E-Paper

দম্পতির অস্বাভাবিক মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি কিশোরী মেয়ে

ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিধাননগরের নগরপাল গৌরব শর্মা জানান, ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট মিলেছে। এ ছাড়াও, দড়ি এবং ধারালো জিনিস উদ্ধার হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:০৮
An image of Death

—প্রতীকী চিত্র।

বহুতল থেকে উদ্ধার হল স্বামী-স্ত্রীর দেহ। সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে দম্পতির কিশোরী মেয়েকে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, স্ত্রী ও মেয়েকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই ব্যক্তি। বিধাননগর কমিশনারেট এলাকার নিউ টাউনের নারায়ণপুর থানার কাছের এই ঘটনার কথা জানাজানি হয় শনিবার দুপুর নাগাদ। এর পরেই চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা এলাকায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান বিধাননগরের নগরপাল।

ওই বহুতলের একতলায় স্ত্রী রূপা (৪০) এবং চোদ্দো বছরের মেয়ে রূপসাকে নিয়ে থাকতেন পেশায় ওষুধ ব্যবসায়ী সাগর মুখোপাধ্যায় (৫০)। পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে সাগরকে এক বার বেরোতে দেখা গিয়েছিল। পরে আর তাঁকে বাইরে দেখা যায়নি। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দুপুরে দরজা খুলে রক্তাক্ত অবস্থায় বেরিয়ে আসে ওই কিশোরী। তাকে ওই অবস্থায় দেখতে পেয়ে ছুটে যান প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেই সময়েই ঘরে ঢুকে সাগরকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়। তখন মেঝেয় পড়ে ছিলেন রক্তাক্ত রূপা। তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিধাননগরের নগরপাল গৌরব শর্মা জানান, ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট মিলেছে। এ ছাড়াও, দড়ি এবং ধারালো জিনিস উদ্ধার হয়েছে। সুইসাইড নোটটিতে আর্থিক বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে সব দিকে নজর রেখে ঘটনাটির তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, হাসপাতালে কিশোরীর চিকিৎসা চলছে। তার গলায় ক্ষত রয়েছে। সে সুস্থ হয়ে উঠলে ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।

তদন্তকারীদের অনুমান, স্ত্রী এবং মেয়েকে ধারালো কোনও জিনিস দিয়ে প্রথমে ক্ষতবিক্ষত করেন সাগর। তার পরেই আত্মঘাতী হয়েছেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রীর গলায় গভীর ক্ষত রয়েছে। দু’জনের ময়না তদন্তের রিপোর্ট এলে মৃত্যুর কারণ নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই ঘটনার পিছনে কোনও আর্থিক বিষয়ের সরাসরি যোগ রয়েছে বলেও অনুমান তদন্তকারীদের। তাঁর কোনও দেনা ছিল কি না বা ব্যবসার অবস্থা কেমন ছিল, সে সব বিষয়ে নিশ্চিত হতে সাগরের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়েছে। ঘরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ নথি ঘেঁটে মুখোপাধ্যায় পরিবারের আর্থিক অবস্থা নিয়ে নিশ্চিত হতে চাইছেন তদন্তকারীরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সাগর মুখোপাধ্যায় এলাকায় ডাম্পি নামে পরিচিত ছিলেন। পরিবারটির সঙ্গে পাড়ার সকলের মেলামেশা ছিল। ফলে এমন ঘটনা ঘটায় বিস্মিত তাঁরা। সাগরের এক প্রতিবেশী জানাচ্ছেন, গত জন্মাষ্টমীর দিন সাগরের স্ত্রী রূপা এলাকার অন্য মহিলাদের সঙ্গে পাড়ার একটি মন্দিরে রান্নাও করেছিলেন। ওঁরা সকলের সঙ্গেই মেলামেশা করতেন। পরিবারের সদস্যদের নিজেদের মধ্যে কোনও অশান্তি বা চেঁচামেচিও কখনও শোনা যায়নি বলেও দাবি প্রতিবেশীদের।

রাজারহাট নারায়ণপুরের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, সাগরের ওষুধের দোকানের ক্রেতা ছিলেন তিনিও। সামাজিক বিভিন্ন কাজেও যুক্ত থাকতেন সাগর। হাসপাতালে রূপসাকে দেখতে যাওয়ার কথা জানিয়ে তাপস বলেন, ‘‘মেয়েটিকে সুস্থ করে তোলাই সকলের প্রাথমিক লক্ষ্য। কেন এমন ঘটনা ঘটল তা পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত্যুর নেপথ্যে অবসাদ বা অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

unnatural death police investigation Rajarhat Newtown Couple Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy