এত দিন ঘিঞ্জি এলাকায় দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে যিনি দু’চাকার মালিক, তিনিই ছিলেন রাজা। অ্যাপ-নির্ভর পরিবহণের যুগে এ বার যে কেউ ‘বুক’ করে ফেলতে পারবেন মোটরবাইক। পাঁচ মিনিেট সেটি সামনে এসে দাঁড়াবে। চালক এগিয়ে দেবেন হেলমেট। তা মাথায় চাপিয়ে উঠে পড়লেই হল। আপনাকে ওই বাইক দ্রুত পৌঁছে দেবে গন্তব্যে।
এমন পরিষেবা ইতিমধ্যেই জনপ্রিয় তাইল্যান্ড-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নানা দেশে। এ দেশেও দু’-একটি সমুদ্র উপকূলবর্তী শহরে অল্পবিস্তর ভাড়ায় বাইক বেশ জনপ্রিয়। এ বার কলকাতায় চালু হচ্ছে বাইক-ট্যাক্সি। যা ইতিমধ্যেই চলছে মুম্বই, বেঙ্গালুরু, গুড়গাঁওয়ে।
পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, এই সংক্রান্ত খসড়া-বিজ্ঞপ্তি ৩০ জুন জারি করে জনতার পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল। সেই সময়সীমা শেষ। সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি সপ্তাহেই বাইক-ট্যাক্সিকে বৈধতা দিয়ে চূড়ান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করবে সরকার। তবে আপাতত এর ‘পাইলট’ প্রকল্প হবে নিউ টাউন এলাকার অ্যাকশন এরিয়া-ওয়ান ও টু-এ।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে সুরক্ষা নিয়ে। ওলা, উবেরের মতো অ্যাপ-ক্যাবে যে ভাবে মহিলা নিগ্রহ ঘটেছে, তার নিরিখে এই পরিষেবার নিরাপত্তা কোথায়? নিউ টাউনের নিত্যযাত্রী সুতপা বসুর যেমন বক্তব্য, ‘‘বিষয়টা ভালই। কিন্তু নিউ টাউনে প্রথম দিকে বাইক-ট্যাক্সি কোনও মহিলাই নেবেন না। বাইকচালকদের কারা বাছছেন, কারাই বা তাঁদের উপরে নজরদারি করছেন— তাতে নিরাপত্তার প্রশ্নটি জড়িয়ে রয়েছে।’’ অ্যাকশন এরিয়া-ওয়ানের বাসিন্দা অর্পণ চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘নিউ টাউনের গলিতে বা আশপাশ থেকে আসতে এখন শুধুই টোটো ভরসা। বাইক-ট্যাক্সি এলে বেশ ভাল। কিন্তু নিরাপত্তার দিকটি তো নিশ্চিত করতেই হবে।’’
পরিবহণ কর্তাদের অবশ্য দাবি, বাইক-ট্যাক্সিকে মান্যতা দেওয়ায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব নিরাপত্তার দিকটিরই। বাইকচালক নিয়োগের আগে খতিয়ে দেখতে হবে সরকার নির্দিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাকে দিয়ে। মহিলা চালক তৈরির দিকে উৎসাহ দিতে বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। পরিষেবার অ্যাপেই থাকতে হবে ‘প্যানিক বাটন’। বিপন্ন যাত্রী ওই বোতাম টিপলে সঙ্গে সঙ্গে সংস্থার, পুলিশের ও তাঁর ঘনিষ্ঠ দু’জনের নম্বরে খবর পৌঁছে যাবে। বিজ্ঞপ্তিতে এ-ও বলা হয়েছে, বাইকচালক যেন ভদ্র হন। যা নিয়ে কর্তাদেরই একাংশের বক্তব্য, ‘‘এ সব মানা হচ্ছে কি না, তা পরখ করে দেখার পরিকাঠামো কোথায়!’’
মুম্বই, গুড়গাঁও, বেঙ্গালুরুর মতো শহরে ওলা, উবের-সহ কয়েকটি সংস্থা বাইক-ট্যাক্সি চালু করলেও কয়েক দিনের মধ্যেই বেঙ্গালুরুতে সেই পরিষেবা বেআইনি ঘোষণা করেছে কর্নাটক সরকার। এখন দেখার কলকাতায় কতটা জনপ্রিয় হয় বাইক-ট্যাক্সি! তার আগে পরিবহণ দফতর সূত্রে সাবধান করা হচ্ছে— নিউ টাউন ছাড়া কোথাওই বাইক-ট্যাক্সিকে মান্যতা দেওয়া হয়নি। বাকি সব জায়গায় বাইক-ট্যাক্সি বেআইনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy