কসরত: এ ভি স্কুলের জিম। নিজস্ব চিত্র
বয়স চোদ্দো। এখনই ওজন ষাটের উপরে! সন্তানের শরীরে জমতে থাকা মেদ নিয়ে চিন্তায় শহরের বেশির ভাগ স্কুলপড়ুয়ার বাবা-মায়েরাই। স্কুলের ক্লাস শেষ হতেই কেউ কেউ তাই সন্তানদের নিয়ে সাঁতারের ক্লাসে বা জিমে ছুটছেন। অনেকেই আবার স্কুলের বৈঠকে দাবি জানাচ্ছেন, স্কুলেই শারীরচর্চার ব্যবস্থা করা হোক। রাজ্যের স্কুল পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত শিক্ষা দফতরও। খেলাধুলোয় এবং শারীরচর্চায় বাড়তি সময় দিতে স্কুলে ক্লাসের সময়সীমা কমিয়ে আনার ভাবনাচিন্তা চলছে।
শনিবার অভিভাবকদের দাবি মেনে শ্যামবাজার এ ভি স্কুলে চালু হল ‘মাল্টি জিম’। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জনকুমার রাপ্তান জানান, রাজ্যের ক্রীড়া এবং যুবকল্যাণ দফতর স্কুলকে এ জন্য প্রায় ৩ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে। সাহায্য মিলেছে রাজ্য সরকারের সর্বশিক্ষা মিশন থেকেও। সব মিলিয়ে প্রকল্পে খরচ হয়েছে মোট ২৩ লক্ষ টাকা। মনোরঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘সম্প্রতি একাধিক সমীক্ষার রিপোর্টে কলকাতার স্কুল পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তায় পড়ার মতো তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। সরকারও স্কুলগুলিকে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হতে বলেছে। তাই এই পদক্ষেপ।’’
মনোরঞ্জনবাবু জানালেন, সকালে স্কুল শুরুর পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই জিম ব্যবহার করতে পারবেন পড়ুয়ারা। জিমটির নাম রাখা হয়েছে ‘দিবারাত্রির কাব্য’। মনোরঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘দিবারাত্রির কাব্য মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস। উপন্যাসটি লেখার সময় মানিকবাবু নানা সমস্যায় পড়েছিলেন। আমরাও এই কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়েছি। তবু আমাদের চেষ্টা সার্থক।’’ জিমের পাশাপাশি ১৪০০ বর্গফুটের একটি খাওয়ার ঘরেরও উদ্বোধন করা হয়েছে স্কুলে। সেটির নাম রাখা হয়েছে, ‘সালেয়া মঞ্জর’ (ভোজনালয়)। শনিবার প্রকল্পের উদ্বোধনে হাজির ছিলেন রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের সব স্কুলেই এই ধরনের জিম তৈরি হওয়া উচিত।’’
স্কুলে জিম তৈরির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তাঁর কথায়, ‘‘দ্রুত পশ্চিমি কায়দা রপ্ত করতে গিয়ে স্কুল পড়ুয়াদের বেশিরভাগই ফাস্ট ফুডে আসক্ত হয়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে খেলার জায়গা নেই। গল্প করতে হলেও শপিং মলেই যেতে হয়। সেখানেও ওই ধরনেরই খাবার মেলে। দ্রুত মোটা হয়ে যাওয়ায় রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ওজন বাড়লে ডায়াবিটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। কলকাতায় ডায়াবিটিসে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।’’
তবে স্কুল পর্যায়ে জিম ব্যবহারের পক্ষপাতী নন ডায়েটিশিয়ান অর্পিতা ঘোষদেব। তার বদলে স্কুলে শারীরচর্চার ক্লাস বাধ্যতামূলক করা কিংবা যোগ প্রশিক্ষণের পক্ষপাতী তিনি। বললেন, ‘‘ছোট বয়সে জিমে গেলে পেশীর বিকাশে সমস্যা হতে পারে। তার থেকে শারীরচর্চার অন্যান্য বিষয়গুলির উপর জোর দেওয়া প্রয়োজন।’’ সেই সঙ্গে স্কুলে নিয়মিত ডায়েট সংক্রান্ত আলোচনার আয়োজন করা উচিত বলে জানাচ্ছেন অর্পিতা। তাঁর কথায়, ‘‘এখন সবই প্রায় ছোট পরিবার। সময়ের অভাবে ছেলে-মেয়েকে অনেকেই টিফিনে বাড়ির রান্না দিতে পারেন না। ফলে তাঁদের ভরসা কেনা খাবার। যার সবই প্রায় ফাস্ট ফুড। ছুটির দিনেও বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোটরা ঘুরতে বেরিয়ে ফাস্ট ফুডই খায়। সুষম ডায়েট সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণাই তৈরি হয় না। জিমের বদলে ডায়েট নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করা উচিত।’’
আপাতত জিমেই ভরসা রাখছেন শ্যামবাজার এ ভি স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা। এক অভিভাবক বললেন, ‘‘জিমে যাক, ছেলের খাবার নিয়ন্ত্রণ করব এ বার।’’ প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জনবাবু বললেন, ‘‘দ্রুত ডায়েট ক্যাম্প করা যায় কি না, দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy