Advertisement
E-Paper

দু’টি মৃত্যুতেও টনক নড়েনি, বিজ্ঞপ্তি নামেই

সম্প্রতি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়েছেন দমদম পুর কর্তৃপক্ষ। সেই বিজ্ঞপ্তিতে পরিত্যক্ত জমি ও বাড়ির চত্বর থেকে আবর্জনা অবিলম্বে পরিষ্কার করার জন্য নাগরিকদের সতর্ক করা হয়েছে।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৪৬
নির্বিকার: দমদমের ঈশ্বর গুপ্ত রোডে নির্মাণ প্রকল্পে জমে রয়েছে জল। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

নির্বিকার: দমদমের ঈশ্বর গুপ্ত রোডে নির্মাণ প্রকল্পে জমে রয়েছে জল। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

পুরসভা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার কার্যকারিতা কোথায়! জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যুর পরেও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পরিত্যক্ত জমিতে জমা জল ও জঞ্জালের বহর দেখে সেই প্রশ্নই করছেন দমদম পুর এলাকার বাসিন্দারা।

সম্প্রতি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়েছেন দমদম পুর কর্তৃপক্ষ। সেই বিজ্ঞপ্তিতে পরিত্যক্ত জমি ও বাড়ির চত্বর থেকে আবর্জনা অবিলম্বে পরিষ্কার করার জন্য নাগরিকদের সতর্ক করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্দেশ অমান্য করলে ডেঙ্গি সংক্রমণ ছড়ানোর দায়ে পুর আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্প্রতি, পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অনিমা মজুমদার (৬৩) এবং পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের স্কুলছাত্র অনীশ সরকারের (১০) জ্বরে মৃত্যু হয়েছে। দু’জনেরই ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা ছিল, ‘ডেঙ্গি এনএস-১ অ্যান্টিজেন পজিটিভ’। যার প্রেক্ষিতে এক দিকে যখন পুর কর্তৃপক্ষ বজ্র আঁটুনির আশ্বাস দিচ্ছেন, তখন অন্য দিকে কেন ফস্কা গেরো সেই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।

বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, পি কে গুহ রোডের ধারের জমি জঞ্জাল ফেলার জায়গায় পরিণত হয়েছে। মূল জমির মাঝের নিচু অংশে বুধবারের বৃষ্টির জল তখনও দৃশ্যমান। পাশাপাশি উপচানো সেপটিক ট্যাঙ্কের নোংরাও ভেসে উঠেছে জমিতে। ওই ওয়ার্ডের অন্তর্গত পি কে গুহ রোডেই মসজিদের কাছে একটি বাড়ি সদ্য ভাঙা হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা মিলল খোলা পাতকুয়োর। দমদম পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে ফ্লেক্স দিয়ে বলা হচ্ছে, ডাবের খোলা, চায়ের ভাঁড়, অব্যবহৃত কুয়ো, খানাখন্দ মশার বংশবৃদ্ধিতে আদর্শ। ঘটনাচক্রে, পরিত্যক্ত জমিতে সে সব পাত্রেরই সন্ধান মিলল এ দিন। সাত নম্বর ওয়ার্ডের নলতা বকুলতলা রোডে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের পাশের জমি ভরে রয়েছে আগাছা আর আবর্জনায়।

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঈশ্বর গুপ্ত রোডের একটি ভাঙা বাড়ির জমিতে পরিষ্কার জল দেখিয়ে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে, মশার বংশ বাড়াতেই জল জমিয়ে রাখা হয়েছে!’’ ইটলগাছা পোস্ট অফিসের গলির উল্টোদিকে বহুতল নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন আগে একটি বাড়ি ভাঙা হয়েছে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত সেই জমিতে ভাঙাচোরা নির্মাণের ফাঁকে ফাঁকে জল জমে ডেঙ্গি মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে।

ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত পুরসভার এক আধিকারিক জানান, এই চার ওয়ার্ড শুধু নয়, খুঁজলে পুরসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ ওয়ার্ডে এই ছবির দেখা মিলবে। সেই কারণেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। তার পরও কেন এই ছবি? পুরসভা সূত্রের খবর, গত ৩ অক্টোবরে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, অগস্টের তুলনায় লার্ভার সন্ধান এবং ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। সেই তালিকায় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডগুলিও রয়েছে বলে খবর। গত বছর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কালীধাম, কমলাপুর এলাকায় বহু মানুষ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পুরসভা সূত্রের খবর, এ বছরও ওই ওয়ার্ডে যথেষ্ট লার্ভা মিলেছে, বেশ কয়েক জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সত্যজিৎ পাল বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডের সব থেকে উদ্বেগের কারণ কমলাপুর ঝিল পাড়ের অপরিচ্ছন্নতা এবং জেসপ কারখানা। এর মধ্যেও চেষ্টা করছি।’’

পি কে গুহ রোডের পরিত্যক্ত জমির আবর্জনা ও জমা জল নিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান বরুণ নট্ট বলেন, ‘‘পুজোর পরে ওই জমিতে প্রোমোটার কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন। পরিত্যক্ত জমিগুলি সত্যিই সমস্যা তৈরি করেছে।’’ পুর প্রধান হরীন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘এ ধরনের কোনও জমি রয়েছে কি না তা দেখার জন্য পুরসভার বিশেষ দল আছে। পুরসভার নজরে এলে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

Death dengue Municipality Awareness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy