খোদ হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্কর ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণের নোডাল অফিসার, চিকিৎসক বিশাখা হালদারও। স্বাস্থ্যকর্মীদের নবান্নের উত্তর গেট সংলগ্ন পার্কিং জোন থেকে বিদ্যাসাগর সেতুর মন্দিরতলা ও কাজিপাড়া অ্যাপ্রোচ রোডের নীচে বিস্তীর্ণ অব্যবহৃত জায়গা পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দেখা যায়, সেতুর নীচে সেই অব্যবহৃত জায়গায় জমা জলে কিলবিল করছে ডেঙ্গিবাহী মশার লার্ভা। আশপাশের নালা-নর্দমার মধ্যেও প্রচুর মশার লার্ভা মিলেছে।

হাওড়া পুরসভা বারবারই দাবি করেছে যে, সারা বছর ধরে প্রায় দু’হাজার স্বাস্থ্যকর্মী মশা মারার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তাই হাওড়ায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা এ বার নাকি অনেক কম। কিন্তু এরই মধ্যে গত সোমবার জেলা হাসপাতালে রুনুদেবীর মৃত্যু সেই দাবিকে কার্যত নস্যাৎ করে দেয়। মৃতার বাড়ি রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দফতর নবান্ন থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে। ওই মৃত্যুর পরেই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, মশা মারার তেল ও ব্লিচিং পাউডার পর্যাপ্ত পরিমাণে ছড়ানো হত না। তাই আজ এমন অবস্থা। পুরসভা অবশ্য প্রত্যাশিত ভাবেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুরকর্তাদের দাবি, ৬৬টি ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্লিচিং পাউডার, চুন ও মশা মারার তেল পাঠানো হয়েছে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, খাস নবান্ন চত্বরের হালই যদি এমন হয়, তা হলে অন্যত্র কী অবস্থা? দিকে দিকে ডেঙ্গির এমন ভয়াবহ প্রকোপের পরেও পুরসভাগুলির হুঁশ ফিরছে না কেন?

হাওড়ার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘নবান্ন চত্বরে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত নজরদারি চালান। কিন্তু একই জায়গায় তো প্রতিদিন আসা যায় না।’’ তিনি জানান, এ দিন ওই চত্বরের সমস্ত লার্ভা মারা হয়েছে। এলাকায় ব্লিচিং পাউডার-সহ লার্ভিসাইড তেল ছড়ানো হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে ন্যাপস্যাক, মিস্ট ব্লোয়ার, ফগিং মেশিন। ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘শুধু নবান্ন চত্বর নয়, গোটা শহর জুড়ে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা সারা বছর কাজ করেছেন। যে সব ওয়ার্ডে ডেঙ্গির প্রবণতা রয়েছে, সেখানে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।’’

Nabanna Mosquito Dengue Malaria নবান্ন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy