ধৃত জন উমে।—নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার ফরাসি দূতাবাসের পুরনো আমলের মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি বিক্রি হবে। গাড়ি কেনাবেচার একটি অ্যাপে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহ প্রকাশ করেন মুম্বইয়ের বাসিন্দা অমল শিবাজী তাহেল। আগাম টাকাও দিয়ে বসলেন বেসরকারি ব্যাঙ্কের বুন্দেলখণ্ডের একটি শাখায়। অমল এ বার নিজের চোখে দেখতে চাইলেন গাড়িটি। সেটি লন্ডন থেকে চেন্নাই আনার জন্য ফের যখন অমলের কাছে টাকা চাওয়া হল, তখনই সন্দেহ হয় তাঁর। সরাসরি দূতাবাসে যোগাযোগ করে তিনি জানতে পারলেন, এমন কোনও গাড়িই নেই সেখানে! ঘটনার পরে ফের প্রশ্ন উঠছে অ্যাপ নির্ভর কেনাকাটা কতটা নিরাপদ তা নিয়েও।
সম্প্রতি ফরাসি দূতাবাস থেকে অভিযোগ পেয়ে এমনই এক প্রতারণা চক্রের হদিস পেয়েছে কলকাতা পুলিশ। চক্রের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। তার নাম চিডিবেরা জন উমে। সে নাইজিরিয়ার বাসিন্দা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নবি মুম্বইয়ের একটি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন কলকাতা পুলিশের অফিসারেরা। পরের দিন সেখানকার পানভেল আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে ৫ দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় পাঠানোর নির্দেশ দেন। সোমবার চিডিবেরাকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১২ মার্চ পর্যন্ত তাকে পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
সরকারি কৌঁসুলি অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, ‘কার ট্রেড’ নামে একটি অ্যাপে গত জানুয়ারি মাসে তিনটি ফোন নম্বর দিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। একটি নম্বরে ফোন করেন মুম্বইবাসী অমল। প্রথমে তাঁকে বলা হয়, ‘ভিন্টেজ’ গাড়িটির দাম ২৫ লক্ষ টাকা। দরাদরি করে গাড়ির দাম ঠিক হয় ২০ লক্ষ টাকা।
ওই ব্যক্তিকে প্রতারকেরা জানায়, বেসরকারি ব্যাঙ্কের বুন্দেলখণ্ড শাখায় দেড় লক্ষ টাকা আগাম জমা রাখতে হবে। সেই টাকা জমা দিয়ে অমল নিজের চোখে গাড়িটি দেখতে চান। এ বার তাঁকে প্রতারকেরা জানায়, গাড়িটি লন্ডনে রয়েছে। সেখান থেকে গাড়িটি চেন্নাইতে আনতে পরিবহণ বাবদ খরচ পড়বে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। সেই টাকাও বুন্দেলখণ্ডের ওই শাখায় জমা দিতে হবে।
এ কথা জেনে সন্দেহ হয় ওই মুম্বইবাসীর। তিনি ইন্টারনেট ঘেঁটে কলকাতার ফরাসি দূতাবাসের নম্বর জোগাড় করেন। সেখানে ফোন করে জানতে চান, আদৌ দূতাবাসের মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িটি বিক্রি করা হবে কি না। অমলের ফোন পেয়ে অবাক হয়ে যান দূতাবাসের কর্মীরা। তাঁরা বিষয়টি ফরাসি কনসুলেট জেনারেলকে জানান।
পুলিশ সূত্রের খবর, কনসুলেট জেনারেলের কার্যালয় থেকে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। সেই অভিযোগ পেয়ে সাইবার থানা জানুয়ারি মাসে তদন্ত শুরু করে।
কী ভাবে ধরা পড়ল ওই নাইজিরীয়? পুলিশ জানায়, ‘কার ট্রেড’ অ্যাপে দেওয়া তিনটি নম্বরের কল ডিটেলস জোগাড় করে এবং বুন্দেলখণ্ডের যে শাখায় দেড় লক্ষ টাকা জমা দেওয়া হয়েছিল, তার অ্যাকাউন্ট নম্বরের বিস্তারিত জেনে সন্ধান মেলে চিডিবেরা-র।
প্রাথমিক জেরায় ওই নাইজিরীয় পুলিশকে জানিয়েছে, ২০১৭ সালে সে এ দেশে আসে। কিন্তু সে সঠিক কথা বলেছ কি না, বা প্রতারণা চক্রে আর কারা রয়েছে এবং এই কায়দায় আর কাউকে ঠকিয়ে টাকা হাতানো হয়েছে কি না, তা জানার জন্য চিডিবেরাকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে আরও জেরা করতে চান তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy