Advertisement
০২ মে ২০২৪

ফ্ল্যাটে শিশুপুত্রকে নিয়ে পুড়ে মরল মা, দেওয়ালে লেখা ‘স্বামীই দায়ী’

চারতলা আবাসনের একতলার একটি বন্ধ ঘর থেকে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। সঙ্গে নাকে ঠেকছে কোনও কিছু পোড়ার কটু গন্ধ। কয়েক ঘণ্টা ধরে এমন চললেও প্রথমে আমল দেননি ওই আবাসন কিংবা আশপাশের বাসিন্দারা।

ঘরের দেওয়ালে সেই লেখা। সোমবার, সার্ভে পার্কে। — নিজস্ব চিত্র

ঘরের দেওয়ালে সেই লেখা। সোমবার, সার্ভে পার্কে। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০২:১৭
Share: Save:

চারতলা আবাসনের একতলার একটি বন্ধ ঘর থেকে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। সঙ্গে নাকে ঠেকছে কোনও কিছু পোড়ার কটু গন্ধ। কয়েক ঘণ্টা ধরে এমন চললেও প্রথমে আমল দেননি ওই আবাসন কিংবা আশপাশের বাসিন্দারা। শেষমেশ আবাসনে নিজের বাড়িতে ফেরার সময়ে তা দেখে অন্যদের ডেকে আনে এক কিশোর। দরজা ভেঙে দেখা যায়, মেঝেতে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এক মহিলা। কয়েক হাত দূরে তাঁরই সাড়ে সাত বছরের ছেলের দগ্ধ দেহ।

সোমবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে সার্ভে পার্ক থানার বৈকুণ্ঠ সাহা লেনে। পুলিশের দাবি, মৃতদেহগুলির পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া একটু চিরকুট এবং দেওয়ালে রঙ পেন্সিলে লিখে অর্পিতা ঘোষ (৩৫) নামে ওই মহিলা নিজের এবং ছেলে অর্ক ঘোষের মৃত্যুর জন্য স্বামীকেই দায়ী করে গিয়েছেন। তার ভিত্তিতে মৃতার স্বামী তরুণকান্তি ঘোষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দেহ উদ্ধারের পরে অর্পিতাদেবীর দাদাও পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, ন’বছর আগে বিয়ে হয়েছিল অর্পিতার। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার তরুণ সল্টলেকের এক বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। ছেলে অর্ক লেক গার্ডেন্সের রামমোহন মিশন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। এ দিন ওই মহিলার দাদা, হাওড়া শিবপুর মন্দিরতলার বাসিন্দা অচিন্ত্য ঘোষ পুলিশকে জানান, বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতেন তরুণ। ছেলেকে নিয়ে বারবার আত্মহত্যার প্ররোচনা দিতেন বলেও অভিযোগ করেন অচিন্ত্য। স্থানীয়েরা জানান, ওই পরিবার খুব একটা এলাকায় মিশতেন না।

এ দিন বাকিদের ডেকে এনেছিল আবাসনের দোতলার বাসিন্দা দশম শ্রেণির ছাত্র আলেখ্য পোদ্দার। সে জানায়, বিকেল পাঁচটা নাগাদ মামার বাড়ি থেকে ফেরার সময়ে খেয়াল করে আবাসনে কালো ধোঁয়া। পোড়া গন্ধও বেরোচ্ছে। বেশি ধোঁয়া বেরোচ্ছে অর্কদের ফ্ল্যাট থেকে। এর পরেই মাকে বিষয়টি জানায় আলেখ্য। খবর দেয় আবাসনের অন্য বাসিন্দাদেরও। সকলে মিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অর্কদের ফ্ল্যাটের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। শেষে ফ্ল্যাটের পিছন দিকে শৌচাগারের জানলা দিয়ে দেখা যায়, ঘর জুড়ে কালো ধোঁয়া। মেঝেতে দগ্ধ অবস্থায় পড়ে মা-ছেলের দেহ। খবর যায় সার্ভে পার্ক থানায়।

সেই সময়ে মা আল্পনা মাইতির সঙ্গে পৌঁছয় অর্কর এক বন্ধু। একসঙ্গে সাঁতারে যেতে অর্ককে ডাকতে এসেছিল দ্বিতীয় শ্রেণির ওই পড়ুয়া। ফ্ল্যাটের সামনে প্রতিবেশীদের ভিড়, কালো ধোঁয়া দেখে তুষারবাবুকে ফোন করেন আল্পনাদেবী। খবর পেয়ে অফিস থেকে চলে আসেন তরুণ। পৌঁছয় পুলিশও।

পুলিশ জানায়, ইতিমধ্যে স্থানীয়েরা ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে দেখেন, ডাইনিং রুমে সোফার সামনে মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে অর্পিতা, হাত দুয়েক তফাতে শৌচাগার ও শোয়ার ঘরের দরজার মাঝে অর্ক। অর্পিতার দেহের পিছন দিকের দেওয়ালে রং পেন্সিলে লেখা রয়েছে ‘আমাদের মৃত্যুর জন্য আমার স্বামী দায়ী’। শোয়ার ঘরের খাটে মেলে রং পেন্সিলের বাক্সটি।

হোমিসাইড শাখার তদন্তকারীরাও ঘটনাস্থলে যান। তাঁদের অনুমান, প্রথমে ছেলেকে মেরে, তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে নিজেও গায়ে আগুন দেন অর্পিতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Unnatural Death Survey Park
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE