Advertisement
E-Paper

‘আমি কাছে যেতেই ফেলে দিতে যাচ্ছিল বারান্দা থেকে’

ঘটনায় অভিযুক্ত বিশাল ও শিবমদের প্রতিবেশী শিবকুমার গুপ্তকে রাতেই গ্রেফতার করে বড়বাজার থানা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২০ ০৪:০১
(বাঁ দিকে) এন আর এস হাসপাতালে রজনী সাউ। (পাশে) উপর থেকে পড়ে পায়ে চোট পেয়েছে বিশাল সাউ। সোমবার। (ডান দিকে) শিবম সাউ। ছবি: সুমন বল্লভ

(বাঁ দিকে) এন আর এস হাসপাতালে রজনী সাউ। (পাশে) উপর থেকে পড়ে পায়ে চোট পেয়েছে বিশাল সাউ। সোমবার। (ডান দিকে) শিবম সাউ। ছবি: সুমন বল্লভ

হাসপাতালে ফ্যাকাসে মুখে আত্মীয়দের মাঝে বসেছিল শিশুটি। চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। রবিবার সন্ধ্যায় তার চোখের সামনেই দুই শিশুকে পাঁচতলার উপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়। তাকেও ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল পাশের ঘরের লোকটি। তাই সামগ্রিক ঘটনার রেশ কাটিয়ে উঠতে পারছিল না চার বছরের শিশু রজনীও।

সোমবার দুপুরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমন ভাবেই দেখতে পাওয়া গেল রজনী সাউকে। এক আত্মীয়ের হাত আঁকড়ে ধরে বসেছিল সে। ধীর গলায় সে বলে, ‘‘আমরা খেলছিলাম বারান্দায়। আমাকেও লোকটি ঘাড় নেড়ে ডাকল। আমি কাছে যেতেই আমাকে বারান্দা থেকে তুলে নীচে ফেলে দিতে যাচ্ছিল।’’

বড়বাজারের ১১৩ নম্বর নেতাজি সুভাষ রোডের সেই পাঁচতলা বাড়িরই বাসিন্দা রজনী। রবিবার সন্ধ্যায় যেটির পাঁচতলার বারান্দা থেকে নীচে ছুড়ে ফেলে দেওয়ায় হয় ছ’বছরের বিশাল সাউ ও দেড় বছরের শিবম সাউ নামে দুই শিশুকে। মৃত্যু হয় শিবমের। ঘটনায় অভিযুক্ত বিশাল ও শিবমদের প্রতিবেশী শিবকুমার গুপ্তকে রাতেই গ্রেফতার করে বড়বাজার থানা। এ দিন পুলিশ তাকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করলে বিচারক শিবকুমারকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আদালতে তার হয়ে কোনও আইনজীবী দাঁড়াননি। কী ভাবে এক জন মানুষ দু’টি বাচ্চাকে এ ভাবে ছুড়ে ফেলে দিতে পারে, তা নিয়ে এ দিনও রজনীদের প্রতিবেশীদের মধ্যে আলোচনা শোনা যায়।

আরও পড়ুন: বসবে মাস্ক, গ্লাভস ফেলার ডাস্টবিন

এ দিন দেড় বছরের শিবমের ময়না-তদন্ত হয় এনআরএসে। হাসপাতালে বসে শাড়ির আঁচলে মুখ ঢেকে কাঁদতে কাঁদতে শিবমের মা সবিতাদেবীকে শুধু একটি কথাই বলতে শোনা যায়, ‘‘আর কিছু চাই না। আমি শুধু বিচার চাই।’’ পাশে বসে স্ত্রীকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন স্বামী বিক্রম। তাঁর কথায়, ‘‘এখনও ভাবতে পারছি না ওই একরত্তি ছেলেটাকে কী ভাবে ছুড়ে উপর থেকে ফেলে দিল লোকটা! বাচ্চা তো দুষ্টুমি করবেই। তা বলে এমন করবে? লোকটির যেন কঠোরতম শাস্তি হয়।’’

অভিযোগ, শিবম ও বিশালকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ায় পরে রজনীকেও ছুড়ে ফেলে দিতে যায় অভিযুক্ত শিবকুমার। ঘটনাটি দেখতে পেয়ে শিবকুমারকে আটকান শিবমের মা সবিতাদেবী ও বিশালের বাবা বুধন সাউ। বুধনের কথায়, ‘‘ভাগ্যিস বিশাল উপর থেকে পড়ার সময়ে প্রথমে তারের উপরে পড়েছিল। তাই মাটিতে পড়ার সময়ে ওর কম লেগেছে। তাই বিশাল বেঁচে যায়।’’ তবে তার বাঁ পায়ের হাড়ে চিড় ধরে, মুখেও আঘাত লাগে।

শিবকুমারের ঘরের সামনে খেলা করায় সে বিরক্ত বোধ করত। এর আগেও সে বাচ্চাদের ছুড়ে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, শিবকুমার জেরায় জানিয়েছে বাচ্চারা তাকে উত্ত্যক্ত করায় সে রাগের মাথায় ওই কাজ করেছে। হার্ডওয়্যারের ছোট ব্যবসায়ী শিবকুমারের ব্যবসা লকডাউনে বন্ধ ছিল। তার ফলে সে কোনও মানসিক অবসাদে ভুগছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

বড়বাজারের ঘটনাটি ইমপালস কন্ট্রোল ডিজ়অর্ডার বলে ব্যাখ্যা মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের মানুষেরা ঝোঁকের বশবর্তী হয়ে তাৎক্ষণিক ভাবে এমন কাজ করে ফেলেন যার বাস্তবতা থাকে না। দেখতে হবে ওই ব্যক্তি ঝোঁকের মাথায় আগেও বড় ধরনের অপরাধ করেছেন কি না। তা হলে ধরতে হবে উনি অসুস্থ।’’

আরও পড়ুন: সল্টলেক থেকে টালা, পথে বস্তিবাসীরা

Child Death NRS Medical Hospital Burrabazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy