বিধাননগর পুর নিগমের ভিআইপি রোড সংলগ্ন ১০ নম্বর ওয়ার্ড। খোদ স্বাস্থ্য দফতরের মেয়র পারিষদের নিজের ওয়ার্ড। সেখানে পূর্ত দফতরের আবাসন। আর সেখানে গিয়েই দেখা গেল, একটি অংশে যত্রতত্র জমা জলে কিলবিল করছে মশার লার্ভা। সৌজন্যে আবাসনের ওই অংশে পুজোর জন্য স্থগিত থাকা একটি নির্মাণকাজ। বিষয়টি পুর-কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে অভিযানে সামিল হন পুর-স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, লার্ভাগুলির অধিকাংশই ডেঙ্গির জীবাণুবাহী এডিস ইজিপ্টাইয়ের।
জল জমে রয়েছে পড়ে থাকা বাতিল জলের ট্যাঙ্ক, টায়ার, পুরনো গাড়ির যন্ত্রাংশের মধ্যেও। তার মধ্যে বংশবিস্তার করছে মশা। পুরসভা জানিয়েছে, ওই সব জমা জলেও মিলেছে এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা। আতঙ্ক ছড়িয়েছে ওয়াটার রিজার্ভার সংলগ্ন এলাকাতেও। প্রায় ৮০০ বর্গফুটের ওই রিজার্ভারে জল জমে রয়েছে। লার্ভা মিলেছে তাতেও। এমনকী আবাসন চত্বরে ঘুরে বহু ঘরেও খোলা পাত্র, বালতিতে ধরে রাখা জলে হদিস মিলেছে লার্ভার।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, জুলাইয়ে এক বার পুরসভা জমা জল সাফাই ও নির্মাণস্থলের জল পরিষ্কার করে। এখানে-ওখানে পড়ে থাকা পাত্র বা অন্য সামগ্রীও সাফ করা হয়। পরে আর অভিযান হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। পুরকর্মীদের পাল্টা অভিযোগ, স্থানীয় মানুষ এ ব্যাপারে একেবারেই সচেতন নন। তা না হলে ওই এলাকায় কেনই বা এ ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে মশার প্রজননের অনুকূল ক্ষেত্র? পুরকর্মীদের দাবি, এই এলাকা থেকে যে পরিমাণ লার্ভা মিলেছে, তাতে শুধু আবাসন চত্বরেই নয়, আশেপাশের এলাকাতেও ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তে পারে।
বিধাননগর পুরসভার আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পেরেছেন, আবাসন এলাকায় সাফাই-সহ বিভিন্ন কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে পূর্ত দফতর। কিন্তু সেই কাজ এখনও শুরুই হয়নি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছিলেন এক ইঞ্জিনিয়ার। তবে তার কাছে এর কোনও সদুত্তর পাননি পুরকর্তারা।
শুধু এই একটি ওয়ার্ডই নয়। ছবিটা কমবেশি একই রকম বাগুইআটি থেকে রাজারহাট-নিউ টাউনের প্রায় ১৫টি ওয়ার্ডে। পুরসভা সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনেরও বেশি বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশেরই শরীরে ডেঙ্গির উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
এ ক্ষেত্রে অবশ্য সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বার করতে পারেননি পুর-কর্তৃপক্ষ। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় বলেন, ‘‘ওই সব ওয়ার্ডে জোরকদমে কাজ হচ্ছে। নিজে নজর রাখছি। ব্যাপক আকারে না হলেও এখনও জ্বরের সংক্রমণ ঘটছে। তার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
প্রণয়বাবু অবশ্য বলেন, ‘‘এখনও অনেকেই সচেতন নন। প্রতিদিনই তার প্রমাণ মিলছে। তাই ফের সচেতনতার প্রচারে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁর অভিযোগ, সরকারি আবাসনেই যদি এমন হাল হয়, তবে সাধারণের ক্ষেত্রে চেতনার অভাব অস্বাভাবিক নয়। প্রয়োজনে রাজ্য প্রশাসনকে লিখিত ভাবে বেশ কয়েকটি দফতরের এলাকাকে ঘিরে অভিযোগ জানানো হবে।
জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিধাননগর পুর-এলাকায় প্রায় ৪ হাজার বাসিন্দা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তার মধ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০। মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। পুরকর্তাদের কথায়, বিশেষজ্ঞ থেকে স্বাস্থ্য দফতরের পরামর্শমতো জোরকদমে কাজ হলেও জ্বরের সংক্রমণ সর্বত্র এখনও কমছে না। তার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy