Advertisement
E-Paper

থামেনি জনজীবন, স্তব্ধ শুধু ব্লাড ব্যাঙ্ক

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন ৩৪ বছরের ডেঙ্গি-আক্রান্ত রোগী। প্লেটলেট নামছে হুহু করে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব চার ইউনিট প্লেটলেট দিতে হবে।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৮

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন ৩৪ বছরের ডেঙ্গি-আক্রান্ত রোগী। প্লেটলেট নামছে হুহু করে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব চার ইউনিট প্লেটলেট দিতে হবে। শুক্রবার সকালেই রিক্যুইজিশন স্লিপ এবং রক্তের নমুনা হাতে ছুটতে ছুটতে মানিকতলায় রাজ্যের সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে সব চেয়ে বড় এবং পূর্বাঞ্চলের ‘মডেল ব্লাড ব্যাঙ্ক’ হিসাবে চিহ্নিত কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কে এসে পৌঁছন রোগীর আত্মীয়েরা।

এসে তাঁদের স্তম্ভিত এবং দিশাহারা হওয়ার পালা। কারণ, ব্লাড ব্যাঙ্কের মাইকে তখন ঘোষণা চলছে— শুক্রবার তাদের কোনও রক্তদান শিবির নেই, তাই প্লেটলেট পাওয়া যাবে না!

তবে সরকারি নির্দেশ, ডেঙ্গি রোগীদের মুখের উপরে প্রত্যাখ্যান করা হবে না, একটা বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হবে! ডেঙ্গি রোগীর বাড়ির লোককে কোনও ডোনার বা রক্তদাতা ধরে আনতে হবে। তাঁর শরীর থেকে এক ইউনিট রক্ত নিয়ে সেই রক্ত থেকে প্লেটলেট তৈরি করে রোগীর জন্য দেওয়া হবে। কিন্তু সেটাও চটজলদি হবে না। সকালে রক্ত দিলে গভীর রাতের আগে সেই প্লেটলেট মেলার আশা নেই! তত ক্ষণে রোগীর প্লেটলেট আরও কয়েক হাজার নেমে গেলেও কিছু করার নেই।

শুক্রবার রাজ্যে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটে জনজীবন স্তব্ধ হয়নি। কিন্তু মানিকতলায় রাজ্যের প্রধান সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লেটলেট দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যত বন্‌ধ-পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সারা দিন সেখানে এমনিতে কোনও প্লেটলেট তৈরি হয়নি। প্লেটলেট নিতে আসা ক্যানসার রোগীদের প্রত্যেককে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে শিশু রোগীও ছিল। কারণ, বিধানচন্দ্র রায় রায় শিশু হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক হিসেবে এই ব্যাঙ্ক কাজ করে।

এ দিন শুধুমাত্র গুরুতর অসুস্থ সাত জন ডেঙ্গি রোগীর আত্মীয়দের সাত জন রক্তদাতা জোগাড় করে আনতে বলা হয়েছিল। তাঁদের থেকে রক্ত নিয়ে সেই রক্ত থেকে সাত ইউনিট প্লেটলেট তৈরি করে দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রাত আটটার সময়েও সেই প্লেটলেট হাতে পাননি সাত জনের পরিবারের কেউই। তাঁদের জানানো হয়েছে, তা পেতে গভীর রাত হবে।

ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কেন এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে? অধিকর্তা কুমারেশ হালদারের উত্তর, ‘‘আসলে আমাদের দিক থেকে এবং রক্তদান শিবির যাঁরা আয়োজন করেন তাঁদের দিক থেকেও একটা ত্রুটি হয়ে গিয়েছে। ধর্মঘটে ঝামেলা হতে পারে ভেবে অধিকাংশ আয়োজক কোনও শিবির রাখেননি। এই রকম একটা পরিস্থিতি হবে অনুমান করে আমাদেরও ভাঁড়ারে কিছু প্লেটলেট রাখা উচিত ছিল বা অন্তত একটি শিবিরে যাওয়া উচিত ছিল।’’

ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, ২ সেপ্টেম্বর ব্যতিক্রম নয়। মাঝেমধ্যেই মানিকতলায় সারা দিন নানা অজুহাতে কোনও প্লেটলেট তৈরি হয় না বা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম হয়। যেমন গত জন্মাষ্টমীর দিন ২৫ অগস্ট ঘটেছিল। ছুটির দিন হওয়ায় সে দিন কর্মীর সংখ্যা খুব কম ছিল। ৩টি শিবির থেকে সে দিন ১৭৪ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হলেও লোকের অভাবে মাত্র ৮৫ ইউনিট প্লেটলেট তৈরি করা গিয়েছিল। সে দিন প্লেটলেটের আবেদন করেছিলেন ৮৯ জন। তাঁদের মধ্যে ৪৩ জনকে কোনও প্লেটলেট দেওয়া যায়নি। এঁদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন ডেঙ্গি ও অজানা জ্বরের রোগী ছিলেন। সামনেই পুজো ও ছুটির মরসুম। ডেঙ্গির প্রকোপও মোটামুটি অক্টোবর পর্যন্ত থাকে। ফলে সরকার ব্যবস্থা না নিলে সেই সময়ে এই প্লেটলেট-সঙ্কট আরও চরমে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য ভবন কর্তৃপক্ষ মানছেন, এই রকম সঙ্কট তৈরি হচ্ছে বলেই এক শ্রেণির দালালদের রমরমা বাড়ছে। তাঁরা এক-এক ইউনিট প্লেটলেট ৩-৪ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন রোগীর মরিয়া পরিজনদের কাছে। শুক্রবার এমনই এক দালাল পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। তার নাম মদন মণ্ডল। বাড়ি জয়নগরে। মূলত কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্ক ও নীলরতন মেডিক্যাল কলেজে তার ব্যবসা চলত বলে জানায় পুলিশ।

শুক্রবার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে আবার রক্তদান শিবির থাকলেও কোনও প্লেটলেট তৈরি হয়নি। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ‘‘অনেক দূরে শিবির ছিল। তাই ২২২ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হলেও ফিরে এসে ৬ ঘণ্টার মধ্যে প্লেটলেট করা হয়নি। ফলে এ দিন কেউ হাসপাতাল থেকে প্লেটলেট পাননি।’’

Blood bank Dengue patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy