Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডেঙ্গিতে মৃত্যু হল পুরসভার অফিসারের

পুরকর্মীদের অনেকেই একান্তে স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, সচেতনতার প্রচার চালিয়ে যাওয়াটাই যথেষ্ট নয়। কোমর বেঁধে কাজে না নামলে এত বড় শহরে ডেঙ্গির মোকাবিলা করা অসম্ভব।

অস্বাস্থ্যকর: শান্তনু মজুমদারের (উপরে) বাড়ি সংলগ্ন জমিতে হয়ে রয়েছে ঝোপজঙ্গল। শুক্রবার, রহড়ায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

অস্বাস্থ্যকর: শান্তনু মজুমদারের (উপরে) বাড়ি সংলগ্ন জমিতে হয়ে রয়েছে ঝোপজঙ্গল। শুক্রবার, রহড়ায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৭
Share: Save:

এ শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাওয়ার পরে গাফিলতির দায় নিয়ে যখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে, ঠিক তখনই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন খোদ কলকাতা পুরসভারই এক অফিসার। শুক্রবার ভোরে শান্তনু মজুমদার (৫৬) নামে ওই অফিসারের মৃত্যু হয়েছে। শান্তনুবাবুর বাড়ি কলকাতার বাইরে হলেও কর্মক্ষেত্র এ শহরেই। তাই কোন এলাকার এডিস ইজিপ্টাই তাঁকে কামড়েছিল, তা নিশ্চিত ভাবে বলা কঠিন। তবে তাঁর মৃত্যুর পরে পুরসভার কর্মী-অফিসারদের মধ্যে এ দিন ডেঙ্গি দমনই ছিল আলোচনার প্রধান বিষয়।

পুরকর্মীদের অনেকেই একান্তে স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, সচেতনতার প্রচার চালিয়ে যাওয়াটাই যথেষ্ট নয়। কোমর বেঁধে কাজে না নামলে এত বড় শহরে ডেঙ্গির মোকাবিলা করা অসম্ভব। এবং সেই কাজে যে যথেষ্ট গাফিলতি রয়ে গিয়েছে, তাতে কোনও সংশয় নেই। তাঁদের বক্তব্য, শহরের সর্বত্র জমা জল এবং জঞ্জাল নিয়মিত সাফ করতে হবে। এটা যেমন নাগরিকদের কর্তব্য, তেমনই জনপ্রতিনিধিদেরও দায়িত্ব। সেই কাজে গাফিলতি থাকলে ডেঙ্গিতে আরও প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে।

পুরসভা সূত্রের খবর, শান্তনুবাবু দু’নম্বর বরোর সমাজকল্যাণ দফতরের ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি খড়দহ এলাকার রহড়ায়। তাই ডেঙ্গির মশা তাঁকে রহড়া না কলকাতা, কোথায় কামড়েছে, তা বলা কঠিন। তবে শান্তনুবাবুর বাড়ির পাশেই আগাছয় ভরা ঝোপজঙ্গল রয়েছে। তাঁর বাবা অসিত মজুমদারও বর্তমানে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। শুক্রবার ভোরে শান্তনুবাবু মারা যান ওই হাসপাতালেই।

শান্তনুবাবুর অফিস ছিল হাতিবাগানে। তাঁর স্ত্রী বর্ণালী মজুমদার জানান, কালীপুজোর আগে পর্যন্ত শান্তনুবাবু নিয়মিত অফিস করেছেন। কালীপুজোর দিনই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরের দিন থেকে প্রবল জ্বর। সোমবার তাঁকে ব্যারাকপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে রাখতে চাননি। পরদিন ছেড়ে দেওয়া হয়।

পরে কলকাতার বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে শেষে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শান্তনুবাবুকে। একই দিনে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন শান্তনুবাবুর বাবা অসিতবাবুও। তাঁকেও ওই একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দু’জনের রক্তেই মেলে ডেঙ্গির জীবাণু। শান্তনুবাবুর অবস্থা বেশি খারাপ থাকায় প্রথমেই তাঁকে আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছিল। পরিজনেরা জানান, বুধবার তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বৃহস্পতিবার প্লেটলেট ২০ হাজারের নীচে নেমে যায়। সঙ্গে শুরু হয় অন্যান্য সমস্যাও। বিভিন্ন অঙ্গ বিকল হতে শুরু করে। শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

খবর ছড়িয়ে পড়ায় পুরসভায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে শান্তনুবাবুর অকালমৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সচেতন না হলে আরও বিপদ বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে পুর প্রশাসনকে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

অন্য দিকে, বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এ বার ডেঙ্গি নিয়ে প্রচার কম হয়েছে, ফলে প্রকোপ বেড়েছে। পুরসভার এক কর্মীর ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে। অথচ পুরসভা এবং কাউন্সিলরদের সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না।’’ ডেঙ্গি মোকাবিলা এবং ডেঙ্গিতে মৃতদের পরিবারগুলিকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিতে এ দিন কলকাতা পুরসভায় মেয়রের দফতরে দাবিপত্র দেন এসইউসি-র কলকাতা জেলা কমিটির পাঁচ জন প্রতিনিধি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Dengue Municipal Officer Khardaha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE