Advertisement
E-Paper

‘মোদীর সভাতেই নিয়ম ভাঙা হলে মানবে কে?’

কিন্তু রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেড সমাবেশ আবার বুঝিয়ে দিল, এই সমস্ত কাজই হল ‘নিয়মমাফিক’।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২১ ০৬:৫৪
বিপজ্জনক: ব্রিগেডে মোদীকে দেখতে মাইক লাগানোর উঁচু বাঁশের কাঠামোর উপরেই উঠে দাঁড়িয়েছেন সমর্থকেরা। রবিবার।

বিপজ্জনক: ব্রিগেডে মোদীকে দেখতে মাইক লাগানোর উঁচু বাঁশের কাঠামোর উপরেই উঠে দাঁড়িয়েছেন সমর্থকেরা। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

‘খোলা জায়গায় মাইক-সহ যে কোনও শব্দযন্ত্র বাজালে বাধ্যতামূলক ভাবে সাউন্ড লিমিটর লাগাতে হবে।’— জাতীয় পরিবেশ আদালতের এই নির্দেশ সপ্তাহখানেক আগে রাজ্য পরিবেশ দফতরের তরফে ফের পাঠানো হয়েছিল রাজ্যের সব জেলাশাসক, পুলিশ কমিশনার, জেলার পুলিশ সুপার, মহকুমা শাসক-সহ সমস্ত কর্তৃপক্ষের কাছে। নির্দেশ-নথির সঙ্গে সাউন্ড লিমিটর প্রস্তুতকারী সংস্থা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড’-এর (ওয়েবেল) যোগাযোগ নম্বরও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। যাতে এ সংক্রান্ত কোনও জিজ্ঞাস্য থাকলে ওয়েবেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিতে পারেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেড সমাবেশ আবার বুঝিয়ে দিল, এই সমস্ত কাজই হল ‘নিয়মমাফিক’। বাস্তবে যার বিন্দুমাত্র প্রতিফলন নেই। কারণ, এ দিনের সভার মাধ্যমেও চিরাচরিত সেই ‘শব্দ-আস্ফালন’-ই শোনা গেল। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা নেই বলে অভিযোগ করছে, তা নিয়ে গলা ফাটাচ্ছে, সেখানে নিজেরাই আইন ভেঙে প্রচার-পর্ব চালাচ্ছে। এমনকি, যে জনসভার ‘প্রধান মুখ’ স্বয়ং মোদী! তাঁদের বক্তব্য, ‘‘শব্দবিধি মানব না, এই অনিয়মই নিয়ম রাজ্যে! ফলে মোদীর সভাতেই নিয়ম ভাঙা হলে মানবে কে?’’ এ ক্ষেত্রে তাঁরা পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘সমস্যা হল, রাজ্যের শাসক দল নিয়ম মানে না। তেমন ভাবেই কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন শাসক দলও নিয়মের ধারকাছ দিয়ে যায় না। এখন রাজ্যের শাসক দলকে কিছু বলা হয় না বলেই পলিটিক্যালি কারেক্ট থাকতে অন্য দলকেও কিছু বলা হয় না।’’

পরিবেশ দফতরের তরফে অবশ্য জানানো হচ্ছে, জাতীয় পরিবেশ আদালতের ওই নির্দেশ-নথি শুধুমাত্র রাজনৈতিক সভায় শব্দবিধি মানার জন্য সব পক্ষকে পাঠানো হয়নি। বরং সার্বিক ভাবে শব্দবিধি মানা সুনিশ্চিত করতেই তা পাঠানো হয়েছিল। অবশ্য দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘নির্দেশ-নথি পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে কি না, সেটা রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বলতে পারবে।’’ এ বিষয়ে জানতে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যা‌ন ও সদস্য-সচিবকে ফোন এবং মেসেজ করা হলেও তাঁদের তরফে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। যার পরিপ্রেক্ষিতে এক পরিবেশবিদ জানাচ্ছেন, ‘‘নিয়ন্ত্রক সংস্থাই যদি হাত গুটিয়ে বসে থাকে, তা হলে আইন মানা হচ্ছে না লঙ্ঘন হচ্ছে, সেটা দেখবে কে? পর্ষদ তো এটা তাদের কাজ নয়, এই দায়িত্ব পুলিশের— বলেই দায় এড়িয়ে যায় বরাবর।’’ ব্রিগেডের সভায় শব্দবিধি-লঙ্ঘন নিয়ে কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তাকে ফোন করা হলে প্রথমে তিনি বলেন, ‘‘কিছু ক্ষণ পরে ফোন করুন। সব তথ্য পেয়ে যাবেন।’’ কিন্তু পরে তাঁকে ফোন করা হলে প্রশ্ন শোনা মাত্রই তিনি ফোন কেটে দেন। পরে আর ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও।

আবার ওয়েবেল জানাচ্ছে, সাউন্ড লিমিটর সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। ওয়েবেলের এক কর্তার কথায়, ‘‘শুধু রবিবারের ব্রিগেড কেন, গত এক মাসে আমাদের কাছ থেকে কেউই সাউন্ড লিমিটর কেনেনি।’’ অথচ সংস্থার কর্তারা জানাচ্ছেন, সাউন্ড লিমিটর তৈরিই হয়েছে খোলা জায়গায় মাইক-সহ যে কোনও শব্দযন্ত্র থেকে বেরোনো আওয়াজ নির্ধারিত সীমার (৬৫ ডেসিবেল) মধ্যে রাখার জন্য। কিন্তু তা তৈরি করা হলেও এ রাজ্যে নেওয়ার লোক নেই!

পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-র সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজে সভায় উপস্থিত থেকে রাজ্যের আইনকানুন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আর তাঁর সভাতেই নিয়ম ভাঙা হচ্ছে। এই তো নমুনা আইনশৃঙ্খলা মানার।’’ পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, রাজনৈতিক প্রচারে শব্দবিধি মানা হচ্ছে না, সে সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করে গত জানুয়ারিতেই তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিব, পুলিশের ডিজি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সদস্য-সচিব এবং নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু বরাবরের মতো এ বারও কোনও লাভ হয়নি। সুভাষবাবুর বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সভাতেই যেখানে নিয়ম মানা হয় না, সেখানে আর কী-ই বা বলার থাকতে পারে?’’

BJP Narendra Modi Brigade Rally of Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy